পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
হারানো খাতা।

না পাইয়া ধনীর ঘরের লোহার সিন্দুকের দিকে তাকাইয়া মনেরমধ্যে তার সৃষ্টিকর্ত্তার উপর স্বামীর চাইতেও বড় বেশী অভিমানী হইয়া উঠিল। সে এই বলিয়া তাঁহার দরবারে নালিশ রুজু করিয়া দিল যে, বড় লোকের মেয়ে, যাদের মা আছে, বাপ আছে, মা বাপের রাশিকরা টাকা আছে তারা কালো কুৎসিত হইলেও তাদের ভাল ঘরে বরে পড়িতে এতটুকুও আটকায় না যখন, তখন অনর্থক ও অ-দরকারে তাহাদের ঘাড়ে বাড়ায় ভাগ —রূপের বোঝাগুলা না চাপাইয়া সেগুলা আমাদের মতন অধম, অক্ষম ও অভাগা জীবদের জন্য রাখা কি চলিত না? স্বামী যেমন দয়া করিয়া আমায় পথের পাশ হইতে কুড়াইয়া লইয়াছেন, তা আমার যদি একটুখানি রূপও এই দেহের মধ্যে থাকিত, তো না হয় তাই দেখিয়াই মনে মনে একটু গুমোরও রাখিতে পারিতাম যে, এই দেখিয়াই হয়ত তিনি আমায় নিজের করিতে পারিয়াছেন। তাঁর এই অগাধ দয়ার মূল্যে নিঃস্বত্বভাবে বিকাইয়া যাওয়া হইতে হয়ত বা তাহাতে আমি একটুখানিও বাঁচিয়া থাকিতে পারিতাম। তিনি অত দিলেন,একবারেই যে সমুদয়টুকুই নিঃস্বার্থভাবে দিয়া ফেলিলেন, এর বদলে যে এতটুকু একটু কিছু ফেরৎ পাইলেন না, এইখানেই যে মনে প্রচণ্ড একটা আঘাত লাগে। এইখানেই যে এই বিনামূল্যের কেনা বাঁদীরও অযোগ্যা যে, সে তাঁর দয়ায় দামে বিকাইয়া যায়।— তাই অভিমান উথলানো বুকে পরিমল মনে মনে ভাবিল, যার জোরে পরাজিত দৈত্যের মেয়ে শচীদেবী ইন্দ্রের পাশে মাথা উঁচু কৱেই বসতে পেরেছিলেন, মৎস্যগন্ধা জেলের মেয়ে ভারত সম্রাটের মহিষী হতে লজ্জা পাননি, সেই রূপ থাক্‌লেও ত আমার একটুখানি মনের ইজ্জতও থাক্‌ত। আমার যে একেবারেই দয়া! দেবার তো আমার এতটুকু কিছুই নেই, কেবল বোঝা বেঁধে নেওয়া মাত্র, মান এতে থাক্‌বেই বা কিসে?