বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে সৌন্দর্যকে জাগায় তাহাকে কোনো সংকীর্ণ কথার দ্বারা আমরা সুস্পষ্ট প্রকাশ করিতে পারি না। তাহা যদি পারিতাম তবে সুরের প্রয়োজনই ছিল না। সেইজন্য সুরে যখন কোনো অনুভূতি বাজে তখন তাহার চারি দিকে একটি অনির্বচনীয়তার হিল্লোল খেলিতে থাকে— সে যাহা বলে তার চেয়ে ঢের বেশি না-বলার দ্বারা বলে— গীতের প্রকাশ সেইজন্য কথার প্রকাশের পরবর্তী সপ্তকে লীলা করিতে থাকে।

 এই গান যে কেবল কাব্যে, তাহা নহে, রবীন্দ্রনাথের সমস্ত রচনার মধ্যেই ইহা কাজ করিয়াছে দেখিতে পাই। তাঁহার দৃষ্টিটাই গানের দৃষ্টি— খণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে তাহার নিত্যসহচররূপে অখণ্ডকে দেখা। সুর যেমন প্রত্যেক কথাটির মধ্যে অনির্বচনীয়কে উদ্ঘাটন করে, তাঁহার হৃদয় সেইরূপ সমস্ত দেখার সঙ্গে সঙ্গে একটি অপরূপকে দেখিয়া তৃপ্তিলাভ করিতে চায়। আমার মনে হয় তাঁহার অধিকাংশ গদ্যগল্পগুলিও এইরকম এক-একটি গীত। তাহা এক-একটি ঘটনাকে আশ্রয় করিয়া সেই ঘটনার মূলগত এক-একটি বিশ্বব্যাপী সুরের অনুরণনে পাঠকের মনকে পূর্ণ করিয়া তুলিতে চায়।

 প্রভাতসংগীতের পর ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ নামক একটি নাট্যকাব্য লিখিত হয়। এই নাটকের নায়ক এক সন্ন্যাসী সমস্ত স্নেহবন্ধন ছিন্ন করিয়া প্রকৃতির উপরে জয়ী হইবার ইচ্ছা করিয়াছিল। অবশেষে একটি বালিকা তাহাকে ভালোবাসিয়া তাহাকে সংসারের মধ্যে ফিরাইয়া আনিল। তাহার তখন এই উপলব্ধিটি হইল যে, সীমার মধ্যেই অসীমতা, প্রেমের বন্ধনই যথার্থ বন্ধনমুক্তি। যে জগৎকে তাহার অত্যন্ত বিরূপ ও ক্ষুদ্র লাগিয়াছিল তাহাই তাহার কাছে আনন্দময় হইয়া দেখা দিল।

 আমার নিজের বিশ্বাস যে নাটকের কাহিনীটি যেমনি হউক না, ইহাও একপ্রকার প্রভাতসংগীতেরই অনুবৃত্তি। এক সময়ে যে তাঁহার প্রকৃতির

৩৬