ক। “সে জন্য তুমি কেন চিন্তা কর? শুনেছ ত রাত্রে বেড়ান আমার ছেলে বেলা হইতে অভ্যাস। মনে ভেবে দেখ আমার সে অভ্যাস না থাকিলে তোমার সঙ্গে আমার কখন চাক্ষুষও হইত না।”
শ্যা। “সে ভয়ে বলি না। কিন্তু একা রাত্রে বনে বনে বেড়ান কি গৃহস্থের বউ ঝির ভাল। দুই জনে গিয়াও এত তিরস্কার খাইলাম, তুমি একাকিনী গেলে কি রক্ষা থাকিবে?”
ক। “ক্ষতিই কি? তুমিও কি মনে করিয়াছ যে আমি রাত্রে ঘরের বাহির হইলেই কুচরিত্র হইব?”
শ্যা। “আমি তা মনে করি না। কিন্তু মন্দ লোকে মন্দ বল্বে।”
ক। “বলুক, আমি তাতে মন্দ হব না।”
শ্যা। “তা ত হবে না―কিন্তু তোমাকে কেহ কিছু মন্দ বলিলে আমাদিগের অন্তঃকরণে ক্লেশ হবে।”
ক। “এমত অন্যায় ক্লেশ হইতে দিও না।”
শ্যা। “তাও আমি পারিব। কিন্তু দাদাকে কেন অসুখী করিবে?”
কপালকুণ্ডলা শ্যামাসুন্দরীর প্রতি নিজ স্নিগ্ধোজ্জ্বল কটাক্ষ নিক্ষেপ করিলেন। কহিলেন, “ইহাতে তিনি অসুখী হয়েন, আমি কি করিব? যদি জানিতাম যে স্ত্রীলোকের বিবাহ দাসীত্ব, তবে কদাপি বিবাহ করিতাম না।”
ইহার পর আর কথা শ্যামাসুন্দরী ভাল বুঝিলেন না। আত্মকর্ম্মে উঠিয়া গেলেন।