পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা ২১ রায়ের কলিকাতায় আগমন ও ধৰ্ম্মান্দোলন প্ৰবৰ্ত্তন ( ১৮১৪ ), দ্বিতীয়টি হিন্দুকলেজ স্থাপন ( ১৮১৭ ), এবং তৃতীয়টি প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ ( ১৮১৮) । শেষোক্ত বৎসরে ‘সমাচার দর্পণ প্রকাশ এবং উহার সমাদর এই নূতন ভাবধারা প্রবর্তনের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ। ‘সমাচার দর্পণ ইংরেজ মিশনরী পরিচালিত কাগজ, সেজন্য উহাতে নব্যপন্থীদের কথা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও ‘সমাচার দর্পণ একান্তই একদেশদশী ছিল না, ইহাতে প্রাচীনপন্থীদের পত্র, আপত্তি, প্রাচীনপন্থীদের সংবাদপত্রাদি হইতে বিবিধ সংবাদের সঙ্কলন প্রভৃতিও প্রকাশিত হইত। সেজন্য সে যুগের ধৰ্ম্ম, শিক্ষা ও সমাজ সম্বন্ধে যে-সকল আন্দোলন চলিতেছিল, ‘সমাচার দর্পণ হইতে তাহার ইতিহাস সঙ্কলন অতি সহজ। বর্তমান পুস্তকে সেই কাহিনী লিখিবার চেষ্টা করা হয় নাই,—মালমশলা সংগ্রহ করা হইয়াছে মাত্র ; এমন কি এই মালমশলাকেও স্বক্ষাতিসূক্ষ্মভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় নাই, মোটামুটিভাবে শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, ও ধৰ্ম্ম—এই চারিটি ভাগে বিন্যস্ত করা হইয়াছে ; যে-কথা এই সব বিষয়ের অন্তভুক্ত নয় তাহা ‘বিবিধ’ নাম দিয়া শেষে দেওয়া হইয়াছে। অমুসন্ধিৎস্থ পাঠক এই কয়েকটি ভাগ হইতেই সেকালের বাঙালী-জীবনের প্রায় সকল দিক সম্বন্ধেই এবং সেকালের বাঙালীর প্রায় সকল কাৰ্য্যকলাপ সম্বন্ধেই সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করিতে পারিবেন। এখানে এই সঙ্কলনে কি পাওয়া যাইবে শুধু তাহার একটু আভাস দিয়া আমার ভূমিকা শেষ করিব। এই পুস্তকের প্রথম অংশ শিক্ষ-বিষয়ক। পাশ্চাত্য ধরণে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ প্রভৃতি দ্বারা লোকের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের একটা বড় কাজ। এই শিক্ষার ভিতর দিয়াই এদেশের প্রথাগত জীবনে সৰ্ব্বপ্রথম ইউরোপীয় প্রভাবের বিস্তার হয় এবং তাহার ফলে ধৰ্ম্ম ও সামাজিক আচার-ব্যবহার সংস্কার করিবার ইচ্ছা দেখা দেয়, নূতন বাংলা সাহিত্যেরও স্বষ্টি হয়। যে-সকল প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় ও প্রভাবে ইউরোপীয় সাহিত্য-দৰ্শন-বিজ্ঞানের সহিত বাঙালীর পরিচয় হয়, হিন্দুকলেজ, কলিকাতা স্কুলবুক সোসাইটি, ও স্কুল সোসাইটি উহাদের মধ্যে প্রধান । এই সঙ্কলনে এই তিনটির সম্বন্ধেই অনেক জ্ঞাতব্য তথ্য পাওয়া যাইবে । এই যুগেই আবার স্ত্রীশিক্ষার জন্য আন্দোলনও আরম্ভ হয়। তখন স্ত্রীশিক্ষা কত দূর অগ্রসর হইয়াছিল, ও বালিকাদের শিক্ষার জন্ত কি ব্যবস্থা ছিল, ১৩-১৯ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত সংবাদগুলিতে তাহার বিবরণ আছে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের শিক্ষাবিস্তার-প্রয়াস শুধু স্কুলকলেজ-প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আবদ্ধ থাকে নাই। প্রাপ্তবয়স্কেরা এবং যাহারা স্কুল-কলেজের শিক্ষা সমাপন করিয়াছেন, র্তাহারা যাহাতে পরজীবনেও জ্ঞানচর্চা করিতে পারেন তাহার জন্য একটি ক্লাব বা সোসাইটি স্থাপিত হইয়াছিল। উহার নাম গৌড়ীয় সমাজ । এই সমাজের কার্য্যকলাপের সংবাদ ৯-১৩ পৃষ্ঠায় পাওয়া যাইবে। ইংরেজী, শিক্ষার বিস্তার যেমন উনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষাপ্রচার-চেষ্টার একটি দিক,