যেরূপ বিশদ পরিচয় লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, সেইরূপ সুসংযত ভাষায় অনুরূপ ভাবের আলোচনা খুব কমই দেখিতে পাওয়া যায়। নিম্নে সেই পত্র হইতে স্থানে-স্থানে সামান্য উদ্ধৃত হইল—
“তাঁহার (দেশবন্ধুর) জীবনের মাত্র তিন বৎসর কাল আমি তাঁহার সঙ্গে ছিলাম এবং অনুচর হইয়া তাঁহার কাজ করিয়াছিলাম। এই সময়ের মধ্যে চেষ্টা করিলে তাঁহার নিকট অনেক কিছু শিখিতে পারিতাম; কিন্তু চোখ থাকিতে কি আমরা চোখের মূল্য বুঝি? *** দেশবন্ধুর সহিত আমার শেষ দেখা আলিপুর সেণ্ট্রাল জেলে। আরোগ্যলাভের জন্য এবং বিশ্রাম পাইবার ভরসায় তিনি সিমলা পাহাড়ে গিয়াছিলেন, আমাদের গ্রেপ্তারের সংবাদ পাইয়া তৎক্ষণাৎ সিমলা হইতে রওনা হইয়া কলিকাতায় আসেন। আমাকে দেখিতে তিনি দুই বার আলিপুর সেণ্ট্রাল জেলে আসেন এবং আমাদের শেষ সাক্ষাৎ হয় বহরমপুর জেলে বদলী হইবার পূর্ব্বে। প্রয়োজনীয় কথাবার্ত্তা শেষ হইলে আমি তাঁহার পায়ের বুলা লইয়া বলিলাম—‘আপনার সঙ্গে আমার বোধ হয় অনেক দিন দেখা হইবে না।” তিনি তাঁহার স্বাভাবিক প্রফুল্লতা ও উৎসাহের সহিত বলিলেন—‘না, আমি তোমাদের শীগ্গির খালাস করে আন্ছি।’
হায়! তখন কে জানিত যে ইহজীবনে আর তাঁহার সাক্ষাৎ পাইব না! *** তাঁহার সেই শেষ স্মৃতিটুকু আমার প্রাণের সম্বল হইয়া দাঁড়াইয়াছে। *** জনমণ্ডলীর উপর দেশবন্ধুর অতুলনীয় অলৌকিক প্রভাবের গূঢ় কারণ কি—এ প্রশ্নের সমাধান করিবার চেষ্টা অনেকে করিয়াছেন। আমি সর্ব্বপ্রথমে তাঁহার প্রভাবের একটি কারণ নির্দ্দেশ করিতে চাই। আমি দেখিয়াছি, তিনি সর্ব্বদা মানুষের দোষগুণ বিচার না করিয়া তাহাকে ভালবাসিতে পারিতেন। *** কত বিভিন্ন রকমের লোক হৃদয়ের টানে নিকটে আসিত এবং জীবনের কত ক্ষেত্রে এই নিমিত্ত