পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So আশুতোষ-স্মৃতিকথা করিবেন। যেরূপ নগণাই হউক না কেন, কোন প্রার্থীর কথা তাহার নিকট পুনঃ পুনঃ যাতায়াত করিয়া স্মরণ কৱাইয়া দিবার প্রয়োজন হইত না । এই গুণটি এখন বাঙ্গালী-চরিত্রে প্রায় দেখা যায় না। যাহা হইবে না, যাহা হইবার নয়, তাহারও আশা আভাষে দিয়া কত বড় লোক কত বিপন্ন প্রার্থীকে বারংবার তঁহার নিকট দরবার করার অবনতি, সময় ও অর্থ-ব্যয় করাইয়া পরিণামে বিপন্নকে আরও বিপন্ন করিয়া থাকেন,-স্পষ্ট কথা বলিবার পথে র্তাহাদের ভীরুতা, চক্ষু-লজ ও অপবাদের ভয় অন্তরায় হয়। আশুবাবু পরের বিপদ সম্পূর্ণ বুঝিতেন, দুঃখীর কাহিনী শুনিতে শুনিতে র্তাহার চক্ষু সজল হইত ; কিন্তু যেখানে তাহার দ্বারা কোন উপকারের সম্ভাবনা নাই, সেখানে তিনি সংক্ষেপে কথাগুলি তাহাকে বুঝাইয়া দিতেন। এত বড় ভিড় তিনি সামলাইতেন কিরূপে, আমরা কিছু পূর্বে এই প্রশ্ন করিয়াছি । নিবিড় কর্ম্ম-স্রোতের মধ্যে র্তাহার বৃথা অপব্যয় করিবার মত তিলমাত্র সময় ছিল না । অথচ প্রত্যহ প্রায় অৰ্দ্ধশত লোক তাহার বাহিরের ঘরটার বারান্দায় অপেক্ষা করিত। কোন কার্ড দিয়া কাহাকেও ঢুকিতে হইত না । ধনী, দরিদ্র, সাহেব, উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারী, রাজা, মহারাজ। প্রভৃতি অনেকেই যাইতেন,—এই দৰ্শন-উৎসবে কাণা, খোড়া, গরীব ও সচ্ছল অবস্থার লোকের কোন ভেদ ছিল না। আশুবাবু বাহিরের ঘরটায় ঢুকিয়াই যাহারা আসিয়াছেন, তঁহাদের সকলের উপর একবার চক্ষু বুলাইয়া লাইতেন ; তারপর বড় চেয়ারে বসিতেন। যাহাদের সঙ্গে একটু বেশী কথা কওয়ার দরকার, তঁাহাদিগের প্রতি প্রথমতঃ মনোযোগ দিতেন না । অতিবিশিষ্ট ব্যক্তি হইলে নিভৃতে লইয়া গিয়া আলাপের পর তঁহাকে বিদায় করিয়া দিতেন। কিন্তু কাহারও সঙ্গে বেশী ক্ষণ কথা কহিবার প্রয়ােজন হইত না। ঠিক কাজের কথা জানিতে চাহিতেন, দীর্ঘ প্রস্তাবের সুযোগ দিতেন না । তারপর এক একটি লোককে তঁাহার বড় চেয়ারটার কাছে ডাকিয়া আনিতেন। এবং দুই-এক মিনিটের মধ্যে ঠিক কাজের কথা শুনিয়া তাহার সংক্ষিপ্ত ও একান্ত বাহুল্য-বর্জিত উত্তর দিয়া তাহাকে বিদায় দিতেন । এইভাবে এক একটি করিয়া সকলের কথা শুনিতেন এবং সকলেরই কথার জবাব দিয়া