পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
আখ্যানমঞ্জরী।

 এই স্থির করিয়া, সেই বালক নীহারশূন্য স্থানের অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইল। ঐ সময়ে চন্দ্রের উদয় হওয়াতে, তদীয় আলোকে, পর্ব্বতের পাদদেশে একটি ক্ষুদ্র গহবর লক্ষিত হইল। বালক তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া দেখিল, সেখানে কিছুমাত্র নীহার নাই। তখন সে, কতকগুলি শুষ্ক পর্ণ সংগ্রহ করিয়া, তদ্দ্বারা একপ্রকার শয্যা প্রস্তুত করিল, পরে কনিষ্ঠ ভ্রাতার হস্ত ধরিয়া কহিল, ভাই, আর কাঁদিও না, তোমার কোনও ভয় নাই, এস, এইখানে শয়ন কর।

 ইহা কহিয়া, কনিষ্ঠকে শয়ন করাইয়া, আপনিও তাহার পার্শ্বে শয়ন করিল। কনিষ্ঠ বারংবার কহিতে লাগিল, দাদা, বড় শীত। জ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ ভাইটিকে অত্যন্ত ভাল বাসিত, এবং তাহার কোনও কষ্ট দেখিলে, সে অত্যন্ত কষ্ট বোধ করিত, এক্ষণে, কি উপায়ে তাহার শীতনিবারণ হয়, অনন্যমনে তাহাই চিন্তা করিতে লাগিল, অবশেষে, অন্য কোনও উপায় না দেখিয়া, আপন গাত্র হইতে সমুদয় বস্ত্র খুলিয়া, তাহার গাত্রে দিল, এবং পাছে তাহাতেও তাহার শীত নিবাবণ না হয়, এই ভাবিয়া, স্বয়ং তাহার গাত্রের উপর শয়ন করিল।

 এইরূপে, নিজের ও জ্যেষ্ঠের বস্ত্রে আবৃত হওয়াতে ও জ্যেষ্ঠের গাত্রের উত্তাপ পাওয়াতে কনিষ্ঠের অনেক শীত নিবারণ হইল, তখন সে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছন্দ বোধ করিল। তদ্দর্শনে জ্যেষ্ঠের হৃদয় আহ্লাদে পরিপূর্ণ হইল, নিজে অনাবৃত গায়ে থাকাতে, তাহার যে ভয়ঙ্কর কষ্ট হইতেছিল, তাহাকে কষ্ট বলিয়া গণ্য করিল না। যদি তাহারা এই ভাবে অধিকক্ষণ