পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

) . পারস্তে 8brあ জায়গা হয়েছে। বাংলাদেশে রেলপথের প্রধান জংশন যেমন আসানসোল, এখানে নানা পথের মোটরের সংগমতীর্থ তেমনি কাজবিন । কাজবিন সাসানীয় কালের শহর, দ্বিতীয় শাপুর -কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় সাফাবি রাজা তামাস্প এই শহরে তার রাজধানী স্থাপন করেন। দিল্লির পলাতক মোগল বাদশা হুমায়ুন দশবৎসরকাল এখানে তারই আশ্রয়ে ছিলেন। সাফাবি বংশের বিখ্যাত শা আব্বাসের সঙ্গে অ্যান্টনি ও রবার্ট, শালি -নামক দুই ইংরেজ ভ্রাতার এইখানেই দেখা হয়। জনশ্রুতি এই যে, এরাই কামান প্রভৃতি অস্ত্রসহযোগে আধুনিককালীন যুদ্ধবিদ্যায় বাদশাহের সৈন্যদের শিক্ষিত করেন। যাই হোক, বর্তমানে এই ছোটো শহরটিতে সাবেক কালের রাজধানীর মর্যাদা কিছুই চোখে পড়ে না । - ভোরবেল ছাড়লুম হামাদানের অভিমুখে । চড়াইপথে চলল আমাদের গাড়ি। দুই ধারে ভূমি স্থজলা স্বফল, মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো গ্রাম, আঁকাবাক নদী, আঙুরের খেত, আফিমের পুষ্পোচ্ছ্বাস। বেলা দুপুরের সময় হামাদানে পৌছিয়ে একটি মনোহর বাগানবাড়ির মধ্যে আশ্রয় পাওয়া গেল— পপলার-তরুসংঘের ফাকের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে বরফের-আঁচড়-কাটা পাহাড় । তেহেরানে গরম পড়তে আরম্ভ করেছিল, এখানে ঠাণ্ড । সমুদ্রের উপরিতল থেকে এ শহর ছ-হাজার ফুট উচু। এলভেন্দ পাহাড়ের পাদদেশে এর স্থান। একদা আকেমেনীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এইখানে। সেই রাজধানীর প্রাচীন নাম ইতিহাসবিখ্যাত একবাতানা, আজ তার ধ্বংসাবশেষ প্রায় কিছু বাকি নেই। আহার ও বিশ্রামের পর বিকেলবেলা শহর দেখতে বেরলুম। প্রথমে আমাদের নিয়ে গেল ঘনবনের মধ্য দিয়ে গলিপথ বেয়ে একটি পুরোনো বড়ো ইমারতের সামনে । বললে, এর উপরের তলা থেকে চারি দিকের দৃপ্ত অবারিত দেখতে পাওয়া যায়। আমার সঙ্গীরা দেখতে গেলেন, কিন্তু আমার সাহস হল না। গাড়িতে বসে দেখতে লাগলুম একদল লোক এসেছে বনের ধারে চড়িভাতি করতে। মেয়েরাও তার মধ্যে আছে ; তার কালো চাদরে মোড়া ; কিন্তু দেখছি বাইরে বেরতে রাস্তায় ঘাটে বেড়াতে এদের সংকোচ নেই। আজ মহরমের ছুটি, সবাই ছুটি উপভোগ করতে বেরিয়েছে। অল্প কয়েক বছর আগে মহরমের ছুটি রক্তাক্ত হয়ে উঠত, আত্মপীড়নের তীব্রতায় মারা যেত কত । লোক। বর্তমান রাজার আমলে ধীরে ধীরে তার তীব্রত কমে আসছে।