গণেশদাদার মাথার চুল পেকে একেবারে শনের নুড়ি হয়ে গিয়েচে, পিঠের দিকটা বেঁকে একটু কুঁজো হয়ে গিয়েচে—সামান্য।
শরৎকাল। পুজোর ছুটিতে সেবার নদীতে একটু বন্যার আভাস দেখা গিয়েচে। কাশফুল ফুটে আলো করেচে নদীর দুই পাড়। নদীর ধারের মাঠে গণেশ গরু চরাচ্চে, খুঁজতে খুঁজতে বার করলাম। ওর মাথার চুল আর ওর চারিপাশে কাশফুল একই রকম দেখতে। বৃদ্ধ গণেশদাদা সেই পাঁচ-সাত বছর আগের মত তাল পাতার ছাতি মাথায় দিয়ে লাঠি হাতে গরু চরাচ্চে। কোঁচড় থেকে বের করে কি খাচ্ছিল, আমায় দেখে লজ্জিত সুরে বললে—সৈরভির মা দুটো চাল ভাজা দেলে, বললে, গরম-গরম একখোলা নামিয়ে ফেললাম, তুমি দুটো নিয়ে যাও—তাই নিয়ে এ্যালাম। বেশ লাগে।—তা এলে কবে দাদাঠাকুর? আর দ্যাখো বড্ড বুড়ো হয়ে পড়িচি, তুমি আসচো, কিন্তু মুই বুঝতে পারলাম না। বলি, কেড়া আসে বাবুপানা? চকি তেমন আর ঠাওর হয় না—
—চালভাজা খাচ্চ, দাঁত আছে?
—তা আছে তোমার বাপমায়ের আশিব্বাদে। বলি ও কথা যাক, বিয়ে-থাওয়া করেছ?
—না। বিয়ের আর বয়েস নেই।
—কি কথা বলে। দাদাঠাকুর? তোমারে কোলে করে মানুষ করলাম, কালকের কাঁচা ছেলে, বয়েস ফুইরে গেল তোমার? ও কথা বোলোনি। মা লক্ষ্মীকে দেখে মুই চক্ষু বুঁজোবো। বিয়ে করো—কি করচো আজকাল?
—চাকরি করচি।
—বেশ বেশ। মোদের শুনেও সুখ। তা বোসো। এই গাছটার ছিঁয়াতে বোসো—হ্যাদে, তোমরা টুপি পরো? বেনার ডাঁটার খাসা টুপি বুনি দিতি পারি। পস্কার সায়েবের টুপি। নেবা?
—না, আমি সায়েবের টুপি পরিনে।
১১৭