পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প ●8。 কেউ আসে নি । শেষকালে বসতে হল । যমদূতগুলো মোটের উপরে হাদা। একটু নড়তে গেলেই ধুপধপি ক’রে শব্দ করে, আর তাদের শেলশূল-ছুরিছোরাগুলো ঝনঝনিয়ে ওঠে। সেদিন কিন্তু একেবারে নিঃশব্দ — সন্ধ্যা হয়েছে, পথিক চলেছেন গোরুর গাড়িতে ক’রে । পরদিন সকালে রাজমহলে পৌছলে নৌকো নিয়ে তিনি যাত্রা করবেন পশ্চিমে । তিনি রাজপুত, তার নাম অরিজিৎসিংহ । বাংলাদেশে ছোটো কোনো রাজার ঘরে সেনাপতির কাজ করতেন । ছুটি নিয়ে চলেছেন রাজপুতনায়। রাত্রি হয়ে এসেছে । গাড়িতে বলে বসে ঘুমিয়ে পড়েছেন । হঠাৎ একসময় জেগে উঠে দেখলেন, গাড়ি চলেছে বনের মধ্যে । গাড়োয়ানকে বললেন, ঘাটের রাস্তা ছেড়ে এখানে কেন । গাড়োয়ান বললে, আমাকে চিনলেই বুঝবেন কেন । তার পাগড়িটা অনেকখানি আড় ক’রে পরা ছিল । সোজা ক’রে পরতেই অরিজিং বললেন, চিনেছি। ডাকাতের সর্দার পরাক্রমসিংহের চর তুমি । অনেকবার তোমার হাতে পড়েছিলুম, এড়িয়ে এসেছি । সে বললে, ঠিক ঠাওরেছেন, এবার এড়াতে পারছেন না। চলুন আমার মনিবের 夺忆该日 অরিজিং বললেন, উপায় নেই, যেতেই হবে । কিন্তু, তোমাদের ইচ্ছে পূর্ণ হবে না। গাড়ি চলল বনের মধ্যে। এর আগের কথাট এবার খুলে বলা যাক – অরিজিং বড়ো ঘরের ছেলে । মোগল সম্রাট তার রাজ্য নিলে কেড়ে, তিনি এলেন বাংলাদেশে পালিয়ে । এধান থেকে তৈরি হয়ে একদিন তার রাজ্য ফিরে নেবেন, এই ছিল তার পণ । এ দিকে পরাক্রমসিং মুসলমানদের হাতে তার বিষয়সম্পত্তি হারিয়ে ডাকাতের দল বানিয়েছিলেন । তার মেয়ের বিবাহের বয়স হয়েছে ; মরিক্তিতের সঙ্গে বিবাহ হয়, এই ছিল তার চেষ্টা । কিন্তু, জাতিতে তিনি অরিজিতের সমান দরের ছিলেন না, তার ঘরের মেয়েকে বিবাহ করতে অরিজিৎ রাজি নন। রাত্রি ভোর হয়ে এসেছে। তাকে পরাক্রমের দরবারে এনে দাড় করালে পরাক্রম বললেন, ভালো সময়েই এসেছ, বিয়ের লগ্ন পড়বে আর দু দিন পরে। তোমার জন্ত বরসজা সব তৈরি। অরিজিৎ বললেন, অন্যায় করবেন না । সকলেই জানে, আপনার গুটিতে মুসলমান