আমার আত্মকথা/চোদ্দ

উইকিসংকলন থেকে

চোদ্দ

 ঢাকার জীবনের আরও কত কিই বলবার আছে। আমার ঘূর্ণাবর্ত্তে চির-আকুল এই জীবনে নির্ব্বিঘ্ন শান্তি এসেছে কিন্তু টেঁকে নি; আশায় রঙীন অরুণ-রক্ত ঊষা কতবারই যে পূর্ব্বাচলের কোল জুড়ে নববধূর ব্রীড়ামুখে উদয় হয়েছেন আর আমি ভেবেছি ভবঘুরে বুঝি এতদিনে ঘর বাঁধলো। কত সাধ, কত আশা, কত আকাঙ্ক্ষার রঙীন ফানুস! ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে নীড় রচনার মুখে ব্যাকুল পাখীর কতই না তৃণ সঞ্চয়, খুঁজে খুঁজে সোণার তার, রূপার জালতি, লতার তন্তু এনে এনে তার কুজন চঞ্চল অরুণ-আঁখি সঙ্গিনীটিকে জুগিয়ে যাওয়া। কোন্ অজানা বনের কোল থেকে, এই চির অপরিচিত অথচ আজ সবার চেয়ে পরিচিত সবার চেয়ে অন্তরতম পাখীটি হঠাৎ এসে তার জীবন ভরে ফেলেছে বলেই না ঘরছাড়ার ঘর গড়বার এত সাধ।

 নীড় বাঁধার সব অক্লান্ত আয়োজন ফুরোতে না ফুরোতেই কিন্তু ঝড় ওঠে, সঙ্গিনী মাথায় আঘাত পেয়ে চোখের সামনেই রক্তমাখা পাখা মেলে লুটিয়ে পড়ে আর আকাশ ফাটিয়ে ডাকতে ডাকতে এক দিকে উড়ে যাওয়া ছাড়া সাথীহীন পাখীর আর গতি থাকে না। তবু কিন্তু তবু ঐ ক্ষণিক সুখ-নিবিড় আয়োজন টুকুর জন্যে শুধু কিই বা না দেওয়া যায়! মেজদা’র নিরিবিলি বাড়ীতে আমার পড়ার ঘরটি ছিল বড়ই শান্তরসের জায়গা। এক পাশে কবিতা ও নভেলে ভরা, খাতা পেন্সিল কলমে এলোমেলো অগোছাল টেবিল, তারই ওপাশে ক্যাম্প খাটখানা—যার ওপর বিছনা দিন রাত পাতাই থাকতো। ঘরটির সামনে ঘাসে সবুজ একটি ছোট্ট মাঠ, তার পরই বাড়ীর কম্পাউণ্ডের গেট। আমার মেজবৌদির শ্রীহস্তটির স্পর্শে গোছাল এই ছোট সংসারে কোথায়ও এতটুকু অশান্তির ছায়াও ছিল না। আমার কবিতা রসাস্বাদনের তিনি ছিলেন মুগ্ধ মূক শ্রোতা; মনে আছে এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ, মানকুমারী, প্রিয়ম্বদা, দেবেন্দ্রনাথ আদি কবির অনুমতি নিয়ে আমি আর বউদি’ একটি কবিতা সংগ্রহ ছাপাবার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ করে তুলেছিলুম। তারপর কেন যে তা’ ছাপানো হ’লো না তা এখন আর মনে নেই, বোধ হয় টাকার অভাবেই হবে।

 কৃষির স্বপ্ন এই সময়ে আমায় পেয়ে বসেছিল। জীবনের সব চেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল—বাঙলার কোন্ নিরালা বনহরিত কোণে আমার হবে বেড়ায় ঘেরা, লাউলতায় কলার ঝোপে ঢাকা সবজীবাগ ও খড়ে ছাওয়া কুটীর খানি। ফুলের কেয়ারী বাঁধা পথ গেছে চার দিক থেকে ঐ কুটীরেরই গোবর-লেপা আঙিনায়, গোশালা, ধানের মরাই, বাসীপুকুর, চণ্ডীমণ্ডপ তাকে করে রেখেছে বাঙলার পল্লীর নয়ন-মঞ্জুল নিখুঁত ছবি। এইখানে জীবনের মধ্যাহ্ন ভাবমগ্ন কবির চোখের কাছে এসে একদিন উদয় হবে আমার হারিয়ে ফেলা সেই দয়িত। সে যে কে, সেই কৈশোরের অপ্রতিদানের ব্যথার সঙ্গিনী, না, এই ঢাকার নিরালা জীবনে অতর্কিতে প্রবিষ্টা সচকিতা ভয়বিহ্বলা রূপের ডালি মেয়েটি, তা’ জিজ্ঞাসা করলে হয়তো ঠিক বলতে পারতুম না, কিন্তু সে যে এই দু’জনের একজন সে বিষয়ে কোন সন্দেহই ছিল না। তখনও একজন হৃদয় অন্তঃপুরের কোন্ নিভৃত ঘরের দুয়ার ভেজিয়ে লুকিয়ে আছে আর ত্রস্ত শঙ্কিত পদে আর একজন এসে সিংহাসনটিতে লাজনম্রা রাণীর মত বসেছে। আমার মত মানুষ বোধ হয় নারীকে ভাল না বেসে পারে না, হৃদয়ের দিক দিয়ে সে ওদের সবার কাছেই সমান চির পরাজিত। প্রেমের এই অসহায় স্বৈরবৃত্তি ভাল কি মন্দ কে বলবে! এই আনন্দ-নিবিড় জগতে ওরাও এসেছে অমোঘ লক্ষ্য নিয়ে ব্রহ্মবাণ হাতে আর আমরাও ব্যাকুল হয়ে আছি ওদেরই হাতে মরবার জন্যে। জগৎ-শিল্পী যাদের দু’জনকে দু’জনের দিকে দুর্ব্বার টান দিয়ে গড়েছে, পরস্পরের চোখে মুখে সর্ব্ব অবয়বে দিয়েছে আকুল স্পর্শের বেদনা, পুড়ে মরবার আগুন, ডুবিয়ে নেবার সর্ব্বনাশা সুখসিন্ধু, তাদের পরস্পরের কাছ থেকে বাঁচবার উপায় কি? উপায় তো ব্যবস্থাকর্ত্তা রাখে নি, আর ট্যারা একচোখ্যে নীতিবাগীশই তো এই দিন দুনিয়ার উপায় ও ব্যবস্থা কর্ত্তা নয়।

 সুসংএর ছোটতরফ আমায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গারো পাহাড়ের কাছাকাছি কোথাও কৃষির জন্য একশ বিঘে জমি দেবেন বলে। মেজদা’ বলেছিলেন, “কলকেতায় গিয়ে জোগাড় যন্ত্র কর, টাকা আমিই না হয় দেব।” কৃষির কবিতা-মাখা ছবিটি বুকে নিয়ে ট্রেণে ষ্টিমারে মাঠ ঘাট নদী নালা ডিঙিয়ে এসে পড়লুম ট্রাম ছ্যাকরার হৈ-চৈ ভরা কলকেতায়। তাকে হারাবার স্মৃতির দাহ বুকে আর এই স্বপ্ন মাথায় নিয়ে হর্ষ আর বিষাদে কেমন এক রকম অব্যবস্থিত অবস্থায় ফিরে এলুম—আবার এলুমও ঠিক সেই কৈশোরের ভালবাসার পাত্রী এতদিনে বিস্মৃতির বশে আধভোলা মেয়েটির কাছে। তার জীবনে তখন সেই মানুষ আসা যাওয়া করছে যাকে সে একদিন মালা দিয়ে বিবাহিত জীবনে বরণ করে নেবে। বোধ হয় সে আমাকে ও তাকে দু’জনের কাউকেই ভালবাসে নি, শুধু আমাদেরই ভালবাসার টানে পড়ে করুণায় গলে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে নি। এমনই ওরা কোমল ও অসহায়, কাকে দিতে কাকে যে সর্ব্বস্ব দিয়ে ফেলে তার ঠিক ঠিকানা হদিস পর্য্যন্ত থাকে না; শেষে হয়তো সারাটা জীবনই অনুতাপ করে জ্বলে পুড়েই মরে।

 একদিন ভোর বেলা ছাদে উঠে পূর্ব্বাকাশে ঊষার অরুণ রাগের স্নিগ্ধ লাজ-রক্তিমার শোভাটুকু আনমনা হয়ে Cচয়ে চেয়ে দেখছি, হঠাৎ আমার নাম ধরে কোমল নীচু গলায় কে ডাকলো। ফিরে দেখি পাশে গা-ঘেঁসে সে দাঁড়িয়ে! আমি আর থাকতে পারলুম না, তাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটি চুমো খেয়ে বললুম, “কি এত সকালে ছাদে যে?” হঠাৎ আমার বাহুর বাঁধনে তার দেহ আড়ষ্ট হয়ে উঠলো, মুখখানি ভয়ে কেমন বিবর্ণ হয়ে গেল, শঙ্কাতুর চোখ দুটি ছাদের দরজার দিকে আশঙ্কায় বিরল হয়ে রইল চেয়ে। সেই দিকে ফিরে দেখি ছাদের সিঁড়ির দরজায় তার মা মুখখানা কালে। গম্ভীর করে এসে বসে আছে।

 মেয়েকে নিয়ে তিনি নেমে গেলেন, বলির পশুটির মত আড়ষ্ট শঙ্কিত পায়ে সে সঙ্গে গেল। সেই দিন দুপুর বেলা সে-বাড়ী ছেড়ে যাবার সময় দেখলুম একটা অন্ধকার ঘরে খালি তক্তপোষের উপর উপুড় হয়ে পড়ে সে কাঁদছে। সেই আমাদের শেষ ছাড়াছাড়ি, অথচ কিই বা ঘটেছিল যার জন্যে মা হয়ে এত বড় শাস্তি ও গঞ্জনাটা তাকে দিল! আমরা এর আগে সেই বার তের বছরের ভালবাসায়ও কখন এতদূরও এগোই নি, দু’জনকে দুজনে প্রায় দেহসম্পর্ক শূন্য হয়ে তবু নিবিড় একাত্মতায় ভালবেসেছিলুম। অবশ্য এটা ঠিকই যে, এসব ক্ষেত্রে ভালবাসা মনের বা হৃদয়ের গণ্ডীতেই আটকে থাকে না, অবসর ও সান্নিধ্য পেলেই ক্রমে ক্রমে প্রাণে—শেষে স্নায়ুতে তরঙ্গ তোলে, পরিণামে দেহেতেও গড়িয়ে আসে। সেই সন্তানকে কলঙ্ক থেকে রক্ষা করতে আগে থেকেই মা-বাপ কঠিন হয়, তাড়না করে। কিন্তু যে সমাজে মা-বাপকে স্নেহ মমতা ভুলে, মেয়ের মন-প্রাণের সাধ আকাঙ্ক্ষা ভুলে নিষ্ঠুর হতে হয়, সে সমাজ কি আদর্শ সমাজ? স্বতঃস্ফূর্ত্ত প্রেমই তো মানুষের মিলনের আসল বস্তু? সেই প্রেমই যত কলঙ্ক নিন্দা লজ্জার কারণ? প্রেমকেই সমাজ এমন অপাঙক্তেয় করে রেখে বিবাহের অনুষ্ঠান গুলোকেই এতখানি মূল্য দেবে এইটেই কি হ’লো সুষ্ঠু সমাজ বিধি? মানুষের সুখ কি শুধু সুবিধা নিয়ে?

 আমি এমন দেখেছি যে মা ও বাপ মেয়েকে ঠিক জেলারের মত নির্দয় হয়ে তালা চাবি দিয়ে আটকে রেখেছে, জল্লাদের মত নিষ্ঠুর হয়ে মেরেছে, অকথ্য গালি-গালাজ করেছে; অপরাধ এই যে, মেয়ে হৃদয় দিয়ে ফেলেছে এমন জায়গায় যেখানে সামাজিক বা পারিবারিক সম্বন্ধে বাধে। এত যে আমরা কবিতায় গানে নাটকে স্তুতি করি দিব্য মাতৃস্নেহ বলে সেই মাতৃস্নেহই সামাজিক পারিবারিক বা আর্থিক স্বার্থে আঘাত পেয়ে কি পর্য্যন্ত নিষ্ঠুর ও ক্রূর হতে পারে তা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। শিক্ষিত ভদ্র ঘরের মা-বাপ শিক্ষিত উন্নতমনা মেয়েকে বাধা দিয়ে, তালা বন্ধ করে, গঞ্জনা দিয়ে অপমান নির্য্যাতন করে এমন অবস্থায় এনেছে দেখেছি যাতে তার ফিটের রোগ হয়েছে, মাথা খারাপ হয়ে গেছে, স্নায়বিক দুর্ব্বলতায় সে শয্যা নিয়েছে। এর পর মনের দুঃখে সে মেয়ে আত্মঘাতী হতে পারে, পাগল হতে পারে, কি না হতে পারে? এই সব দেখে শুনে শ্রীঅরবিন্দের কথাই আমার ঠিক মনে হয়, মাতৃস্নেহ পুত্রবৎসলতা ও-সব হচ্ছে বাজে কথা, ওসব বৃত্তিই আসলে পশুবৃত্তি, দেহধর্ম্মে আপনি আসে এবং সহজে বিকৃত হয়, কারণ ও-সবের মূলেই রয়েছে স্বার্থ—নিতান্তই হীন ব্যক্তিগত স্বার্থ। খুব উদার মহামনা মানুষ ছাড়া ঠিক নিঃস্বার্থ ভাবে এ জগতে কেউ কাউকে ভালবাসে না, মা-বাপও নয়। সচরাচর ভালবাসা স্বার্থেরই একটা স্নায়বিক রূপ। নিঃস্বার্থ প্রেম জগতে বড়ই দুর্ল্লভ।

 সংসারে পশু-মা পশু-বাপ পশু-স্বামীই বেশী—হাজার সাধু ও ভদ্রলোক সেজেই তারা থাক না কেন। সমাজের ভয়, টাকার লোভ, কুল ভাঙার আশঙ্কা, বদনামের আতঙ্ক, নিজের জিদ ও পছন্দ অপছন্দের দোহাই—যা’ হোক একটা কিছু তুচ্ছ হেতুই যথেষ্ট। মানুষ তার মোহে ও বশে সব ভুলে যায়, চিরজীবনের শিক্ষা-দীক্ষা উদার মত ও আদর্শ সব বিসর্জন দিয়ে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। মানুষের স্নেহ বা প্রেম স্বর্গীয় আদৌ নয়, নিতান্তই মাটির জিনিস, স্বার্থে পঙ্কিল পশুধর্ম্ম।

 তবু কিন্তু এত হীনতার মাঝেও উদার মানুষও আছে। মা দেশোদ্ধারী সন্তানকে হাসিমুখে মৃত্যুর মুখে তুলে দিয়েছে এ চিত্র আজকের বাঙলা দেশে বিরল নয়। তাই বলি নিঃস্বার্থ সংস্কার মুক্ত মানুষও সংসারে আছে, তারাই নির্লিপ্ত, তারাই যোগী, ভাল মন্দ ‘সু’ ও ‘কু’র সামাজিক মনগড়া মূল্য তাদের সমতা ও ঔদার্য্য নষ্ট করতে পারে না। নিজের দেহ

মনকে কেন্দ্র করেই জীবনে তারা বেঁচে নেই, একটা বড় আদর্শে প্রাণপত দেহগত স্বার্থকে ছাড়িয়ে উঠতে আসলে তারাই পেরেছে।

 যখন আমার শৈশবের সঙ্গিনীটি আমাকে নিয়ে এত দুঃখ পেল তখন আমি আর একজনকে সদ্য হারাবার ব্যথায় মুহ্যমান, মন প্রাণ দেহ আমার সে ব্যথায় মূক ও আড়ষ্ট হয়ে আছে। উপর্য্যুপরি দুটো আঘাত এসে এক হপ্তার মধ্যেই দু’টি ভালবাসার বস্তুকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল। আমার বাল্য সঙ্গিনীর জীবনে তখন নতুন মানুষ তার পূজা উপচার নিয়ে মুগ্ধ অনুরাগে সবে ঢুকছে। এই অবস্থায় একটা সকাল বেলার তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দু’জনে পেলুম নিষ্ঠুর আঘাত। আমার বোধ হয় কতকগুলো আড়ষ্ট কৃত্রিম মন গড়া ব্যবধান কষ্ট করে সেই কাঁটার বেড়ায় ঘা খেয়ে খেয়ে আমরা যতখানি ক্ষতবিক্ষত হই তার সবটুকু মানুষের কল্যাণের জন্যে অপরিহার্য্য নয়। মা বাপের কুল বড়, মান বড়, অর্থলিপ্সা বড়, মতামতের জিদ বড়, না কন্যার হৃদয়ের পরিপূর্ণ আনন্দ বড়? বাধা না পেলে যে প্রেম হয়তো সহজে ফেটে যেতে পারে বা অমূল্য চরিতার্থতা পেয়ে সারা জীবন স্থায়ী হতে পারে, আঘাত ও নির্য্যাতনে তা ফাটতেও পায় না, ফুটতেও পায় না, কাঁটা হয়ে শুধু রক্তপাত ঘটায় আর দেহ প্রাণের স্নায়ুকে আঘাতে আঘাতে ছিঁড়তে থাকে। কত যে হিষ্টিরিয়া, অপমৃত্যু, ব্যাধি, উন্মাদ রোগ ও স্নায়বিক পক্ষাঘাত তরুণদের জীবনে আসে জেদী মা বাপের এই জল্লাদ বৃত্তির পথ বেয়ে তা’র হিসাব নিলে অবাক হতে হয়। ধর্ম্ম ও পরমার্থ জীবনে কিন্তু দেখেছি প্রকৃত জ্ঞানী গুরু শিষ্যের কোন ক্ষুধাকেই এ ভাবে চাপে না, ভোগের দ্বারা ক্ষয় করিয়ে মুক্ত করে নেয়। এইখানে নৈতিক গুরু আর ঈশ্বর সাক্ষাৎকারী গুরুতে আকাশ পাতাল তফাৎ। আদর্শ সমাজও তার নিয়মগুলি বাঁধে বেশ সহজ করে, নমনীয় করে flexible করে, কারণ মানুষের মন প্রাণ ও দেহের সুখ এবং স্বাস্থ্যই তো সমাজের লক্ষ্য।

 এর পর আমি কলকেতা ছেড়ে চলে গেলুম, তার প্রথম কারণ এই আকস্মিক উদিত ঝড় ঝঞ্ঝা। তার দ্বিতীয় কারণ মেজদা’র প্রতিশ্রুতিভঙ্গ। তিনি আমাকে টাকা দেবার আশা দিয়ে দেশে পাঠালেন, কিন্তু পরে জানালেন তিনি টাকা দিতে অসমর্থ, কারণ তাঁর ছেলেপুলে হচ্ছে, তাদের শিক্ষা দীক্ষার ব্যয় আছে, ভাবী কন্যাগুলির বিবাহাদির উপায় করতে হবে। আমি কলকেতা ত্যাগ করে আমার শৈশবের লীলাভূমি দেওঘরে এই তীব্র নিরাশা ও ব্যথার স্মৃতি ভুলতে গেলুম। বাল্য ও কৈশোরের কত না সুখস্মৃতির স্বর্গ দেওঘর আমায় কোল পেতে নিল এবং তার অবাধ মাঠ, নীল পাহাড়, ঢেউখেলানে উঁচু নীচু পথের মায়াস্পর্শে সে ব্যথা জুড়িয়ে দিতে লাগল।