ঔপনিষদ ব্ৰহ্ম >や> মাতার নিকট। সে তাহার মাতাকে জানে এবং জানেও না। মাতার অপর্যাপ্ত স্নেহ সম্পূৰ্ণ আয়ত্ত করিবার সাধা তাহার নাই, কিন্তু যতটুকুতে তাহার তৃপ্তি ও শান্তি ততটুকু সে আস্বাদন করে এবং আস্বাদন করিয়া ফুরাইতে পারে না। আমরাও সেইরূপ ব্ৰহ্মকে এই জগতের মধ্যে এবং আপন অন্তরাত্মার মধ্যে কিছু জানিতে পারি এবং সেইটুকু জানাতেই ইহা জানি যে, তাহাকে জানিয়া শেষ করা যায় না; জানি যে, তাহা হইতে বাচো নিবৰ্ত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ; এবং মাতৃ-অঙ্ক-কামী শিশুর মতো ইহাও জানিতে পারি যে, আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভৌতি কদাচন- তাহার আনন্দ যে পাইয়াছে তাহার। আর কাহারও নিকট হইতে কদাচ কোনো ভয় নাই। যাহারা উপনিষৎ অবিশ্বাস করিয়া, ঋষিবাক্য অমান্য করিয়া, ব্ৰহ্মলাভের সহজ উপায়স্বরূপ সাকার পদার্থকে অবলম্বন করেন, তাহারা এ কথা বিচার করিয়া দেখেন না যে, ঐকান্তিক সহজ কঠিন বলিয়া কিছু নাই। সন্তরণ অপেক্ষা পদব্রজে চলা সহজ বলিয়া মানিয়া লইলেও এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে জলের উপর দিয়া পদব্রজে চলা সহজ নহে- সেখানে তদপেক্ষা সস্তরণ সহজ। অপ্রত্যক্ষ পদার্থকে মনন-দ্বারা জানা অপেক্ষা প্রত্যক্ষ পদার্থকে চক্ষু দ্বারা দেখা সহজ এ কথা স্বীকার্য, কিন্তু তাই বলিয়া অতীন্দ্ৰিয় পদার্থকে চক্ষু-দ্বারা দেখা সহজ নহে- এমন-কি, তাহা অসাধ্য। তেমনি সাকার মূর্তির রূপ-ধারণা সহজ সন্দেহ নাই। কিন্তু সাকার মূর্তির সাহায্যে ব্রহ্মের ধারণা একেবারেই অসাধ্য; কারণ, স বৃক্ষকালাকৃতিভিঃ পরোহনাঃ- তিনি সংসার হইতে, কাল হইতে, সাকার পদার্থ হইতে শ্ৰেষ্ঠ এবং ভিন্ন এবং সেইজনাই তাহাতে সংসারাতীত দেশকালাতীত শিবং-শান্তিমতান্তমেতি, অত্যন্ত মঙ্গল এবং অত্যন্ত শান্তিলাভ হয়- অথচ তাহাকে পুনশ্চ আকৃতির মধ্যে বদ্ধ করিয়া ধারণা করিবার চেষ্টা এত কঠিন যে, তাহা অসাধা, অসম্ভব, তাহা স্বতোবিরোধী। কিন্তু সহজ কঠিনের কথা উঠে কেন ? আমরা সহজ চাই, না সত্য চাই ? সতী যদি সহজ হয় তো ভালো, যদি না হয় তবু সত্য বৈ গতি নাই। পৃথিবী কৃর্মের পষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত আছে। এ কথা ধারণা করা যদি কাহারও পক্ষে সহজ হয়, তথাপি বিজ্ঞানপিপাসু, সত্যের মুখ চাহিয়া তাহাকে আশ্রদ্ধেয় বলিয়া অবজ্ঞা করেন। মরুপ্রান্তরের মধ্যে ভ্ৰাম্যমাণ ক্ষুধার্ত যখন অন্ন চায়, তখন তাহাকে বালুকাপিণ্ড আনিয়া দেওয়া সহজ ; কিন্তু সে বলে আমি তো সহজ চাই না, আমি অন্নপিণ্ড চাই- সে অন্ন। এখানে যদি না পাওয়া যায়, তবে দুরূহ হইলেও তাঁহাকে অন্যত্র হইতে আহরণ করিতে হইবে, নহিলে আমি বাচিব না। তেমনি সংসারমধ্যে আমরা যখন অধ্যাত্মপিপাসা মিটাইতে চাই তখন কল্পনা মরীচিকায় সে কিছুতেই মিটে না- যত দূর্লভ হউক সেই পিপাসার জল— আত্মার একমাত্র আকাঙক্ষণীয় পরমাত্মাকেই চাই- তিনি নিরাকার নির্বিকার বাক্যমনের অগোচর হইলেও তবু তাহাকেই চাই, নহিলে আমাদের মুক্তি নাই। ধর্মপথ তো সহজ নহে, ব্ৰহ্মলাভ তো সহজ নহে, সে কথা সকলেই বলেদুর্গং পথ্যস্ত।ৎ কবয়ো বদন্তি- সেইজনাই মোহনিদ্রাগ্রস্ত সংসারীর দ্বারে দাড়াইয়া ঋষি উচ্চস্বরে ডাকিতেছেন; উত্তিষ্ঠত জাগ্ৰত। না উঠিলে, না জাগিলে এই ক্ষুরধারনিশিত দুৰ্গম দূরত্যয় পথে চক্ষু মুদিয়া চলা যায় না- আত্মার অভাব আলস্যভরে অনায়াসে মোচন হয় না- এবং ব্ৰহ্ম ক্রীড়াচ্ছলে কল্পনাবাহিত মনোরথের গামা নহেন। সংসারে যদি বিদ্যালাভ বিত্তলাভ যশোলাভ সহজ না হয়, তবে ধর্মলাভ সত্যলােভ ব্ৰহ্মলাভ সহজ, এমন আশ্বাস কে দিবে এবং সে আশ্বাসে কে ভুলিবে! কোন মূঢ় বিশ্বাস করিবে যে, মস্ত্ৰোচ্চারণে লোহা সোনা হইয়া যাইবে, খনি-অন্বেষণের প্রয়োজন নাই? উত্তিষ্ঠত জাগ্ৰত! দুৰ্গং পথ্যস্ত।ৎ কবয়ো বদন্তি! তবে ব্ৰহ্মলাভের চেষ্টা কি একেবারে পরিত্যাগ করিতে হইবে? তবে কি এই কথা বলিয়া মনকে বুঝাইতে হইবে যে, যাহারা সংসার ত্যাগ করিয়া অরণ্য-আশ্রয় গ্রহণ করেন, যাহাঁদের নিকট ভালোমন্দ সুন্দরকুৎসিত অন্তরবাহিরের ভেদ একেবারে ঘুচিয়া গেছে, ব্ৰহ্মজ্ঞান ব্রহ্মোপাসনা তঁহাদেরই জন্য। তাই যদি হইবে তবে ব্ৰহ্মবাদী ঋষি ব্ৰহ্মচারী ব্ৰহ্মজিজ্ঞাসু শিষ্যকে কেন অনুশাসন করিতেছেন প্রজাতন্তুং মা ব্যবচ্ছেৎসীঃ, সন্তানসূত্র ছেদন করিবে না, অর্থাৎ গৃহাশ্রমে প্রবেশ করিবে। কেন শাস্ত্রকার বিশেষ করিয়া উপদেশ দিতেছেন ব্ৰহ্মনিষ্ঠে গৃহস্থঃ স্যাৎ, গৃহস্থ ব্যক্তি ব্ৰহ্মনিষ্ঠ হইবেন— এবং