পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8& —ছেলেরা পরমহলাদে আশুকে ঘিরিয়া “গিন্নি গিন্নি’ করিয়া চীৎকার করিতে লাগিল । সেই ছুটির দিনের ছোটোবোনের সহিত খেলা জীবনের একটি সর্বপ্রধান লজ্জাজনক ভ্রম বলিয়া আশুর কাছে বোধ হইতে লাগিল, পৃথিবীর লোক কোনোকালেও যে সেদিনের কথা ভুলিয়া যাইবে এ তাহার মনে বিশ্বাস হইল না। २२लेv ? রামকানাইয়ের নিবুদ্ধিত যাহারা বলে গুরুচরণের মৃত্যুকালে র্তাহার দ্বিতীয় পক্ষের সংসারটি অস্তঃপুরে বসিয়া তাস খেলিতেছিলেন, তাহারা বিশ্বনিন্দুক, তাহারা তিলকে তাল করিয়া তোলে। আসলে গৃহিণী তখন এক পায়ের উপর বসিয়া দ্বিতীয় পায়ের হাটু চিবুক পর্যন্ত উখিত করিয়া কাচা তেঁতুল, কাচ লঙ্কা এবং চিংড়িমাছের ঝালচচ্চড়ি দিয়া অত্যন্ত মনোযোগের সহিত পাস্তাভাত খাইতেছিলেন । বাহির হইতে যখন ডাক পড়িল, তখন স্তুপাকৃতি চর্বিত ডাটা এবং নিঃশেষিত অন্নপাত্রটি ফেলিয়া গম্ভীরমুখে কহিলেন, “দুটো পাস্তাভাত-যে মুখে দেব, তারো সময় পাওয়া যায় না।” এদিকে ডাক্তার যখন জবাব দিয়া গেল তখন গুরুচরণের ভাই রামকানাই রোগীর পাশ্বে বসিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন, "দাদা, যদি তোমার উইল করিবার ইচ্ছা থাকে তো বলে।” গুরুচরণ ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “আমি বলি, তুমি লিখিয়া লও।” রামকানাই কাগজকলম লইয়া প্রস্তুত হইলেন। গুরুচরণ বলিয়া গেলেন, “আমার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত বিষয়সম্পত্তি আমার ধর্মপত্নী শ্ৰীমতী বরদাসুন্দরীকে দান করিলাম।” রামকানাই লিখিলেন— কিন্তু লিখিতে র্তাহার কলম সরিতেছিল না। র্তাহার বড়ো আশা ছিল, তাহার একমাত্র পুত্র নবদ্বীপ অপুত্রক জ্যাঠামহাশয়ের সমস্ত বিষয়সম্পত্তির অধিকারী হইবে। যদিও দুই ভাইয়ে পৃথগন্ন ছিলেন, তথাপি এই আশায় নবদ্বীপের মা নবদ্বীপকে কিছুতেই চাকরি করিতে দেন নাই— এবং সকাল-সকাল বিবাহ দিয়াছিলেন, এবং শক্রর মুখে ভস্ম নিক্ষেপ করিয়া বিবাহ নিস্ফল হয় নাই। কিন্তু তথাপি রামকানাই লিখিলেন এবং সই করিবার জন্য কলমটা দাদার হাতে দিলেন। গুরুচরণ নিজীব হস্তে যাহা সই করিলেন, তাহা কতকগুলা কম্পিত বক্ররেখা কি তাহার নাম, বুঝা দুঃসাধ্য। পান্তাভাত খাইয়া যখন স্ত্রী আসিলেন তখন গুরুচরণের বাক্রোধ হইয়াছে দেখিয়া