পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वर्गबथ धबझ-छेडक्रीब्रएक জ্ঞাপক রস নাই; কিন্তু শান্তি একটি রস। সতরাং এবম্পিবধ পারিভাষিক শব্দ লইয়া সমালোচনার কাৰ্য্য সম্পন্ন হয় না। আমরা যাহা বলিতে চাহি, তাহা অন্য কথায় বঝাইতেছি-আলঙ্কারিকদিগকে প্ৰণাম করি। মনষ্যের কায্যের মল তাহাদিগের চিত্তবাত্তি। সেই সকল চিত্তব্বত্তি অবস্থানসারে অত্যন্ত বেগবতী হয়। সেই বেগের সমচিত বৰ্ণনদ্বারা সৌন্দয্যের সােজন, কাব্যের উদ্দেশ্য। অসমদেশীয় আলঙ্কারিকেরা সেই বেগবতী মনোবাত্তিগণকে “স্থায়ী ভাব” নাম দিয়া এ শব্দের এরূপ পরিভাষা করিয়াছেন যে, প্রকৃত কথা বঝা ভার। ইংরাজি আলঙ্কারিকেরা তাহাকে Passions বলেন। আমরা তাহার কাব্যগত প্রতিকৃতিকে রসোদ্ভাবন বলিলাম। রসোদ্ভাবনে ভবভূতির ক্ষমতা অপরিসীম। যখন যে রস উদ্ভাবনের ইচ্ছা করিয়াছেন, তখনই তাহার চরম দেখাইয়াছেন। তাঁহার লেখনী-মাখে। স্নেহ উচ্ছলিতে থাকে-শোক দহিতে থাকে, দম্ভ ফালিতে থাকে। ভবভূতির মোহিনী শক্তিপ্রভাবে আমরা দেখিতে পাই যে, রামের শরীর ভাঙ্গিতেছে; মৰ্ম্ম ছিড়িতেছে; মস্তক ঘারিতেছে; চেতনা লপ্ত হইতেছে-দেখিতে পাই, সীতা কখন বিস্ময়স্তিমিতা ; কখন আনন্দোখিতা; কখন প্রেমাভিভূতা ; কখন অভিমানকুষ্ঠিতা; কখন আত্মাবমাননাসঙ্কুচিতা ; কখন অন্যতাপবিবশা; কখন মহাশোকে ব্যাকুলা। কবি যখন যাহা দেখাইয়াছেন, একেবারে নায়ক নায়িকার হৃদয় যেন বাহির করিয়া দেখাইয়াছেন। যখন সীতা বলিলেন, “অহ্মহে--জলভরিদমোহখণিদগম্ভীরমাংসলো কুদোণ এসো ভারদীণিগঘোসো! ভরিজন্মাণকান্নবিবরং মং বি মন্দভাইণিং ঝত্তি উসমাবেদি!" তখন বোধ হইল, জগৎ সংসার সীতার প্রেমে পরিপািণ হইল। ফলে রসোস্তাবনী শক্তিতে ভবভূতি পথিবীর প্রধান কবিদিগের সহিত তুলনীয়। একটি মাত্র কথা বলিয়া মানবমনোবাত্তির সমদ্রবৎ সীমাশন্যতা চিত্রিত করা, মহাকবির লক্ষণ। ভবভূতির রচনা সেই লক্ষণাক্রোন্ত। পরিতাপের বিষয় এই যে, সে মুক্ত থাকিতেও ভবভূতি রামবিলাপের এত বাহাল্য করিয়াছেন। ইহাতে তাঁহার যশের লাঘব হহয়ছে । আমাদিগের ইচ্ছা ছিল যে, এই রামবিলাপের সহিত, আর কয়খানি প্ৰসিদ্ধ নাটকের কয়েকটি স্থান তুলিত করিয়া তারতম্য দেখাই। কিন্তু স্থানাভাবে পারিলাম না। সহৃদয় পাঠক, শকুন্তলার জন্য দৰ্ম্মমন্তের বিলাপ, দেস দিমোনার জন্য ওথেলোর বিলাপ, এবং ইউরিপিদিসের নাটকে আলকেস্তিষের জন্য আদমিতিসের বিলাপ, এই রামবিলাপের সঙ্গে তুলনা করিয়া দেখিবেন। বাহ্য প্রকৃতির শোভার প্রতি প্রগাঢ় অন্যরাগ ভবভূতির আর একটি গণ। সংসারে যেখানে যাহা সদশ্য, সাগন্ধ বা সখিকর, ভবভূতি অনবরত তাহার সন্ধানে ফিরেন। মালাকার যেমন পক্ষেপাদ্যান হইতে সন্দির সন্দর কুসমগলি তুলিয়া সভামন্ডপ রঞ্জিত করে, ভবভূতি সেইরাপ সন্দর বস্তু অবকীর্ণ করিয়া এই নাটকখানি শোভিত করিয়াছেন। যেখানে সদশ্য ব্যক্ষ, প্ৰফল্প কুসম সশীতল সবাসিত বারি,-যেখানে নীল মেঘ, উত্তঙ্গ পৰ্ব্বত, মদানিনাদিনী নিঝরিণী, কুরঙ্গ—সেইখানে কবি দাঁড়াইয়া একবার তাহার সৌন্দৰ্য্য দেখাইয়াছেন। কবিদিগের মধ্যে এই গািণটি সেক্ষপীয়র ও কালিদাসের বিশেষ লক্ষণীয়। ভবভূতিরও সেই গণ বিশেষ প্রকাশমান । ভবভূতির ভাষা অতিচমৎকারিণী। তাঁহার রচনা সমাসবহলতা ও দকেবাধ্যতাদোষে কলঙ্কিতা বলিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় কত্ত্বক নিন্দিত হইয়াছে। সে নিন্দা সমােলক হইলেও সাধারণতঃ যে ভবভূতির ব্যবহৃত সংস্কৃত ও প্রাকৃত অতিমনোহর, তদ্বিষয়ে সংশয় নাই। উইলসন বলিয়াছেন যে, কালিদাস ও ভবভূতির ভাষার ন্যায় মহতী ভাষা কোন দেশের লেখকেই দশট शश की । উত্তরচরিতের যে সকল দোষ, তাহা আমরা যথাস্থানে বিবত করিয়াছি-পািনরপ্লেখের আবশ্যক নাই। আমরা এই নাটকের সমালোচনা সমাপন করিলাম। অন্যান্য দোষের মধ্যে দৈঘ্য দোষে এই সমালোচন বিশেষ দাষিত হইয়াছে। এজন্য আমরা কুণ্ঠিত নাহি। যে দেশে তিন ছত্রে সচরাচর গ্রন্থসমালোচনা সমাপত করা প্রথা, সে দেশে একখানি প্রাচীন গ্রন্থের সমালোচন দীঘ হইলে দোষটি মাতজনাতীত হইবে না। যদি ইহার দ্বারা একজন পাঠকেরও কাব্যানরোগ বদ্ধিত হয় বা তাঁহার কাব্যর সগ্ৰাহিণী শক্তির কিশ্চিমাত্র সহায়তা হয়, তাহা হইলেই এই দীঘ প্ৰবন্ধ আমরা সফল বিবেচনা করিব। Sydt