দ্বিতীয় ভাগ
প্রথম পরিচ্ছেদ
নৌকা
বড় পিপাসা, বড় গায়ের জ্বালা!
কঙ্কাবতী মনে মনে করিলেন;—
“যাই নদীর ঘাটে যাই, সেইখানে বসিয়া একপেট জল খাই, আর গায়ে জল মাখি, তাহা হইলে শান্তি পাইব।”
নদীর ঘাটে বসিয়া কঙ্কাবতী জল মাখিতেছেন, এমন সময় কে বলিল,— “কে ও, কঙ্কাবতী?”
কঙ্কাবতী চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন, কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। কেহ কোথাও নাই। কে একথা বলিতেছে, কঙ্কাবতী তাহা স্থির করিতে পারিলেন না। নদীর জলে দূরে কেবল একটি কাতলামাছ ভাসিতেছে, আর ডুবিতেছে, দেখিতে পাইলেন।
পুনরায় কে জিজ্ঞাসা করিল,— “কে ও, কঙ্কাবতী?”
কঙ্কাবতী এইবার উত্তর করিলেন, — “হাঁ গো, আমি কঙ্কাবতী।”
পুনরায় কে জিজ্ঞাসা করিল,— “তোমার কি বড় গায়ের জ্বালা, তোমার কি বড় পিপাসা?”
কঙ্কাবতী এইবার উত্তর করিলেন,— “হাঁ গো, আমার বড় জ্বালা, আমার বড় পিপাসা!”
কে আবার বলিল,— “তবে তুমি এক কাজ কর না কেন? নদীর মাঝখানে চল না কেন? নদীর ভিতর অতি সুশীতল ঘর আছে, সেখানে যাইলে তোমার পিপাসার শান্তি হইবে, তোমার শরীর জুড়াইবে।”
কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন, — “নদীর মাঝখান যে অনেক দূর! সেখানে আমি কি করিয়া যাইব?”
সে বলিল,— “কেন? ঐ যে জেলেদের নৌকা রহিয়াছে? ঐ নৌকার উপর বসিয়া কেন এস না?”
জেলেদের একখানি নৌকার উপর গিয়া কঙ্কাবতী বসিলেন। এমন সময় বাটীতে কঙ্কাবতীর অনুসন্ধান হইল। 'কঙ্কাবতী কোথায় গেল,—কঙ্কাবতী কোথায় গেল?' এই বলিয়া একটা গোল পড়িল। কে বলিল,— “ওগো! তোমাদের কঙ্কাবতী ঐ ঘাটের দিকে গিয়াছে।”
কঙ্কাবতীর বাড়ীর সকলে মনে করিলেন যে, জনার্দ্দন চৌধুরীর সহিত বিবাহ হইবার ভয়ে কঙ্কাবতী পলায়ন করিতেছেন। তাই কঙ্কাবতীকে ডাকিয়া আনিবার জন্য প্রথমে বড়ভগ্নী ঘাটের দিকে দৌঁড়িলেন। ঘাটে আসিয়া দেখেন না, কঙ্কাবতী একখানি নৌকার উপর চড়িয়া নদীর মাঝখানে যাইতেছেন। কঙ্কাবতী ভগিনী বলিলেন, —