পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭88 রবীন্দ্র-রচনাবলী না? আচ্ছ, তবে দাও মুড়িই দাও। [ আহার ওহে চন্দ্র, কী বলব, ক্ষুধার চোটে এই বাসি মুড়ি যেন স্বধা বলে বোধ হচ্ছে। অনেক নিমন্ত্রণ খেয়েছি, কিন্তু এমন সুখ পাই নি। চন্দ্র, তুমিই সুধাকর বটে, কিন্তু অাজকে কলঙ্কের ভাগটাই কিছু বেশি দেখা গেল। ডাবও একটা এনেছ দেখছি, এর জন্তেও স্বতন্ত্র কিছু দিতে হবে নাকি ? হবে না ? শরীরে দয়ামায়া কিছু আছে বোধ হচ্ছে, এখন যদি একটি গাড়ি ডেকে দাও তো আন্তে আস্তে বিদায় হই। গাড়ি এখানে পাওয়া যায় না ? তবে তো বড়ো বিপদে ফেললে। আমি এখন ন খেয়ে কাহিল শরীরে দেড় ক্রোশ রাস্ত হাটতে পারব না ; যখন সম্মুখে আহারের আশা ছিল তখন পেরেছিলুম।— কী করব! বেরিয়ে পড়া যাক । কী সর্বনাশ ! এই সময়ে আবার হরিবাবুর ওখানে যেতে হবে ? চন্দ্র, তুমি আজ আমার বিস্তর উপকার করেছ, এখন আর কিছু করতে হবে না, এই ভদ্রলোকের ছেলেটিকে বুঝিয়ে দাও আমি উদয়বাবু নই, আমি আহিরিটোলার অক্ষয়বাবু। ও তোমার কথা বিশ্বাস করবে না ? সেজন্তে ওকে আমি বেশি দোষ দিতে পারি নে, বোধ হয় তোমাকে ও অনেক দিন থেকে চেনে। যা হোক, আর ঝগড়া করবার সামর্থ্য নেই, আস্তে আস্তে হরিবাবুর ওখানেই যাওয়া যাক। বাপু, যে রকম অবস্থা দেখছ পথে যদি একটা কিছু ঘটে দাহ করবার ব্যয়টা তোমার স্কন্ধে পড়বে— আগে থাকতে বলে রাখলুম। চন্দ্র, তুমি আবার হাত বাড়াও কেন হে! তোমাদের কল্যাণে যেরকম সস্তায় আজ নেমস্তয় খেয়ে গেলুম বহুকাল আমার আর খিদে থাকবে না। আরো কী চাও? ও! বকশিশ! সেটা চুকিয়ে দেওয়াই ভালো। যখন এতই করলেম তখন সর্বশেষে ওই খুতটুকু আর রাখব না। কিন্তু আমার কাছে আর একটিমাত্র টাকা বাকি আছে। তার মধ্যে বারো আনা আমি গাড়িভাড়ার জন্যে রেখে দিতে চাই। তোমার কাছে খুচরো যদি কিছু থাকে তা হলে ভাঙিয়ে— খুচরো নেই ? ( পকেট উন্টাইয়া শেষ টাকাটি দিয়া ) তবে এই নাও বাপু । তোমাদের বাড়ি থেকে বেরোলুম একেবারে গজভূক্তকপিখবং । কিন্তু এই-যে টাকাগুলি দিলুম, উদয়ের কাছ থেকে ফিরে আদায় করবার কী উপায় করা যায় ! একটা দামি জিনিস যদি কিছু পাওয়া যায় তো আটক করে রাখি। দামি জিনিসের মধ্যে তো দেখছি ওই চন্দ্রকান্ত। কিন্তু যেরকম দেখলুম ওঁকে সংগ্ৰহ করা আমার কর্ম নয়, আমাকে উনি ট্যাকে গুজে নিতে পারেন ।