বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ

কৃতিত্ব অসামান্য। পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক সভ্যতা, তাহার প্রত্যক্ষবাদ ও কার্যকরী শক্তিকে তিনি উপেক্ষা করেন নাই, বরং উহার মধ্যে যে নবশক্তির রসায়ন আছে, তাহা স্বজাতির চিত্তে সঞ্চার করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। অন্য দিকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতার গৌরব ও মহত্বও তিনি জাতির সম্মুখে উজ্জ্বলভাবে তুলিয়া ধরিয়াছিলেন। আমাদের ধর্ম ও সমাজকে প্রাচীন জড়তা হইতে মুক্ত করিয়া একটা নব রূপান্তরের প্রেরণা দিয়াছিলেন। যাহাকে ইংরেজী ভাষায় বলে জাতি ও সমাজের Re-construction বা পুনসংগঠন— তাহাই ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনের মহাব্রত এবং সমস্ত জীবন সাহিত্য ও সাময়িক পত্রের মধ্য দিয়া তিনি এই মহাব্রত পালন করিয়া গিয়াছেন। বঙ্কিমচন্দ্রকে বুঝিতে হইলে, তাঁহার যুগকে বুঝিতে হইলে এই মূল সূত্রটি ধরিতে ও বুঝিতে হইবে।

 বাঙলার জাতীয় আন্দোলন ও স্বাদেশিকতার উপর এই বঙ্কিম-প্রতিভার প্রভাব অপরিসীম। তাঁহার জাতীয় আদর্শের মূল ভিত্তি ছিল আত্মশক্তির সাধনা ও ভিক্ষা-নীতি বর্জন। প্রভুজাতির নিকট আবেদন-নিবেদন করিয়া যে কোন জাতি স্বাধীন হইতে পারে না, রাজনীতিতে ভিক্ষুকের যে কোন স্থান নাই, নিজের শক্তির উপর নির্ভর করিয়া কঠোর সাধনার পথেই যে জাতিকে স্বপ্রতিষ্ঠ হইতে হইবে, বঙ্কিমচন্দ্র নানাভাবে নানাদিক দিয়া এই নিষ্ঠুর সত্যই দেশবাসীকে চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছিলেন। একদিকে অতীত ইতিহাসের পৃষ্ঠা