পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৯৩

লাহিড়ী মহাশয়ের প্রবাসভবনে গিয়া অবস্থিত হন। এই ঠাকুরদাস লাহিড়ী মহাশরের বিবরণ অগ্ৰে দিয়াছি। ইনি কলিকাতাতে নদীয় রাজের প্রতিনিধিরূপে বাস করিতেন। তখন লোকে হঁহাকে লাহিড়ী দেওয়ান বলিয়া ডাকিত। ইংরাজ কৰ্ম্মচারীদিগের সহিত নদীয় রাজের যে সমুদয় কারবার ছিল, তাহ ইনিই নিম্পন্ন করিতেন। ইনিও দেওরানদিগের বাড়ীতে বিবাহ করিরাছিলেন, স্বতরাং মাতার দিক দিয়া ইহঁর সহিত লাহিড়ী মহাশয়ের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখানে লাহিড়ী মহাশয় যে অধিককাল ছিলেন এরূপ বোধ হয় না; কারণ নিজে ভ্রাতৃদ্বয়কে লইয়া স্বতন্ত্র বাসা করিবার পূৰ্ব্বে তিনি স্বীয় জননীর মামাত ভাই হরিকুমার চৌধুরী মহাশয়ের ভবনে কিছুদি ছিলেন, এরূপ শুনিয়াছি।

 প্রথম শ্রেণীতে একবৎসর পাঠ করিয়া তিনি ছাত্রবৃত্তির প্রার্থী হইলেন। তৎকালে কৃতী ছাত্রদিগকে বিশেষ পরীক্ষা করিয়া বৃত্তি দেওয়া হইত। তিনি হেয়ারের নিকট বৃত্তি-প্রার্থী হইলে মহাত্মা হেয়ার তাহাকে কমিট অব পবলিক ইনষ্ট্রকৃশনের সেক্রেটারী ডাক্তার উইলসনের নিকট প্রেরণ করিলেন। ডাক্তার উইলসন সে সময়ে টাকশালের অধ্যক্ষ ছিলেন; এবং জেম্স্ প্রিন্সেপ নামে একজন সংস্কৃতজ্ঞ ইংরাজ তাহার সহকারী ছিলেন। ডাক্তার উইলসন প্রিন্সেপের উপরে রামতনু বাবুকে পরীক্ষা করিবার ভার অর্পণ করিলেন। প্রিন্সেপ পরীক্ষা করিয়া সন্তোষ প্রকাশ করিলে তিনি ১৬ টাকা রক্তি পাইলেন।

 বৃত্তি পাইয়াই তাহার মনে হইল যে রাধাবিলাস ও কালীচরণকে কলিকাতায় আনিয়া লেখা পড়া শিখাইতে হইবে। তদনুসারে কালেজের নিকটে স্বতন্ত্র বাসা করিয়া ভ্রাতৃদ্বয়কে কলিকাতায় আনিলেন। এখনকার সহিত তুলনায় তখন কলিকাতা বাসের ব্যয় স্বল্পই ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহা হইলেও ষোল টাকাতে তিন জনের বাস করিয়া থাকা বড় স্বসাধ্য ব্যাপার ছিল না। তাঁহার যে প্রকার ক্লেশে নি ধাত্র নির্মাহু করিতেন, শুনিলে এখনকার ছাত্রগণের কিছু জ্ঞানলাভ হইতে পারে। বাদাতে পাচক বা ভৃত্য ছিল না; ঘর ঝাড় দেওয়া, বাসন,মাজা, বাজার করা, কুটনা কোট, বাটনা বাট, রন্ধন করা প্রভৃতি সমুদয় কার্য আপনাদিগকেই নিৰ্ব্বাং করিতে হইত; প্রাতে ও রাত্রে দুইবার মাত্র আহার, মধ্যাহ্নে জল খাবারের পয়সা যুটিত না; কাহারও পায়ে জুতা ছিল না; সকলেই পাছকাহীন পদে স্কুলে যাইতেন। ইহার উপরে আবার এই সময় হইতে কেশব চন্দ্রের সাহায্য রহিত হইয়াছিল।