কিন্তু সেদিন সকালেই চরপাড়ায় গোলমাল বাধলো।
দেওয়ানজির দূর সম্পর্কের সেই ভাইপো রামকান্ত রায়, কলকাতায় আমুটি কোম্পানীর হৌসে নকলনবিসি করে এবং যে অদ্ভুত কলের গাড়ি ও জাহাজের কথা বলেছিল, সে নীলকুঠিতে এসেছিল দেওয়ানের সঙ্গে দেখা করতে। পাইক এসে খবর দিলে চরপাড়ার প্রজার দাগ উপড়ে ফেলেচে।
রাজারাম তখুনি ঘোড়া ছুটিয়ে বেরুলেন চরপাড়ার দিকে। সেখানে এক বটতলায় বসে একে একে সমস্ত মুচিদের ডাকালেন। যার যত জমিতে আগে দাগ ছিল, তার চেয়ে বেশি দাগ স্বীকার করিয়ে টিপসই নিলেন প্রত্যেকের। কারো কিছু কথা শুনলেন না।
রামু সর্দারকে বললেন—এবার পাঁচপোতার বাঁওড়ে বাঁধাল দিইছিলে তুমি?
—আজ্ঞে হ্যাঁ রায়মশাই। ফি বছর মোর বাঁধাল পড়ে।
—হুঁ।
রামু সর্দারের বুক কেঁপে গেল। দেওয়ানজিকে সে চেনে। ঘোড়ায় উঠবার সময় সে দেওয়ানকে বললে—মোর কি দোষ হয়েছে? অপরাধ নেবেন না, যদি কেউ কিছু বলে থাকে।
দেওয়ানজি ঘোড়ায় চেপে টিড়ে বেরিয়ে গেলেন।
সন্ধ্যের পর পাঁচপোতার বাঁওড়ের বাঁধালে রামু সর্দার বসে তামাক খাচ্ছে আর চার-পাঁচজন নিকিরি ও চাষীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলচে, এমন সময়ে হঠাৎ কোথা থেকে আট-দশজন লোক এসে ওর বাঁধাল ভাঙতে আরম্ভ করলে।
রামু সর্দার খাড়া হয়ে উঠে বললে—কে? কে? বাঁধালে হাত দেয় কোন সুমুন্দির ভাই রে?
করিম লাঠিয়াল এগিয়ে এসে বললে—তোর বাবা।
রামু সর্দায় বাগ্দি পাড়ার মোড়ল। দুর্বল লোক নয় সে। লাঠি হাতে
ইছামতী—৭