সংঘর্ষে আমাদের সমাজ ও সভ্যতা বিপর্যস্ত হইবার উপক্রম হইয়াছিল। পাশ্চাত্যের বিদ্যুৎ-ঝলকে আমাদের শিক্ষিত সমাজের চোখ ধাঁধিয়া গিয়াছিল, তাঁহারা ভাবিয়া দেখেন নাই,—
যে বিদ্যুৎ-ছটা
রমে আঁখি, মরে নর, তাহার পরশে।
তাই তাঁহারা তাল সামলাইতে পারেন নাই; পাশ্চাত্যের সঙ্গে তুলনায় তাঁহারা নিজেদের সমাজের সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে অবজ্ঞা করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন এবং সর্ববিষয়ে পশ্চিমেরই অনুকরণ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। হিন্দু কলেজের ছাত্রদের মধ্য দিয়া এই বিজাতীয় ভাবটা খুব বেশী পরিমাণে সংক্রামিত হইয়াছিল। বাঙলার নবীন যুগের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন এই বিপর্যয়ের ট্রাজেডির একটা বড় দৃষ্টান্ত। এই সর্বনাশা স্রোতের বিপরীত গতি হইতে জাতিকে রক্ষা করিবার প্রথম চেষ্টা আরম্ভ করেন পুণ্যশ্লোক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ভূদেব মুখোপাধ্যায়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রাজনারায়ণ বসুও ওই কার্যে যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিলেন। ইঁহারা সকলেই জাতির পূর্ব গৌরবের স্মৃতি ফিরাইয়া আনিয়া তাহাকে আত্মস্থ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করিয়া বাঙালী জাতিকে নূতন ভিত্তির উপরে গঠন করিবার কার্যে বঙ্কিমচন্দ্রের