আনন্দী হয়।
সেইজন্য এই অনন্ত সত্য এবং অনন্ত আনন্দকে উপনিষদ্ ‘এষঃ’ বলিয়াছেন। এষঃ অর্থে ইনি। এষহ্যেবানন্দয়াতি। ইনিই আনন্দ দিতেছেন। ইনি কে? ইনি কোথায়?
স এবাধস্তাৎ স উপরিষ্টাৎ স পশ্চাৎ স পুরস্তাৎ স দক্ষিণতঃ স উত্তরতঃ— ইনি এই-যে অধে, ইনি এই যে ঊর্ধ্বে, ইনি এই পশ্চাতে, ইনি এই সম্মুখে, ইনি দক্ষিণে, ইনি উত্তরে— এই সমস্তই আনন্দরূপমমৃতম্— অনন্ত আনন্দে অনন্ত অমৃতে পরিপূর্ণ।
আমরা দেখিয়া আসিয়াছি যে, জগতের এই রসময় উপলব্ধি কবির একেবারে প্রকৃতিগত জিনিস। বস্তুতঃ সেইজন্য উপনিষদের মধ্যে কবি যত মজিয়াছেন এমন আর দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থের মধ্যে নহে।
“সব-পেয়েছির দেশ” এই ‘এষহ্যেবানন্দয়াতি’র উপলব্ধির কবিতা।
আমরা জানি যে, সৌন্দর্যবোধ যতক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ না হয়, অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তাহার মধ্যে ভোগ-প্রবৃত্তির মোহ মিশিয়া থাকে, ততক্ষণ আমরা অপরূপকাল্পনিক ইন্দ্রিয়গত সৌন্দর্যকে সৌন্দর্য বলি এবং শুচিবায়ুগ্রস্তের ন্যায় পৃথিবীর বারো আনা জিনিসেই সৌন্দর্যের অভাব দেখিয়া খুঁত খুঁত করিতে থাকি। কবির প্রথম অবস্থার কাব্যের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের এই তীব্রতা ছিল; তখন সৌন্দর্যবোধ বিশ্বমঙ্গলের সঙ্গে, বিশ্বসত্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয় নাই। ‘ক্ষণিকা’য় আমরা প্রথম দেখিলাম ভোগবিরত সরল গ্রাম্য সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ উপলব্ধি। ‘চৈতালি’ হইতে সুর বদলাইয়া আসিতেছিল, কিন্তু ‘ক্ষণিকা’তেই শেষাশেষি সৌন্দর্যের ‘কল্যাণী’ মূর্তি উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল।
রূপসীরা তোমার পায়ে
রাখে পূজার থালা,
১১৯