পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় ৬১৭ হোঁসের মহতী সভা ‘অসংখ্য বালক বলিদানরূপ মহাপুণ্যবলে কিরূপ চরম সদগতির অধিকারী হইয়াছে, সে-সম্বন্ধে বঙ্কিমবাবুর মত আমরা অপ্রকাশ রাখিলাম। কারণ, পাঠকগণ সকলেই অবগত আছেন, বঙ্কিমবাবুর ক্ষীণ স্বর যদি-ব৷ কোনে। কর্ণ ভেদ করিতে না পারে তাহার তীক্ষু বাক্য উক্ত কৰ্ণ ছেদ করিতে সম্পূর্ণ সক্ষম। গুরুদাসবাৰু লিথিয়াছেন : আপনার শিক্ষার হেরফের নামক প্রবন্ধটি মনোযোগের সহিত পাঠ করিয়াছি, এবং যদিও তাহার আনুষঙ্গিক দুই-একটি কথা (যথা, য়ুরোপীয় সভ্যতার প্রতি অনাস্থার কারণ) আমার মতের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে না, তাহার প্রধান প্রধান কথাগুলি আমারও একান্ত মনের কথা, এবং সময়ে সময়ে তাহা ব্যক্তও করিয়াছি । আমার কথানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রদ্ধাস্পদ কয়েকজন সভা বাংলাভাষা শিক্ষার প্রতি উৎসাহ প্রদানার্থে একটি প্রস্তাব উপস্থিত করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাহ গৃহীত হয় নাই ( Cal. University Minutes for 1891-92, pp. 56.58 )... কী উপায়ে যে এই উপকার সাধন হইতে পারে তাহ বলা বড়ো সহজ নহে। ভাবিয়া চিন্তিয়া যতটুকু বুঝিয়াছি তাহাতে বোধ হয় দুই দিকে চেষ্টা করা আবণ্ঠক । প্রথমত, বঙ্গভাষায় এমন-সকল সাহিত্যের ও বিজ্ঞান দর্শনাদির গ্রন্থ যথেষ্ট পরিমাণে রচিত হওঁয়া আবিষ্ঠক যাহতে মনের আশা, জ্ঞানের আকাঙক্ষ মিটে । দ্বিতীয়ত, সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্ত শিক্ষাবিভাগের কর্তৃপক্ষ ও রাজপুরুষগণের নিকট হইতে বাংলাভাষ শিক্ষার যতদূর উৎসাহ পাওয়া যাইতে পারে তাহ পাইবার চেষ্টা করা উচিত। অনেক স্থলে সভাসমিতির কার্য ও বক্তৃতা ইংরেজিতে হওয়া আবণ্ঠক বটে, কিন্তু এমনও অনেক স্থল আছে যেখানে তাহ বঙ্গভাষায় হইতে পারে ও হইলে অধিক শোভা পায় ; এবং সেই-সকল স্থলেই স্বদেশীয় ভাষায় মনের ভাব ব্যক্ত করার পদ্ধতি চলিলেও অনেকটা উপকার হইতে পারে । আনন্দমোহনবাৰু লিথিয়াছেন : পৌষ মাসের সাধনায় প্রকাশিত ‘শিক্ষার হেরফের নামক প্রবন্ধটি অত্যন্ত আহলাদের সহিত পড়িয়াছি। আপনি এ সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন, অনেক পূর্ব হইতে আমারও সেই মত ; সুতরাং সেই মত এমন অতি সুন্দরভাবে এবং দক্ষতার সহিত সমর্থিত ও প্রচারিত হইতে দেখিয়া আনন্দিত হইব ইহাও স্বাভাবিকই। প্রবন্ধটি যেমন গুরুতর বিষয়সম্বন্ধীয়, ভাবগুণে এবং ভাষালালিতে আবার তেমনি মধুর ও উপাদেয় হইয়াছে । এখন আলোচ্য, প্রদর্শিত আনিষ্ট্রের প্রতিকারের উপায় কী । বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ভাষা এবং নিয়মাদি সম্বন্ধে কতক কতক পরিবর্তন করিলে উপকার হইতে পারে কিন্তু এই বিষয়ের আমি যখনই অবতারণা করিয়াছি তখনই আমাদের স্বদেশীয়দের নিকট হইতেই আপত্তি উত্থাপিত হইয়াছে। এতৎ সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে পাবলিক ওপিনিয়ান অনেকটা পরিবর্তন হওয়া আবণ্ঠক । আমি সময়ে সময়ে এ সম্বন্ধে প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে আনিব মনে করিয়াছি, কিন্তু যে পর্যন্ত এই পরিবর্তন সাধিত না হয় কিছুই করা যাইতে পরিবে না বলিয়া নিরস্ত হইয়াছি। আশা করি, এই পরিবর্তনসংসাধন পক্ষে আপনার স্বনার প্রবন্ধটি বিশেষ সাহায্য করবে এবং এই উদ্দেষ্ঠে প্রবন্ধের বহুলরাপে প্রচার প্রার্থনীয়। - উক্ত তিন পত্র হইতে এইরূপ অনুমান হয় যে, সিণ্ডিকেটের সভ্যগণ বাঙালির শিক্ষায় বাংলার কোনো উপযোগিতা স্বীকার করেন না, এবং আমাদের স্বদেশীয়দের নিকট হইতেই প্রধানত আপত্তি উত্থাপিত হইয়াছে। অবশ্য, আমাদের স্বদেশীয়ের যে এ সম্বন্ধে আপত্তি করিবেন তাহাতে আশ্চর্য কিছুই নাই। যদি না করিতেন তবে আমাদের দেশের এমন দুর্দশা হইবে কেন। কিন্তু কিছু আশ্চর্যও আছে। আমরা কখনও কিছুতে আপত্তি করি নাই বলিয়াই অামাদের এত দুৰ্গতি ; দেশের উপর যখন যে-কোনো অমঙ্গল স্রোত আসিয়া