পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
পুনশ্চ

শচী সকরুণ দৃষ্টিতে ইন্দ্রের পানে তাকালেন।
ইন্দ্র বল্‌লেন, “তথাস্তু, যাও মর্ত্ত্যে,
সেখানে দুঃখ পাবে, দুঃখ দেবে।
সেই দুঃখে ছন্দঃপাতন অপরাধের ক্ষয়।”

মধুশ্রী জন্ম নিল মদ্ররাজকুলে — নাম নিল কমলিকা।
একদিন গান্ধারপতির চোখে পড়ল মদ্ররাজকন্যার ছবি।
সেই ছবি তার দিনের চিন্তা, তার রাত্রের স্বপ্নের পরে
আপন ভূমিকা রচনা করলে।
গান্ধারের দূত এল মদ্ররাজধানীতে।
বিবাহ প্রস্তাব শুনে রাজা বল্‌লে,
“আমার কন্যার দুর্লভ ভাগ্য।”


ফাল্গুন মাসের পুণ্যতিথিতে শুভলগ্ন।
রাজহস্তীর পৃষ্ঠে রত্নাসনে মদ্ররাজসভায়
এসেচে মহারাজ অরুণেশ্বরের অঙ্কবিহারিণী বীণা।
স্তব্ধসঙ্গীতে সেই রাজপ্রতিনিধির সঙ্গে কন্যার বিবাহ।
যথাকালে রাজবধূ এল পতিগৃহে।
নির্ব্বাণ-দীপ অন্ধকার ঘরেই প্রতিরাত্রে স্বামীর কাছে বধূসমাগম।
কমলিকা বলে, “প্রভু, তোমাকে দেখবার জন্যে
আমার দিন আমার রাত্রি উৎসুক। আমাকে দেখা দাও।”
রাজা বলে, “আমার গানেই তুমি আমাকে দেখ।”
অন্ধকারে বীণা বাজে।
অন্ধকারে গান্ধর্ব্বীকলার নৃত্যে
বধূকে বর প্রদক্ষিণ করে।