কঙ্কাবতী/দ্বিতীয় ভাগ/ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে


ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

পচাজল

কঙ্কাবতী ভাবিলেন,— “একে আপনার দুঃখে মরি, তাহার উপর এ আবার এক জ্বালা! যাহা হউক, ব্যাঙের কান্না একটু থামিয়াছে, এইবার আমি যাই।”

 ব্যাঙ যেরূপ বলিয়া দিলেন, কঙ্কাবতী সেই পথ দিয়া চলিলেন। চলিতে চলিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল, তবুও বন পার হইতে পারিলেন না। যখন সন্ধ্যা হইয়া গেল, তখন তিনি অতিশয় শ্রান্ত হইয়া পড়িলেন; আর চলিতে পারিলেন না। বনের মাঝখানে একখানি পাথরের উপর বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন।

 পাথরের উপর বসিয়া কঙ্কাবতী কাঁদিতেছেন, এমন সময় মৃদুমধুর তানে গুনগুন করিয়া কে তাহার কানে বলিল— “তোমরা কারা গা? তুমি কাদের মেয়ে গা?”

 কঙ্কাবতী এদিক-ওদিক চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন। অবশেষে দেখিতে পাইলেন যে, একটি অতি ক্ষুদ্র মশা তাহার কানে এই কথা বলিতেছে। মশাটিকে ভাল করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন যে, সেটি নিতান্ত বালিকা-মশা।

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,— “আমি মানুষের মেয়ে গো! আমার নাম কঙ্কাবতী!”

 মশা-বালিকা বলিলেন,— “মানুষের মেয়ে! আমাদের খাবার? বাবা যাদের রক্ত নিয়ে আসেন? খাই বটে, কিন্তু মানুষ কখনও দেখি নাই। আমরা ভদ্র মশা কিনা? তাই আমরা ওসব কথা জানি না! আমি কখনও মানুষ দেখি নাই। কিরূপ গাছে মানুষ হয়, তাহাও আমি জানি না। কৈ? দেখি দেখি। মানুষ আবার কিরূপ হয়!"

 এই বলিয়া মশা-বালিকা, কঙ্কাবতীর চারিদিকে উড়িয়া উড়িয়া দেখিতে লাগিলেন।

 ভাল করিয়া দেখিয়া, শেষে মশা বালিকা জিজ্ঞাসা করিলেন,—"তুই ধাড়ি মানুষ নও, বাচ্ছা মানুষ;—না?”

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,— “নিতান্ত ছেলেমানুষ নই, তবে এখনও লোকে আমাকে বালিকা বলে।”

 মশা-বালিকা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “তোমার নাম কি বলিলে?”

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,— “আমার নাম কঙ্কাবতী।”

 মশা-বালিকা বলিলেন,— “ভাল হইয়াছে। আমার নাম রক্তবতী। ছেলেবেলা রক্ত খাইয়া পেটটি আমার টুপটুপে হইয়া থাকিত, বাবা তাই আমার নাম রাখিয়াছেন,— রক্তবতী! আমাদের দুইজনের নামে নামে বেশ মিল হইয়াছে, রক্তবতী আর কঙ্কাবতী। এস ভাই! আমরা দুইজনে কিছু একটা পাতাই।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “আমি এখন বড় শোক পাইয়াছি, এখন ঘোর মনোদুঃখে আছি। আমি এখন পতিহারা সতী। তুমি বালিকা; সেসব কথা বুঝিতে পরিবে না। কিছু পাতাইয়া আহ্লাদ আমোদ করি, এখন আমার সে সময় নয়।”

 রক্তবতী বলিলেন,— “তুমি পতিহারা সতী! তার জন্য আর ভাবনা কি? বাবা বাড়ী আসুন, বাবাকে আমি বলিব। বাবা তোমার কত পতি আনিয়া দিবেন। এখন এস ভাই। কিছু একটা পাতাই। কি পাতাই বল দেখি? আমি পচাজল বড় ভালবাসি! যেখানে পচাজল থাকে, মনের সুখে আমি সেইখানে উড়িয়া বেড়াই,— পচাজলের ধারে উড়িয়া উড়িয়া আমি কত খেলা করি। তোমার সহিত আমি 'পচাজল' পাতাইব। তুমি আমার 'পচাজল', আমি তোমার 'পচাজল'! কেমন এখন মনের মতন হইয়াছে তো?”

 কঙ্কাবতী ভাবিলেন,— “ইহাদের সহিত তর্ক করা বৃথা। বুড়ো মিনসে ব্যাঙ, তারেই বড় বুঝাইয়া পারিলাম, তা এ তো একটা সামান্য বালিকা-মশা। ইহার এখনও জ্ঞান হয় নাই। ইহাদের যাহা ইচ্ছা হয় করুক, আর আমি কোনও কথা কহিব না।”

 কঙ্কাবতী দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন,— “আচ্ছা, তাহাই ভাল। আমি তোমার পচাজল, তুমি আমার পচাজল। হা জগদীশ্বর! হে হৃদয়দেবতা। তুমি কোথায়, আর আমি কোথায়! সেখানে তোমার কি দশা, আর এখানে আমার কি দশা।”

 এই কথা বলিয়া কঙ্কাবতী বারবার নিশ্বাস ফেলিতে লাগিলেন, আর কাঁদিতে লাগিলেন!

 পচাজলের দুঃখ দেখিয়া মশা-বালিকাটিরও দুঃখ হইল। মশা-বালিকাটি বুঝিতে পারেন না যে, তাঁর পচাজল এত কাঁদেন কেন? গুনগুন করিয়া কঙ্কাবতীর চারিদিকে তিনি উড়িয়া দেখিতে লাগিলেন।

 রক্তবতী বলিলেন,— “পচাজল! তোমার ভাই! আর দুটি পা কোথায় গেল? উপরের দুটি পা আছে, নীচের দুটি পা আছে, মাঝে দুটি পা কোথায় গেল? ভাঙ্গিয়া গিয়াছে বুঝি? ওঃ! সেইজন্য তুমি কাঁদিতেছ? তার আবার কান্না কি, পচাজল? খেলা করিতে করিতে আমারও একটি পা ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। এই দেখ, সে পা-টি পুনরায় গজাইতেছে। তোমারও পা সেইরূপ গজাইবে, চুপ কর,— কাঁদিও না।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “আমার পা ভাঙ্গিয়া যায় তোমাদের মত আমাদের পা নয়; খাবে কি দিয়া?”

 মশা-বালিকা কি বলিতেছে, কঙ্কাবতী তাহা প্রথম বুঝিতে পারিলেন না। পরে বুঝিলেন যে, সে শুঁড়ের কথা বলিতেছে। কঙ্কাবতী মনে করিলেন যে, “এ মশা-বালিকাটি নিতান্ত শিশু, এখনও ইহার কিছুমাত্র জ্ঞান হয় নাই।”

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,— “আমাদের নাক এইরূপ। তোমাদের নাক যেরূপ দীর্ঘ, আমাদের নাক সেরূপ লম্বা নয়। আমরা নাক দিয়া খাই না, আমরা মুখ দিয়া খাই।”

 রক্তবতী বলিলেন,— “আহা! তবে পচাজল! তোমার কি দূরদৃষ্ট যে, আমার মত তোমার নাক নয়। এই বড় নাকে আমাকে কেমন দেখায় দেখ দেখি। জলের উপর গিয়া আমি আমার মুখখানি দেখি, আর মনে মনে কত আহ্লাদ করি। মা বলেন যে, 'বড় হইলে আমার রক্তবতী একটি সাক্ষাৎ সুন্দরী হইবে।' তা ভাই পচাজল! তোমাকেও আমি সুন্দরী করিব। বাবা বাড়ী আসিলে বাবাকে বলিব, তিনি তোমার নাকটি টানিয়া বড় করিয়া দিবেন। তখন তোমাকে বেশ দেখাইবে।”

 কঙ্কাবতী ভাবিলেন,— “আবার সেই নাকের কথা! নাক নাক করিয়া ইহারা সব সারা হইয়া গেল। কাঁকড়া নাকের কথা বলিয়াছিল, ব্যাঙ বলিয়াছিল; এই মশা-বালিকাও সেই কথা বলিতেছে। তারপর সেই নাকেশ্বরীর নাক! উঃ! কি ভয়ানক!”  কঙ্কাবতী আরও ভাবিতে লাগিলেন,— “এই ঘোর দুঃখের সময় আমি বড় বিপদেই পড়িলাম। কোথায় তাড়াতাড়ি গ্রামে গিয়া চিকিৎসক আনিয়া স্বামীর প্রাণরক্ষা করিব; না,— ওখানে ব্যাঙ, এখানে মশা,— সকলে মিলিয়া আমাকে বিষম জ্বালাতনে ফেলিল। ব্যাঙের হাত এড়াইতে না এড়াইতে মশার হাতে পড়িলাম। মশার একরতি মেয়েটি তো এই রঙ্গ করিতেছেন; আবার ইহার বাপ বাড়ী আসিয়া যে কি রঙ্গ করিবেন, তা তো বলিতে পারি না!”

 রক্তবতী বলিলেন,— “ঐ যে পাতাটি দেখিতেছ, পচাজল! যার কোণটি কুঁকড়ে রহিয়াছে? উহার ভিতর আমাদের ঘর! আমার মা’রা উহার ভিতরে আছেন। আমার তিন মা। বাবা চরিতে গিয়াছেন, বাবা এখনি কত খাবার আনিবেন। যাই, মাদের বলিয়া আসি যে, আমার পচাজল আসিয়াছে।”

 এই বলিয়া রক্তবতী ঘরের দিকে উড়িয়া গেলেন। অল্পক্ষণ পরে রক্তবতী পুনরায় ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন,— “পচাজল! মা তোমাকে ডাকিতেছেন। উঠ, চল, আমার মা'র সঙ্গে দেখা করিবে।”

 কঙ্কাবতী করেন কি? ধীরে ধীরে উঠিলেন। মশাদের ঘর, সেই কোঁকড়ানো পাতাটির কাছে যাইলেন।

 একটি নবীনা মশানী কুঞ্চিত পত্রকোণ হইতে ঈষৎ মুখ বাড়াইয়া বলিলেন,— “হাঁ গা বাছা। তুমি আমার রক্তবতীর সহিত পচাজল পাতাইয়াছ? তা বেশ করিয়াছ। রক্তবতী আমাদের বড় আদরের মেয়ে। কর্ত্তার এত বিষয়-বৈভব, তা আমার এই রক্তবতীই তার একমাত্র সন্তান। তা, হাঁ গা বাছা! রক্তবতী, কি তোমার পতির কথা বলতেছিল? কি হইয়াছে?”

কঙ্কাবতী কাঁদিতে কঁদিতে বললেন,— “ওগো আমি বড় দুঃখিনী! আমি বড় শোক পাইয়াছি। পৃথিবী আমি অন্ধকার দেখিতেছি। যদি আমার পতিকে না পাই, তবে এ ছার প্রাণ আমি কিছুতেই রাখিব না। আমার পতিকে নাকেশ্বরী খাইয়াছে। পতিকে বাঁচাইবার নিমিত্ত আমি লোকালয়ে যাইতেছি। সেখান হইতে ভাল চিকিৎসক আনিব, আমার স্বামীকে দেখাইব। তাই আমি বিলম্ব করিতে পারি না। পুনরায় আমি এই রাত্রিতেই পথ চলিব। কিন্তু আমি পথ জানি না, অন্ধকারে আমি পথ দেখিতে পাইব না। তোমরা আমাকে একটু যদি পথ দেখাইয়া দাও, তাহা হইলে আমার বড় উপকার হয়।”

 মশানী বলিলেন,— “ছেলেমানুষ, বালিকা তুমি, তোমার কোনও জ্ঞান নাই। একে আমরা স্ত্রীলোক, যে-সে মশার স্ত্রী নই, গণ্যমান্য সন্ত্রান্ত মশার স্ত্রী; তাতে আমরা পর্দানশীন, কুলবধূ। আমাদিগের কি ঘরের বাহিরে যাইতে আছে, বাছা? না,—আমরা পথঘাট জানি? তুমি কাঁদিও না। কর্ত্তা বাড়ী আসুন, কর্ত্তাকে আমি ভাল করিয়া বলিব। তুমি এখন আমাদের কুটুম্ব,— রক্তবতীর পচাজল। যাহা ভাল হয়, তোমার জন্য কর্ত্তা অবশ্যই করিবেন। তুমি একটু অপেক্ষা কর।”

 কঙ্কাবতীর সহিত যিনি এতক্ষণ কথা কহিতেছিলেন, তিনি রক্তবতীর মা;—মশার ছোটরাণী। এইবার মশার বড়রাণী পাশ দিয়া একটু মুখ বাড়াইলেন।

 বড়-মশানী বলিলেন,— “ওটা একটা মানুষের ছানা বুঝি? আমি ওরে পুষিব। আমার ছেলেপিলে নাই; অনেকদিন ধরিয়া আমার মনে সাধ আছে যে, জীবজন্তু কিছু একটা পুষি। তা ভাল হইয়াছে, ঐ মানুষের ছানাটা এখানে আসিয়াছে, ওটাকে আমি পুষিব। কিছু বড় হইয়া গিয়াছে সত্য— তা যাই হউক, এখনও পোষ মানিবার সময় আছে। মানুষে, শুনিয়াছি মেষ, ছাগল, পায়রা, এইসব খায়, আবার সাধ করিয়া তাদের পোষে। এই মানুষের ছানাটাকে পুষিলে, ইহার উপর আমার মায়া পড়িবে। ইহাকে খাইতে তখন আর আমার ইচ্ছা হইবে না।”

 মেজ-মশানী আর একপাশ দিয়া উঁকি মারিয়া বলিলেন,— “দিদি! তোমার এক কথা! মানুষের ছানাটাকে যদি পুষিবে তো যাতে কাজে লাগে, এরূপ করিয়া পুষিয়া রাখ। মানুষে যেরূপ দুধের জন্য গরু পোষে, সেইরূপ করিয়া ইহাকে ঘরে পুষিয়া রাখ। কর্ত্তা কতদূর হইতে রক্ত লইয়া আসেন। আনিতে আনিতে রক্ত বাসি হইয়া যায়। মানুষ একটি ঘরে পোষা থাকিলে, যখন ইচ্ছা হইবে, তখন টাটকা রক্ত খাইতে পাইব।”

 রক্তবতীর মা বলিলেন,— “তোমাদের সব এক কথা। সব তাতেই তোমাদের প্রয়োজন। ছেলেমানুষ, রক্তবতী, মানুষের ছানাটিকে পথে কুড়াইয়া পাইয়াছে; পুষিতে কি খাইতে সে তোমাদিগকে দিবে কেন? ছেলের হাতের জিনিসটি তোমরা কাড়িয়া লইতে চাও! তোদের কিরূপ বিবেচনা বল দেখি? আসুন, আজ কর্ত্তা আসুন, তাহাকে সকল কথা বলিব। এ সংসারে আর আমি থাকিতে চাই না। আমাকে তিনি বাপের বাড়ী পাঠাইয়া দিন। আমার বাপ-ভাই বঁচিয়া থাকুক, আমার ভাবনা কিসের? আমি ছন্নছাড়া আটকুড়োদের মেয়ে নই। আমার চারিদিকে সব জাজ্জ্বল্যমান।”

 বড়-মশানী বলিলেন,— “আঃ, মর, ছুড়ির কথা শুন! বাপ-ভাইয়ের গরবে ওঁর মাটিতে পা পড়ে না। বাপ-ভাইয়ের মাথা খাও!”

 এইরূপে তিন পত্নীতে ধুন্ধুমার ঝগড়া বাধিয়া গেল। কঙ্কাবতী অবাক! কঙ্কাবতী মনে করিলেন,— “ভাল কথা! জীবজন্তুর মত ইহারা আমাকে পুষিতে চায়!"

 তিন সতীনে ঝগড়া ক্রমে একটু থামিল। মশা ঘরে আসিবেন, সেই প্রতীক্ষায় কঙ্কাবতী সেইখানে বসিয়া রহিলেন; অনেক বিলম্ব হইতে লাগিল, তবু মশা ফিরিলেন না।

 কঙ্কাবতী জিজ্ঞাসা করিলেন,— “হাঁ গা! তোমাদের কর্ত্তার এত বিলম্ব হইতেছে কেন?”

 ছোটরাণী বলিলেন,— “বাঁশ কাটছেন, ভার বাঁধছেন, রক্ত নিয়ে আসছেন পারা।”

 অর্থাৎ কিনা, কর্ত্তা হয়তো আজ অনেক রক্ত পাইয়াছেন। একেলা বহিয়া আনিতে পারিতেছেন না। তাই বাঁশ কাটিয়া ভার বাঁধিয়া মুটে করিয়া রক্ত আনিতেছেন। বিলম্ব সেইজন্য হইতেছে!

 কঙ্কাবতী আরও কিছুক্ষণ বসিয়া রহিলেন, তবুও মশা ঘরে ফিরিলেন না! কঙ্কাবতী পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “তোমাদের কর্ত্তা কখন আসিবেন গা? বড় যে বিলম্ব হইতেছে!”

 এবার মধ্যম মশানী উত্তর দিলেন,— “তুষের ধোঁ, কুলোর বাতাস, কোণ নিয়েছেন পারা।”

 অর্থাৎ কিনা— চরিবার নিমিত্ত কর্ত্তা হয়তো কোনও লোকের ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়াছেন। সে লোক তুষের অগ্নি করিয়া তাহার উপর সূর্পের বাতাস দিয়া, ঘর ধূমে পরিপূর্ণ করিয়াছে। কর্ত্তা গিয়া ঘরের এক কোণে লুক্কায়িত হইয়াছেন, বাহির হইতে পারিতেছেন না। সেইজন্য বিলম্ব হইতেছে।—একটু ধুম কমিলে বাহির হইয়া আসিবেন।

 কঙ্কাবতী আবার অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। তাহার পর পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কৈ গা। তিনি তো এখনও এলেন না! আর কত বিলম্ব হইবে?”

 এইবার বড়-মশানী উত্তর করিলেন,— “কটাস্ কামড়, চটাসচাপড়, মরে গিয়েছেন পারা।”

 অর্থাৎ কিনা,— কর্ত্তা হয়তো কোনও লোকের গায়ে বসিয়াছিলেন। গায়ে বসিয়া যেমন কটাস করিয়া কামড় মারিয়াছেন, আর আমনি সে লোকটি একটি চটাস করিয়া চাপড় মারিয়াছে। সেই চাপড়ে কর্ত্তা হয়তো মরিয়াছেন।

 “কর্ত্তা মরিয়া গিয়াছেন,”— এইরূপ অকল্যাণের কথা শুনিয়া ছোটরাণী ফোঁস করিয়া উঠিলেন! তিনি বলিলেন— “তোমার যতবড় মুখ, ততবড় কথা! আসুন কর্ত্তা! তাঁরে বলি, 'তুমি মরিয়া গেলে, তোমার বড়রাণীর হাড়ে বাতাস লাগে।' তোমার মুখে চূণ-কালি গিয়া, তোমার মাথা মুড়াইয়া, তোমার মাথায় ঘোল ঢালিয়া, তোমাকে এখনি বিদায় করিবেন।”