পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
পাখীর কথা

বসন্তাগমে এদেশ হইতে চলিয়া যায়। ইহাই এই জাতীয় যাযাবর হাঁসের রীতি।

 এস্থলে বলা আবশ্যক মনে করি যে, আমি মেঘদূতপ্রসঙ্গে রাজহংসকে কতকটা Grey goose জাতীয় বলিয়া পরিচয় দেওয়া যাইতে পারে, এরূপ আভাস দিয়াছি; কিন্তু তাহাকে Flamingo পরিবারভুক্ত করিবার বিশেষ কারণ দেখাইবার চেষ্টাও করিয়াছি। এখনকার সহিত সে উক্তির কোনও বিরোধ নাই। মেঘদূতে কাদম্ব শব্দটি পাওয়া যায় না বলিয়া যে এ সম্বন্ধে কোনও বিরুদ্ধ তর্ক উঠিতে পারে, তাহা মনে হয় না। পরন্তু Grey gooseএর পতত্রের ও অঙ্গের বর্ণ এত পরিবর্ত্তনশীল, যে একই speciesকে কখনও লোহিত-চঞ্চুচরণ শ্বেতাবয়ব রাজহংস ও লোহিত চঞ্চুচরণ কৃষ্ণধূসরাবয়ব কাদম্ব বলিয়া পরিচিত করিলে আভিধানিক হিসাবে কোনও ভুল হয় না। ইহাদের বর্ণবৈচিত্র্য সম্বন্ধে একজন বিশেষজ্ঞ লিখিয়াছেন[১]

 “Generally the tone of plumage varies much more than it usually does in wild birds, or than it does in any other Goose with which I am acquainted.”

 ধূসরবর্ণ পক্ষের দ্বারা কাদম্বের বিশেষভাবে পরিচয় পাওয়া যায়, একথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। অভিধানচিন্তামণিকার বলিতেছেন—“কাদম্বাস্তু কলহংসাঃ পক্ষৈঃ স্ফুরতি ধূসরৈঃ।”

 এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে পড়ে রঘুবংশের ত্রয়োদশ সর্গে রামচন্দ্র গঙ্গাযমুনাসঙ্গম দেখিয়া জানকীকে বলিতেছেন—হে অনবদ্যাঙ্গি! ঐ দেখ, যমুনাতরঙ্গের সহিত গঙ্গাপ্রবাহ মিশিয়া কেমন শোভা পাইতেছে। ঠিক যেন মানসসরোবরপ্রিয় রাজহংসের সহিত কাদম্বপঙ্ক্তি মিলিত হইয়াছে,—“ক্বচিৎ খগানাং প্রিয়মানসানাং কাদম্বসংসর্গবতীব পঙ্ক্তিঃ”। এই কাদম্ব রাজহংস শ্রেণীবদ্ধ হইয়া তটিনীতে, নদীতটে,

  1. Game Birds of India, Burmah and Ceylon by Hume and Marshall, Vol. III, p. 64.