হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১)/চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/১৩

উইকিসংকলন থেকে

১৩

রাগ কামোদ

কৃষ্ণা[চার্য্য]পাদানাম্।  তিশরণ ণাবী কিঅ অঠক মারী
নিঅ দেহ করুণা শূনমে হেরী॥ ধ্রু॥
তরিত্তা ভবজলধি জিম করি মাঅ সুইনা
মঝ বেণী তরঙ্গম মুনিআ॥ ধ্রু॥
পঞ্চ তথাগত কিঅ কেডুআল
বাহঅ কাঅ কাহ্নিল মাআজাল॥ ধ্রু॥
গন্ধ পরসর জইসোঁ তইসোঁ
নিংদ বিহুনে সুইনা জইসো॥ ধ্রু॥
চিঅ কণ্ণহার সুণত মাঙ্গে
চলিল কাহ্ন মহাসুহ সাঙ্গে॥ ধ্রু॥

 উক্তার্থদৃঢ়ীকরণায় তৈশ্চর্য্যা[পদৈ][২১]রভিহিতং—

 তিশরণেত্যাদি। ত্রয়ং কায়বাক্‌চিত্তং। যস্মিন্ চতুর্থে শর[ণে] লীন[ং] গতং তং মহাসুখকায়ং নৌকা সন্ধ্যাভাষয়া বোদ্ধব্যম্। অতএব শূন্যতাকরুণয়োরৈক্যং নিজদেহে(হা) যুগনদ্ধরূপং তেন মহাসুখকায়েন। অঠকুমারীতি[১] বুদ্ধৈশ্বর্য্যাদিসুখমনুভূতম্।

 ধ্রুবপদেন চতুর্থোপায়স্যানুশ[ং]সামাহুঃ—

 তরিত্তা ইত্যাদি। তেন চতুর্থানন্দোপায়নৌকয়া ভবসমুদ্রং কৃষ্ণাচার্য্যেণ তীর্ণ্ণং। মায়াময়ং স্বপ্নোপমং চ কৃত্বেতি। মধ্যবেণিকায়াং পরমানন্দে স্বাধিষ্ঠানচিত্তস্য তরঙ্গং উল্লোলং সুখং ভুক্তং ময়েতি ইত্যাত্মবেদনং ন প্রতীক্ষ্যতে।

 তথাচ নাগার্জ্জুনপাদাঃ অপ্রতিষ্ঠানপ্রকাশে

যাবান্ কশ্চিৎ বিকল্পঃ প্রভবতি মনসি ত্যাজ্যরূপো হি তাবান্
যোঽসাবানন্দরূপঃ পরমসুখকরঃ সোঽপি সংকল্পমাত্রঃ।
যো বা বৈরাগ্যভাবস্তদপি তদুভয়ং তদ্ভবস্যাগ্রহেতু
নির্ব্বাণান্নান্যদস্তি ক্বচিদপি বিষয়ে নির্ব্বিকল্পাত্মচিত্তাৎ॥

 দ্বিতীয়পদেন স্কন্ধপরি[২১ক]ণতিমাহুঃ(হ)—

 পঞ্চতথাগতেত্যাদি। বিশুদ্ধপঞ্চতথাগতাত্মকং স্ব(স্বে)দেহং কেলিপাতং পরিকল্প্য মহাসুখনৌকাং গৃহীত্বা স্বয়মাত্মানং সম্বোধ্য ভো কৃষ্ণাচার্য্যপাদাঃ মায়াজালবৎ স্কন্ধধাত্বাদিবিষয়সমুদ্রস্য বাধাং কুরু॥

 তথাচ সূতকে

স্কন্ধশ্চ ধাতুশ্চ তথেন্দ্রিয়াণি
পঞ্চৈব [পঞ্চৈব] কৃতপ্রভেদাঃ।
তথাগতাধিষ্ঠিত এক একশঃ
সংসারকর্ম্মাণি কুতো ভবন্তি॥

 তৃতীয়পদেন নিঃসন্দেহপ্রতিপাদনায়[২] ভাবনাবিশুদ্ধিমাহুঃ—

 গন্ধেত্যাদি। বাহ্যং গন্ধরসস্পর্শাদিবিষয়ং যথৈবাস্তি তথৈব[া]স্তু। সর্ব্বধর্ম্মস্বরূপাবগমেনাস্মাৎ প্রতিনিদ্রাস্ত্যানরহিততয়া জাগ্রদবস্থায়াং স্বপ্নবৎ প্রতিভাতি।

 তথাচ সূতকে

সুপ্তপ্রবুদ্ধে তু ন চার্থভেদঃ
সংকল্পয়েৎ স্বপ্নফলাভিলাষী।
রাত্রিন্দিবং স্বপ্নমুপেতি জন্তু[ঃ]
মহাপ্রযত্নেন চিরেণ সিদ্ধিঃ॥

 চতুর্থপদেন মার্গস্যানুশংসামাহুঃ—

 চিঅ ইত্যাদি। সর্ব্বাকারবরোপেতশূন্যতানৌমার্গে [২২] চিত্তকর্ণধারং সমারোপ্য তৎপ্রসঙ্গেন কৃষ্ণাচার্য্যচরণাঃ মহাসুখচক্রদ্বীপং গতাঃ। ১৩॥

  1. গানে অঠক মারী; টীকায় অঠকু মারী।
  2. ‘না’টি উপরে তোলা।

১৩

রাগ কামোদ

কৃষ্ণাচার্য্যপাদানাম্— তিশরণ ণাবী কিঅ অঠকুমারী।
নিঅ দেহ করুণাশূণমে হেরী॥ ধ্রু॥
তরিত্তা ভবজলধি জিম করি মাঅ সুইনা।
মঝ বেণী তরঙ্গম মুনিআ॥ ধ্রু॥
পঞ্চ তথাগত কিঅ কেড়ুআল।
বাহঅ কাঅ কাহ্নি ল মাআজাল॥ ধ্রু॥
গন্ধ পরস রস জইসোঁ তইসোঁ।
নিংদ বিহুনে সুইনা জইসো॥ ধ্রু॥
চিঅকণ্ণহার সুণতমাঙ্গে।
চলিল কাহ্ন মহাসুহসাঙ্গে॥ ধ্রু॥

 ত্রিশরণকে (তিন—কায়, বাক্, চিত্ত, ইহাদের যিনি আশ্রয়, সেই মহাসুখকায়কে) নৌকা করা হইল; (অতএব) নিজ দেহকে করুণা ও শূন্যে দর্শন করিয়া (অর্থাৎ নিজ দেহে শূন্যতা ও করুণার ঐক্যরূপ যুগনদ্ধ রূপ দেখিয়া) অষ্ট কুমারী (অষ্ট প্রকৃতির উপর আধিপত্যরূপ বুদ্ধৈশ্বর্য্যসুখ অনুভূত হইল)। [তখন] যেমন মায়াময় ও স্বপ্নসদৃশ [বস্তুতে কোনরূপ আস্থা থাকে না, সেই প্রকার] করিয়া (কৃষ্ণাচার্য্য) ভবজলধি উত্তীর্ণ হইয়া, (পরমানন্দরূপ) মধ্যবেণিতে (স্বাধিষ্ঠানচিত্তের) তরঙ্গ (উল্লোল সুখ) মননপূর্ব্বক (ভোগ করিতে লাগিলেন)। পঞ্চপ্রকার তথাগত-[শক্তিকে] বৈঠা করিয়া, ল কাহ্নি! [তুমি] কায়-(রূপ মহাসুখনৌকা) বাহিয়া, মায়াজাল [উত্তীর্ণ হও]। (বাহ্যে) গন্ধ, স্পর্শ, রস (ইত্যাদি বিষয়সকল) যেমন আছে, তেমন (থাকুক), (আমাদের) নিদ্রাবিহীন (এই জাগদ্রবস্থায়) যেমন স্বপ্ন, (ঐ সকল তেমনই বোধ হয়)। শূন্যতারূপ নৌকামার্গে চিত্তরূপ কর্ণধারকে (সমারোপিত করিয়া) কৃষ্ণাচার্য্য মহাসুখসঙ্গরূপ (চক্রদ্বীপে) চলিলেন।