পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8b-4 ইহার কলধ্বনির মধ্যে কত বিচিত্র ছন্দ ধ্বনিত এবং ইহার তরঙ্গলীলায় কতকালের পুলকোচ্ছ্বসিত ভাবাবেগ উদবেলিত হইয়া উঠিতেছে । i প্রদোষে সেই যমুনাতীরে মহেন্দ্ৰ আসিয়া যখন বসিল, তখন ঘনীভূত প্রেমের আবেশ তাহার দৃষ্টিতে, তাহার নিশ্বাসে, তাহার শিরায়, তাহার অস্থিগুলির মধ্যে প্রগাঢ় মোহরসপ্রবাহ সঞ্চার করিয়া দিল । আকাশে সূর্যাস্তকিরণের স্বর্ণবীণা বেদনার মূছনায় অলোকশ্রুত সংগীতে ঝংকৃত হইয়া উঠিল । বিস্তীর্ণ নির্জন বালুতটে বিচিত্র বর্ণচ্ছটায় দিন ধীরে ধীরে অবসান হইয়া গেল । মহেন্দ্র চক্ষু অর্ধেক মূদ্রিত করিয়া কাব্যলোক হইতে গোখুর-ধূলিজালের মধ্যে বৃন্দাবনের ধেস্থদের গোষ্ঠে প্রত্যাবর্তনের হাম্বারব শুনিতে পাইল । বর্ষার মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন হইয়া আসিল । অপরিচিত স্থানের অন্ধকার কেবল কৃষ্ণবর্ণের আবরণ মাত্র নহে, তাহ বিচিত্র রহস্তে পরিপূর্ণ। তাহার মধ্য দিয়া যেটুকু আভা যেটুকু আকৃতি দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা অজ্ঞাত অমুচ্চারিত ভাষায় কথা কহে । পরপারবর্তী বালুকার অফুট পাণ্ডুরতা, নিস্তরঙ্গ জলের মসীকৃষ্ণ কালিমা, বাগানে ঘনপল্লব বিপুল নিম্ববৃক্ষের পুঞ্জীভূত স্তব্ধতা, তরুহীন মান ধূসর তটের বঙ্কিম রেখা, সমস্ত সেই আষাঢ়-সন্ধ্যার অন্ধকারে বিবিধ অনির্দিষ্ট অপরিস্ফুট আকারে মিলিত হইয়া মহেন্দ্রকে চারিদিকে বেষ্টন করিয়া ধরিল । পদাবলীর বর্ষাভিসার মহেন্দ্রের মনে পড়িল । অভিসারিক বাহির হইয়াছে । যমুনার ওষ্ট তট প্রাস্তে সে একাকিনী আসিয়া দাড়াইয়াছে । পার হইবে কেমন করিয়া । “ওগো, পার করো গো, পার করো”— মহেঞ্জের বুকের মধ্যে এই ডাক আসিয়া পৌছিতেছে—“ওগো, পার করে ।” নদীর পরপারে অন্ধকারে সেই অভিসারিণী বহুদূরে— তবু মহেন্দ্র তাহাকে স্পষ্ট দেখিতে পাইল । তাহার কাল নাই, তাহার বয়স নাই, সে চিরন্তন গোপবালা— কিন্তু তবু মহেন্দ্র তাহাকে চিনিল— সে এই বিনোদিনী । সমস্ত বিরহ, সমস্ত বেদনা, সমস্ত যৌবনভার লইয়া তখনকার কাল হইতে সে অভিসারে যাত্রা করিয়া, কত গান কত ছন্দের মধ্য দিয়া এখনকার কালের তীরে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে— আজিকার এই জনহীন যমুনাতটের উপরকার আকাশে তাহারই কণ্ঠস্বর শুনা যাইতেছে —“ওগো, পার করো গো”— খেয়া-নৌকার জন্য সে এই অন্ধকারে আর কতকাল এমন একলা দাড়াইয়া থাকিবে—“ওগো, পার করে ।” དག་མི་ ༣ - মেঘের এক প্রাস্ত অপসারিত হইয়া কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়ার চাদ দেখা দিল । জ্যোৎস্নার মায়ামস্ত্রে সেই নদী ও নদীতীর, সেই আকাশ ও আকাশের সীমান্ত, چوپ مس 2\