পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক চিত্ত কেন যে এত আকৃষ্ট হইল তাহা বুঝা যায় না। হয়ত তাহাকে নিজের অক্তিকষ্টসঞ্চিত অর্থ দান করার জন্তই কোনোদিন বালিকা ছেলেটিকে ভুলিতে পারিল না, অথবা তাহাকেই ভালবাসিয়া প্রথম চুম্বন করিতে পাওয়ার জন্তই ভূলিল না । বয়োবৃদ্ধ বা বালকবালিক, সকলেরই মনে এক রহস্যময় প্রবৃত্তি কাজ করে । অনেক মাস ধরিয়া সে শুধু এই বালকটির এবং সেই সমাধিক্ষেত্রের পিছনের জায়গাটির স্বপ্ন দেখিত । যদি তাহার সহিত আবার দেখা হয়, এই আশায় সে চুরি করিয়া পয়সা জমা করিতে লাগিল। চেয়ার-মেরামতের মজুরি হইতে কখনও কখনও সে দু-এক পয়সা সরাইয়া রাখিত, বাবা মা থাবার জিনিষ কিনিতে পাঠাইলে তাহা হইতেও এক-আধ পয়সা রাপিয়া দিত । এই গ্রামে আবার যখন সে ফিরিল, তখন সে দুই ফ্র" জমা করিয়াছে, কিন্তু তাহার বালকবন্ধটিকে সে নিকট হইতে দেখিতে পাইল না । একবার মাত্র দূর হইতে তাতাকে দেখিতে পাইল, খুব ফিটফাট সাজিয়া সে নিজের বাবার ঔষধের দোকানের জন'লর ধারে দাড়াইয়া আছে । তাহার দুষ্ট ধারে রঙীন থলের বোতল আর রঙীন কাচের ফুলদানি । জিনিযগুলির সৌন্দর্যো বালিকা একেবারে মোহিত হইয়া গেল, বালকের প্রতি ভালবাসীও তাহার বাড়িয়া গেল । বালকের চিরউজ্জ্বল স্মৃতি সে হৃদয়ের কোণে ঐশ্বর্যের মত সঞ্চিত করিয়া রীথিল । পরের বৎসর যখন সে তাহাকে আবার দেখিল, তখন গুকে একটু বড় হইয়াছে, স্কুলের পিছনের মাঠে সে বন্ধুদের সঙ্গে গুলি খেলিতেছিল। বালিক তাহার উপর বীপাইয়া পড়িয়া এমন আবেগের সহিত তাহাকে চুম্বন করিতে আরম্ভ করিল যে, শুকে ভয়ে চীৎকার করিয়া কঁাদিয়া উঠিল । তাহার কান্না থামাইবার জন্ত বালিকা নিজের এতদিনের সঞ্চিত সমস্ত অর্থ, দুই ফ্রী, কুড়ি সেটিম, তাহার হাতে গুজিয়া দিল । এত পয়সা বালক কোনো দিন একসঙ্গে হাতে পায় মাই। তাহার কাল্লা তৎক্ষণাৎ থামিয়া গেল, বালিকা যত ইচ্ছা তাহাকে আদর করিতে লাগিল, তাহাতে কোনো আপত্তি না করিয়া গুকে একদৃষ্টে বিষ্কারিত চোখে চাহিয়া রছিল নিজের হাতের মুদ্রাগুলির দিকে । * * শবরী ్సకా ইহার পর চার বৎসর ধরিয়া যখনই বালকের সহিত ঐ বালিকার দেখা হইত, সে তাহাকে যথা ইচ্ছা চুম্বন করিতে দিত, অবখ্য বালিকার সঞ্চিত পয়সাগুলির পরিবর্তে । একবার সে ত্রিশ ফু পাইল, একবার দুই ফ্র", আর একবার বারো সু । এত অল্প পয়সা দেওয়ার জন্ত এই তৃতীয়বার বালিকা লজ্জা ও ভয়ে কাদিয়াই ফেলিল, কিন্তু বৎসরটা বড় থারাপ মাওয়াতে কোনোমতেই সে ইহার বেশী সঞ্চয় করিতে পারে নাই । কিন্তু পরের বৎসর সে যুদে-আসলে পোষাইয়া দিল । চক্চক বড় একটি পাচ ফ্র" মুদ্রা বালকের হাতে দিতেই আনন্দে সে হাসিয়া উঠিল, দরিদ্র বালিক ধন্ত হইয়া গেল । এষ্ট বালকটিই তাহার জীবনধারণের একমাত্র উদ্দেশ্য হইয়া দাড়াইয়াছিল। বালকটিও খুব উৎসুক ভাবে তাহার আগমনের জন্ত প্রতীক্ষা করিত, তাহাকে দেখিতে পাইলেই দৌড়িয় তাহার কাছে গিয়া উপস্থিত হইত। ইহাতে বালিকা একেবাবে আনন্দে আত্মহারা হইয়া ঘাইত । হঠাৎ বালিকাটিকে আর গ্রামে দেখা গেল না । অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া বালিকা জানিতে পারিল, যে, তাহাকে এক বোর্ডিং স্কুলে পাঠাইয়া দেওয়া হইয়ছে । তখন হইতে সে বাবা-মায়ের পিছনে লাগিল, মাহীতে তাহার এই গ্রামে আসার সময়ট পরিবর্তন করে । স্কুল যখন ছুটি থাকে, তখন এথানে আসিলে সে বন্ধুকে দেখিতে পাইবে ইহাই ছিল তাহার উদ্দেশু। এক বৎসর চেষ্টা করার পর সে বাপ-মাকে রাজী করিতে পারিল । তুই বৎসর পরে সে বালককে আবার দেখিতে পাইল । শুকের চেহারা ও ধরণধারণ একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে। সে অনেক লম্বা ও হুন্দর হইয়াছে, ঝকঝকে পিতলের বোতাম-দেওয়া জামাতে তাহাকে এমন চমৎকার দেখাইতেছে যে, বালিকা প্রথমে তাহাকে প্রায় চিনিতেই পারে নাই । বালক এমম ভাগ করিল যেন সে বালিকাকে দেখিতেই পায় নাই, গম্ভীরভাবে পাশ কাটাই সে চলিয়া গেল। দুই দিন ধরিয়া বালিক অবিশ্রাম অশ্রবর্ধণ করিল। ইহার পর হইতে সে নীরবে এই বেদন সন্থ করিতে লাগিল । જૂ