ফিরিঙ্গি, তাহার পরে কুয়াসা, ঘন অন্ধকার, তাহার পরে ললিতা আর কিছুই জানে না।
এই সময়ে বিনোদিনী বৈদ্য লইয়া ফিরিয়া আসিল। বৈদ্যকে দেখিয়া ললিতা অবগুণ্ঠন টানিয়া দিলেন। বৈষ্ণবী তাহা দেখিয়া বিস্মিত হইল; কিন্তু কিছু বলিল না। বৈদ্য আসিয়া রোগীর নাড়ি টিপিল, প্রলেপ ও ঔষধের ব্যবস্থা করিল, এক আস্রফি দক্ষিণা লইয়া বিদায় হইল। তখন বৈষ্ণবী কহিল, “মা, হুগলী সহরের নেড়ে হকিম গুলা সব মরিয়াছে; সপ্তগ্রামের হাঙ্গামার ভয়ে হুগলী সহর ছাড়িয়া পলাইয়াছে; তাই একটা বৈদ্য ধরিয়া আনিলাম। কিন্তু পাগ্লী মা, আজ যে তুই বড় মাথায় কাপড় দিয়াছিস?”
হৃদয়ের উদ্বেগ আর বাধা মানিল না; মৃণালকোমল ভুজযুগলে আশ্রয়দাতৃর কণ্ঠালিঙ্গন করিয়া রোদন করিতে করিতে ললিতা কহিলেন, “মা, তুই কে মা? আমি কোথায় আসিয়াছি? এতদিনে আমার চোখের সম্মুখ হইতে পর্দা সরিয়া গিয়াছে; আমি গৌরীপুরের রাধামোহন গোস্বামীর কন্যা, ভীমেশ্বরের ঘাট হইতে হার্ম্মাদে আমাকে ধরিয়া আনিয়াছিল; আমি কোথায় আসিয়াছি মা?”
বৈষ্ণবী তাহার কথা শুনিয়া শিরে করাঘাত করিয়া বসিয়া পড়িল।