পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sh9 মানিক গ্রন্থাবলী আরম্ভ করিয়া ব্যাপারটাকে কুৎসিৎ করিয়া তুলিবার মানুষ মণীশ নয় । তার নিজের মনটাই বিগাডাইয়া গিয়াছে। তাকে পিঠা খাওয়ানোর জন্য কুন্তলা তার প্রতীক্ষায় বসিয়া আছে ; হয়তো পরণে ছোড়া ময়লা শাডিখানি বদলাইয়া একখানা ফর্সা শাড়ী পরিয়াছে’- সস্তা সাধারণ শাড়ী, পাছে সে মনে করে যে তার জন্যই সাজগোজ ৷ একবার ক্রিষ্টীপের মনে হইল, পিঠা খাওয়াব নিমন্ত্রণটা রাখিয়া আসে। একেবারে যাওয়া বন্ধ না করিয়া ধীরে ধীরে কমাইয়া আনাই কি ভাল নয় ? দু’দিন যায় নাই, আজ যখন ক্ষিতীশ ডাকিতে আসিয়াছে, আজ একবার গেলে কি আসিয়া যাইবে ? আ চার পাঁচ দিন একেবারে না গেলেই চলিবে। তারপর ত্ৰিষ্টুপ ভাবিল, না, আ না যাওয়াই ভালো । যাওয়ার ইচ্ছাটা তার নিজেরই আজ বড় বেশী জোৱালে। হইয়া উঠিয়াছে, যাওয়ামাত্ৰ সকলে তার আগ্রহ টের পাইয়া যাইবে । কাল পরশু, বরং দশ মিনিটের জন্য গিয়া দেখা করিয়া আসিবে, কতকটা ভদ্রত রক্ষার জন্য দেখা করার মত । আজ নয় । “আমার শরীর তো আজ ভালো নেই ক্ষিতু, কি করে যাব ? “অসুখ করেছে ? ‘হঁ্যা, অসুখ করেছে।” ক্ষিতীশ একটু ক্ষুন্ন হইয়া চলিয়া গেলে ত্ৰিষ্টুপ অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল । মিথ্যা অজুহাতে ক্ষিতীশকে ফিরাইয়া দিবার জন্য নয়, যায় নাই বলিয়া কুন্তলা ক্ষুন্ন হইবে ভাবিয়াও নয়, মণীশের বাড়ীর আকর্ষণ অনুভব করিয়া। এত অল্প সময়ের মধ্যেই কুন্তলা যদি তার মনকে টানিতে আরম্ভ করিয়া দিয়া থাকে; নিজের সম্বন্ধে তবে আর আশা ভরসা করিবার কিছুই নাই। আধা ঘণ্টা পরে মণীশ আসিল । “কি হয়েছে তিষ্ট ? “এমনি শরীরটা একট- ” “বিশেষ কিছু নয় তো ? তবে এসে - দু’টো একটা পিটে তোমায় খেতেই হবে ভাই । কাল থেকে আয়োজন করে পিঠে তৈরী হয়েছে, তুমি চেখে দেখে সার্টিফিকেট না দিলে কেউ খুশী হবে না।” সুতরাং ক্রিষ্টপ গেল। আগের দিন সহরের অন্য প্ৰান্ত হইতে স্বামী ও দুটি মেয়েকে নিয়া কুন্তলার দিদি বাপের বাড়ী বেড়াইতে আসিয়াছে। পিঠার আয়োজনটা হইয়াছে ওদের জন্যই, ত্ৰিষ্টুপের জন্য নয়।