বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শুনিব রে আঁখি মুদি বিশ্বের সংগীত
তোর মুখে কেমন শুনায়।

 রবীন্দ্রনাথ গীতিকবি হৃদয়াবেগকে সুরের অনির্বচনীয় ভাষায় ব্যক্ত করাই তাঁহার চিরজীবনের কাজ। গানের সুরে কবির কাছে জগতের একটি অপরূপ রূপান্তর ঘটে। হঠাৎ চোখে দেখা জগৎ ক্ষণকালের জন্য যেন সুরের জগৎ কানে—শোনা জগৎ হইয়া উঠে— সমস্ত বিশ্বস্পন্দনকে কেবল আলোকরূপে বস্তুরূপে না দেখিয়া তাহাকে একটি অপরূপ সংগীতের মতো যেন কবি অনুভব করিতে থাকেন। একটা চিঠিতে আছে:

 ‘অনন্তের মধ্যে যে একটি প্রকাণ্ড অখণ্ড চির বিরহবিষাদ আছে, সে এই সন্ধ্যাবেলাকার পরিত্যক্ত পৃথিবীর উপরে কি একটি উদাস আলোকে আপনাকে ঈষৎ প্রকাশ করে দেয়— সমস্ত জলে স্থলে আকাশে কি একটি ভাষাপরিপূর্ণ নীরবতা— অনেকক্ষণ চুপ করে অনিমেষনেত্রে চেয়ে দেখতে দেখতে মনে হয়, যদি এই চরাচরব্যাপ্ত পূর্ণ নীরবতা আপনাকে আর ধারণ করতে না পারে, সহসা তার অনাদি ভাষা যদি বিদীর্ণ হয়ে প্রকাশ পায়, তা হলে কি একটা গভীর গম্ভীর শান্ত সুন্দর করুণ সংগীত পৃথিবী থেকে নক্ষত্রলোক পর্যন্ত বেজে ওঠে। আসলে তাই হচ্ছে। কেননা জগতের যে কম্পন কানে এসে আঘাত করছে সে শব্দ। আমরা একটু নিবিষ্টচিত্তে স্থির হয়ে চেষ্টা করলে জগতের সম্মিলিত আলোক এবং বর্ণের বৃহৎ হার্মনিকে মনে মনে একটি বিপুল সংগীতে তর্জমা করে নিতে পারি।’

 রবীন্দ্রনাথের কবিতার মধ্যে যে অনেকে একটা অস্পষ্টতা অনুভব করেন সে এই সুরের আবেগের জন্য। ‘সংগীতস্রোতে ভেসে যাই দূরে, খুঁজে নাহি পাই কূল’। তাহার কারণ গানের সুর আমাদের মনে

৩৫