কুমার সম্ভব/তৃতীয় সর্গ

উইকিসংকলন থেকে

তৃতীয় সর্গ।


 কন্দর্প আসিবামাত্র ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু অন্যান্য সকল দেবতাকে পরিত্যাগ করিয়া এককালে তাঁহার উপর পতিত হইল। প্রভুরা প্রায়ই কার্য্যবিশেষের অনুরোধে আশ্রিত ব্যক্তিদিগের মধ্যে কখন এক জনকে কখন বা অন্য জনকে সমধিক সমাদর করিয়া থাকেন॥ ১॥

 ইন্দ্র তাঁহাকে আপন সিংহাসনের অতি নিকটে বসিবার স্থান দিলেন, তাহাতে কন্দর্প প্রভুর এতাদৃশ পরম অনুগ্রহ শিরোধার্য্য করিয়া গোপনে ইন্দ্রকে বলিতে আরম্ভ করিলেন॥ ২॥

 কোন্‌ ব্যক্তির কি ক্ষমতা তাহা আপনার অবিদিত নাই। অতএব ত্রিভূবনে আমাকে কি করিতে হইবেক আজ্ঞা করুণ। আপনি স্মরণ করাতেই অনুগৃহীত হইয়াছি, এখন কোন কার্য্যের আদেশ করিলে সেই অনুগ্রহ আরো অধিক হইল জ্ঞান করিব॥ ৩॥

 বলুন ত, কে আপনার পদ পাইবার অভিলাষে বহুকাল ধরিয়া তপস্যা করিয়া আপনার ঈর্ষ্যা সঞ্চার করিয়া দিয়াছে। আমি এখনি এই ধনুকে বাণ যোজনাপূর্ব্বক তাহাকে মদীয় আজ্ঞা বহন করিতে নিযুক্ত করিতেছি॥ ৪॥

 কে বলুন ত আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংসার যন্ত্রণা এড়াইবার জন্য মুক্তি পথের পথিক হইয়াছে? যখন বিলাসিনীরা পর্য্যায়ক্রমে দুই ভ্রূকে চঞ্চল করিয়া রমণীয় কটাক্ষ বিক্ষেপ করিবে, যিনিই কেন হউন না, সেই কটাক্ষ পাশে তাঁহাকে অবশ্য বদ্ধ থাকিতে হইবেক॥ ৫॥

 সাক্ষাৎ শুক্রাচার্য্যও যদি কাহাকেও নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করাইয়া থাকেন, তথাপি বিষয়ানুরাগ নামক আমার যে গুপ্তচর আছে, তাহাকে আমি তাহার নিকট পাঠাইতে পারি, এবং জলপ্রবাহ যেরূপ নদীর দুই তীর ভগ্ন করে, তেমনি ধর্ম্ম ও অর্থ নষ্ট করিতে পারি। বলুন আপনার এরূপ শক্র কে আছে যে আমি তাহাকে উক্ত প্রকারে নিপাত করি॥ ৬॥

 কোন্‌ কামিনী নিজ সৌন্দর্য্যগুণে আপনার চঞ্চল মনে প্রবেশ করিয়াছে, অথচ পতিব্রতাধর্ম্ম পালন করে বলিয়া আপনার বশতাপন্ন হইতেছে না? যদি বলেন, ত আমার অস্ত্রপ্রভাবে সে লজ্জা পরিত্যাগপূর্ব্বক নিজে আসিয়া আপনার কণ্ঠ ধারণ করিবে এখন॥ ৭॥

 হে বিলাসিন্‌! বলুন ত কোন্‌ রমণী অন্য নারীর সহিত আপনার প্রসক্তির কথা অবগত হইয়া এত দূর কুপিত হইয়াছে, যে আপনি পায়ে ধরিলেও প্রসন্ন হয় নাই। এখনি আমি তাহার শরীর মদন সন্তাপে এরূপ জর্জরীভূত করিয়া তূলিব, যে পল্লবের শয্যায় শয়ন করা ব্যতীত তাহার গত্যন্তর থাকিবে না॥ ৮॥

 হে বীর। ক্ষান্ত হউন, আপনার বজ্র বিশ্রাম করুক আমার যে বাণগুলি আছে, তাহা দ্বারাই আমি যে অসুরকে বলিবেন তাহাকেই এরূপ বীর্য্যহীন ও নিস্তেজ করিয়া তুলিব যে স্ত্রীলোকেরও কোপপ্রযুক্ত অধরস্ফুরণ দর্শন করিয়া সে ভয়ে কম্পমান হইবেক॥ ৯॥

 যদিও পুষ্পই আমার অস্ত্র, তথাপি আপনার প্রসাদে এই বসন্তকে একমাত্র সহায় পাইয়া, মনে করিলে সেই পিনাকপাণি মহাদেবের পর্য্যন্ত চিত্ত চঞ্চল করিতে পারি, অন্যান্য বীরের কথা আর কি বলিব?॥ ১০॥

 কন্দর্পের এই বাক্য শেষ হইলে ইন্দ্র ঊরুদেশ হইতে এক খানি চরণ অবতারণপূর্ব্বক সিংহাসনের পাদপীঠে সংস্থাপন করিলেন, সেই পাদপীঠ যেন তাহাতে বিশেষ অনুগৃহীত হইয় গেল। আর তিনি যে কার্য্য সিদ্ধির জন্য স্থির সংকল্প হইয়াছিলেন, তাহা সিদ্ধ করিবার জন্য কন্দর্পের উৎসাহ ও ব্যগ্রতা দেখিয়া তাঁহাকে কহিলেন॥ ১১॥

 সখে, যাহা বলিলে, সকলি তুমি পার। যেহেতু দুই খানি অস্ত্রের উপর আমার নির্ভর, এক বজ্র আর তুমি। কিন্তু বজ্রের ক্ষমতা নাই যে তপোবীর্য্য সম্পন্ন মহাপুরুষদিগকে আঘাত করে। কিন্তু তুমি আমার যে অস্ত্র, তাহ সর্ব্বত্র প্রয়োগ হয়, কার্য্যসিদ্ধিও করে॥ ১২॥

 তোমার বলবীর্য্য অবগত আছি, এনিমিত্ত তোমাকে আপনার ন্যায় জ্ঞান করিয়া এক গুরুতর কর্ম্মে নিয়োগ করিব। দেখ নারায়ণ দেখিলেন যে অনন্ত সর্প পৃথিবীর ভার ধারণ করিতে সক্ষম তবে তিনি উহাকে আপন দেহ বহন করিবার ভার দিয়া ক্ষীর সমুদ্রে শয়ন করেন॥ ১৩॥

 আর মহাদেবের প্রতি বাণ প্রয়োগের কথা উত্থাপন করিয়া, আমাদিগের সংকল্পিত কর্ম্মের ভার তোমার এক প্রকার গ্রহণ করা হইয়াছে। তোমার অবগতির নিমিত্ত কহিতেছি যে যজ্ঞই দেবতাদিগের আহার, তাঁহাদিগের বিপক্ষবর্গ এখন প্রভাবশালী হইয়া উহাদিগের সেই বৃত্তি প্রায় লোপ করিয়ছে, একারণ উঁহারা মহাদেবের প্রতি তুমি বাণ প্রয়োগ কর ইহা অভিলাষ করিতেছেন॥ ১৪॥

 ফলিতার্থ এই যে, এই যে দেবতাগণ দেখিতেছ, ইঁহারা শত্রুপরাভবের উদ্দেশে মহাদেবের ঔরসজাত এক জন সেনাপতি পাইবার কামনা করিতেছেন। কিন্তু মহাদেব এখন পরমাত্মার ধ্যানে নিমগ্ন, নিরন্তর মন্ত্র জপ করিতেই ব্যগ্র, এ অবস্থায় তোমার বাণ ব্যতীত আর কিছুতেই তাহাকে অস্মদীয় কার্য্য-সিদ্ধি বিষয়ে আয়ত্ত করা যাইতে পরিবে না॥ ১৫॥

 হিমালয়ের পরম পুণ্যবতী যে কন্যা আছেন, যাহাতে তাঁহার প্রতি তপোনিষ্ঠ মহাদেবের অভিলাষ সঞ্চার হয়, সেই চেষ্টা তোমাকে করিতে হইবেক, কারণ নারীজাতীর মধ্যে কেবল তিনিই মহাদেবের বীর্য্যপতন সন্ধারণ করিতে সক্ষম, ইহা ব্রহ্মা কহিয়াছেন॥ ১৬॥

 তার অপ্সরাগণের মুখে আমি শুনিয়াছি যে, পিতার আদেশ মতে তাঁহার নন্দিনী হিমালয়ের অধিত্যকবাসী তপোনিরত মহাদেবের শুশ্রূষা করিয়া থাকেন। একথা অপ্রত্যয় করিতে নাই, কারণ যে অপ্সরাগণ এই সংবাদ দিয়াছে, তাহারা আমারি প্রেরিত॥ ১৭॥

 অতএব শুভ যাত্রা কর, দেবতাদিগের কার্য্য উদ্ধার কর। এই যে কার্য্য, ইহা সম্পন্ন হইতে অন্যান্য অনেক কারণের সহকারিতা আবশ্যক, কিন্তু প্রধান কারণ তুমি, তোমার অপেক্ষায় রহিয়াছে; ধান্যের অঙ্কুর যেমন জল বিনা উদয় হয় না, তেমনি এই কার্য্য তোমা ব্যতিরেকে সম্পন্ন হইবেক না॥ ১৮॥

 মহাদেবই এখন দেবতাদিগের জয়লাভের একমাত্র উপায় স্বরূপ, আর তাঁহার প্রতি অস্ত্র প্রয়োগ কেবল তুমিই করিতে পার, অতএব তুমি কি কৃতী পুরুষ! অসাধারণ কর্ম্ম যদি নিতান্ত সামান্যও হয়, তথাপি তাহা যে সম্পন্ন করে, তাহার যশ হয়, কিন্তু এরূপ গুরুতর অথচ অনন্যসাধ্য কর্ম্ম করিলে তোমার যে কি কীর্ত্তি হইবেক, তাহা আর বলিয়া কি জানাইব?॥ ১৯॥

 এই যে দেবতারা, ইঁহারা তোমার নিকট উপযাচক, যে কার্য্য করিবে, তাহাতে ত্রিভুবনের উপকার হইবে। ইহা সম্পন্ন করিবে ধনুকের দ্বারা, অথচ রক্তপাত বা নিষ্ঠরতা করিতে হইবেক না। কি চমৎকার! আজি তোমার এই পরাক্রমের অধিকারী হইতে কাহার না ইচ্ছা হয়?॥ ২০॥

 আর বসন্ত ত তোমার চিরসঙ্গী আছেনই, উঁহাকে না বলিলেও উনি এই কর্ম্মে তোমার সহায় হইবেন। ‘ওহে বায়ু যাইয়া অগ্নির সাহায্য কর’ এ কথা বায়ুকে আর বলিয়া দিতে হয় না।॥ ২১॥

 কামদেব ইন্দ্রের এই আজ্ঞা যেন প্রভুর প্রসাদীয় মালার ন্যায় শিরোধার্য্য করিয়া বিদায় হইলেন। ইন্দ্রের করতল ঐরাবতকে উৎসাহদানার্থ চপেটাঘাত করিয়া করিয়া কর্কশ হইয়াছিল, তদ্দ্বারা তিনি গমনোদ্যত কামদেবের দেহ স্পর্শ করিয়া অনুগ্রহ প্রদর্শন করিলেন॥ ২২॥

 তাঁহার প্রিয়বন্ধু বসন্ত এবং গৃহিণী রতি নানা অস্বস্তি আশঙ্কা করিতে করিতে পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন, কামদেব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, প্রাণ থাকুক আর যাউক, কার্য্য সিদ্ধ করিতেই হইবে। এই ভাবে তিনি হিমালয়স্থিত মহাদেবের তপোবনে উপনীত হইলেন॥ ২৩॥

 তথায় কামদেবের অহঙ্কার স্বরূপ স্বয়ং বসন্ত আবির্ভূত হইয়া তপোনিষ্ঠ ঋষিগণের চিত্তের একাগ্রতা নষ্ট করিবার তাবৎ উদ্যোগ আরম্ভ করিয়া আপন মহিমা প্রকটন করিলেন॥ ২৪॥

 উষ্ণকিরণধারী সূর্য্যদেব, কুবের যে দিকের অধিপতি, সেই দিকের প্রতি গমনোদ্যত হইয়া অসময়ে দক্ষিণ দিক্‌কে পরিত্যাগ করিলেন, তাহাতে দক্ষিণ দিক্‌ অকারণে পরিত্যক্ত অবলার ন্যায় দীর্ঘনিশ্বাস তুল্য মলয়বায়ু আপন মুখ হইতে বহমান করিয়া দিলেন॥ ২৫॥

 অশোকতরু অবিলম্বে পল্লব ও পুষ্প প্রসব করিতে লাগিল, এমন কি উহার স্কন্ধদেশে পর্য্যন্ত পুষ্পের উদয় হইল। আর রমণীরা যে নূপুরধ্বনি করিয়া উহাকে তাড়না করিবে, তাহার অপেক্ষা রহিল না॥ ২৬॥

 নবীন আম্রমুকুল কন্দর্পের বাণ, উভয় পার্শ্বে সমুৎপন্ন নবপল্লব সেই বাণের পত্র আর বসন্ত কামদেবের বাণ নির্ম্মাতা, তিনি উল্লিখিত বাণ নির্ম্মাণ শেষ করিয়া তাহাতে যেন কামদেবের নামের অক্ষর স্বরূপ ভ্রমরপঙ্‌ক্তি বসাইয়া দিলেন॥ ২৭॥

 কর্ণিকার পুষ্পের বর্ণ অতি চমৎকার, কিন্তু গন্ধ না থাকাতে দুঃখের বিষয় হইল। বিধাতার কেমনি আগ্রহ যে কোন বস্তুকে সর্ব্বপ্রকারে সুসম্পন্ন করেন না॥ ২৮॥

 বনস্থলীরা যেন বসন্তের নায়িকা, বসন্তের সহিত সমাগম হইয়া উহাদের অঙ্গে যেন নখক্ষত হইয়াছিল, সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত না হওয়াতে নবীন চন্দ্রকলার ন্যায় বক্রাকৃতি অতি রক্তবর্ণ পলাশপুষ্পগুলি সেই নখ ক্ষতের ন্যায় প্রতীয়মান হইতে লাগিল॥ ২৯॥

 যেমন কোন রমণী অঞ্জনের তিলক মুখে রচনা করিয়া অধরে অলক্তকরস লেপন করে, তদ্রূপ বসন্তলক্ষ্মী তিলক নামক পুষ্পের উপর ভ্রমরের পঙ্‌ক্তি বিন্যাস পূর্ব্বক প্রভাত সূর্য্যের ন্যায় পরম সুন্দর বর্ণের দ্বারা চূতপল্লব রূপ অধরোষ্ঠ অলঙ্কত করিলেন॥ ৩০॥

 পিয়াল বৃক্ষের মঞ্জরীতে যে পরাগ হয়, তাহার কণা হরিণদিগের চক্ষে পতিত হওয়াতে উহার অন্ধ প্রায় ও বাসন্তিক মদে উন্মত্তপ্রায় হইয়া বনভূমির উপর বায়ুর বিপরীত দিকে ধাবমান হইতে লাগিল, তাহাতে বৃক্ষচ্যুত শুষ্ক পত্ররাশি হইতে মর্ম্মর ধ্বনি উদয় হইল॥ ৩১॥

 নবপ্রসূত আম্র মঞ্জর ভক্ষণ দ্বারা স্বর পরিষ্কার হইলে নর কোকিল মধুর স্বরে ডাকিতে লাগিল। তাহা যেন কামদেবের উপদেশ বাক্য স্বরূপ, এবং শ্রবণ করিয়া মানিনীরা মান পরিত্যাগ করিলেন॥ ৩২॥

 শীতকাল অতীত হওয়াতে কিন্নরীদিগের অধরের চর্ম্ম নির্ম্মল হইয়া গেল, তাঁহাদিগের মুখের কান্তি কুঙ্কুম লেপনের অভাবে পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গেল, তদুপরিস্থিত বিশেষকের (গণ্ডদেশে কি অন্যান্য অঙ্গে যে লতা পাতা আঁকিত) উপর সম্প্রতি বিন্দু বিন্দু ঘর্ম্ম-বারি উদয় হইল॥ ৩৩॥

 মহাদেবের তপোবনবাসী ঋষিগণ এই অরূপ অকালে বসন্তের আবির্ভাব অবলোকন করিয়া অতি কষ্টে অন্তঃকরণের চাঞ্চল্য নিবারণ করিতে সমর্থ হইলন, অতি কষ্টে মনকে বশে রাখিতে পারক হইলেন॥ ৩৪॥

 কামদেব রতিকে সহায় করিয়া এবং পুষ্পময় শরাসন সজ্জীভূত করিয়া সেই স্থানে উপনীত হইলে যাবতীয় প্রাণি জাতির স্ত্রী পুরুষগণ কার্য্যের দ্বারা প্রেমের পরাকাষ্ঠা পরম্পরের প্রতি প্রদর্শন করিতে লাগিল॥ ৩৫॥

 ভ্রমর ভ্রমরীর মধুপানের জন্য পুষ্পই যেন পাত্র, এক্ষণে তাহারা উভয়ে একটী কুসুমকে পাত্র স্বরূপ করিয়া মধুপানে প্রবৃত্ত হইল। অগ্রে ভ্রমরী, পশ্চাৎ তাহার প্রসাদ ভ্রমর পান করিল। আর কৃষ্ণসার হরিণ যখন প্রেম ভরে শৃঙ্গ দ্বারা হরিণীর গাত্র কণ্ডুয়ন করিয়া দিতে লাগিল, তখন প্রিয় স্পর্শের আনন্দে হরিণীর দুই চক্ষু নিমীলিত হইল॥ ৩৬॥

 কোন স্থানে হস্তিনী প্রেমভরে পদ্ম-পরাগ-সুরভীকৃত সরোবর-বারি হস্তীকে গণ্ডূষ করিয়া দিতে লাগিল। স্থানান্তরে চক্র বাক এক খণ্ড মৃণালের অর্দ্ধেক আপনি খাইয়া অবশিষ্টাংশ প্রেয়সীকে প্রদান করিল॥ ৩৭॥

 কিন্নর কিন্নরীতে গান গাইতেছিল, তৎকালে কিন্নরীর মুখে বিন্দু বিন্দু ঘর্ম্ম হওয়াতে তত্রত্য পত্রাবলী-রচনা কিঞ্চিৎ স্ফীত হইয়া উঠিল, পুষ্পের মদিরা পান করিয়া দুই চক্ষু ঘূর্ণিত হওয়াতে মুখের পরম সুন্দর শোভা হইল এবং কিন্নর সেই মুখে মুহুর্মুহু চুম্বন করিতে লাগিল॥ ৩৮॥

 এমন কি বসন্তসমুত্থাপিত প্রণয়রস উদ্ভিজ্জদিগকেও স্পর্শ করিল, দেখ লতারা বধূর মত অবনত শাখাবাহু দ্বারা বৃক্ষদিগকে বেষ্টনপূর্ব্বক আলিঙ্গন করিল, তাহাদিগের স্থূল স্থূল পুষ্পস্তবক স্তনের ন্যায় জ্ঞান হইতে লাগিল, তাহাদিগের পল্লব স্বরূপ ওষ্ঠ কম্পিত হওয়াতে অতি চমৎকার দেখাইতে লাগিল॥ ৩৯॥

 এতাদৃশ রমণীয় কালে আবার অপ্সরারা গান করিতে লাগিল; তথাপি মহাদেব ধ্যানেই মগ্ন রছিলেন। কারণ জিতেন্দ্রিয় পুরুষদিগের মনের একাগ্রতা কোন রূপ বিঘ্ন দ্বারা নষ্ট হইবার নহে॥ ৪০॥

 সেই সময়ে নন্দী নিকুঞ্জের দ্বারদেশে অবস্থিত ছিলেন, সুবর্ণময় একটী যষ্টির উপর তাঁহার বামহস্তের প্রকোষ্ঠ সংস্থাপিত ছিল। তিনি আপন মুখে একটী অঙ্গুলি সংস্থাপনপূর্ব্বক প্রমথদিগকে সংকেত করিয়া দিলেন যে, সাবধান, যেন কোন চপলতা প্রকাশ না হয়॥ ৪১॥

 নন্দী এই রূপ শাসন করাতে সেই সমস্ত তপোবন যেন চিত্রপটে লিখিত বস্তুর ন্যায় সুস্থির হইয়া রহিল, তখন বৃক্ষেরা নিশ্চল হইল, ভ্রমরেরা গান ত্যাগ করিল, পক্ষীরা নীরব হইল এবং হরিণদিগের লীলা খেলা স্থগিত হইয়া গেল॥ ৪২॥

 যেমন যাত্রাকালে লোকে সম্মুখবর্ত্তী শুক্র-তারাকে পরিহার করিয়া যায়, তদ্রূপ কামদেব নন্দীর দৃষ্টিপাত পরিহার পূর্ব্বক চতুঃপার্শ্বে পরস্পর সম্মিলিত নমেরু শাখা পরিবেষ্টিত মহাদেবের ধ্যানগৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন॥ ৪৩॥

 তথায় হতভাগ্য মৃত্যুমুখে প্রবিষ্টপ্রায় সেই কন্দর্প তপোনিষ্ঠ মহাদেবকে দেখিলেন যে দেবদারু বৃক্ষের তলস্থিত একটী বেদির উপর এক খানি ব্যাঘ্র চর্ম্ম বিস্তারিত আছে, মহাদেব তদুপরি উপবিষ্ট আছেন॥ ৪৪॥

 তখন সেই প্রভু বীরাসন নামক অবস্থিতিতে অবস্থিত ছিলেন, এবং তাঁহার শরীরের উর্দ্ধভাগ সুস্থির হইয়া অবস্থিত ছিল, সমগ্র দেহ সরল ভাবে সম্যক্‌রূপে বিস্তারিত হইয়াছিল, দুই স্কন্ধ বিশেষরূপে অবনত হইয়াছিল, আর ক্রোড়দেশে দুই করতল চিত্‌ করিয়া সংস্থাপন করাতে জ্ঞান হইতেছিল যেন তথায় রক্তপদ্ম প্রস্ফুটিত হইয়াছে॥ ৪৫॥

 তাঁহার জটাজূট সর্প দ্বারা ঊর্দ্ধভাবে বন্ধন করা হইয়াছিল, রুদ্রাক্ষ বীজময়ী জপমালা দুই ফের করিয়া কর্ণে রাখা হইয়াছিল, আর কৃষ্ণশার হরিণের চর্ম্ম তাঁহার উত্তরীয়রূপে একটী গ্রন্থি দ্বারা শরীরে সংলগ্ন করা হইয়াছিল এবং উহার স্বাভাবিক শ্যামবর্ণ নীলবর্ণ কণ্ঠের কান্তি সংস্পর্শে আরো নীল হইয়া উঠিয়াছিল॥ ৪৬॥

 তৎকালে তিনি তিন চক্ষে নাসিকার প্রতি লক্ষ্য করিয়া উপবিষ্ট ছিলেন, উহাদিগের ভয়ঙ্করাকৃতি তিন তারা স্থিরভাবে অবস্থিত ছিল এবং বাহির হইতে অল্প অল্প দৃষ্ট হইতেছিল, তৎকালে সেই তিন চক্ষু ভ্রূভঙ্গি রচনা বিষয়ে নিতান্ত পরাঙ্মুখ থাকাতে উহাদিগের লোম-রাজি নিম্পন্দ ভাবে অবস্থিত ছিল॥ ৪৭॥

 তখন শরীরমধ্যবর্ত্তী বায়ুগণকে রোধ করিয়া রাখিয়া ছিলেন, একারণ তাঁহাকে জ্ঞান হইতেছিল, যে বৃষ্টির আড়ম্বর নাই এতাদৃশ একখানি মেঘ, অথবা তরঙ্গ উদয় হয় নাই এরূপ জলনিধি, অথবা বায়ু শূন্য স্থানবর্ত্তী নিশ্চল-শিখাধারী একটী প্রদীপ॥ ৪৮॥

 তাঁহার মস্তকে চন্দ্রকলা বিরাজমান, কিন্তু ললাটস্থিত তাঁহার যে তৃতীয় লোচন, উহার মধ্য দিয়া মস্তকের অভ্যন্তর হইতে সমুত্থিত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আলোক-রেখা নির্গত হইতেছিল, ঐ আলোকের সংস্পর্শে মৃণালসূত্র অপেক্ষাও সমধিক সুকুমার চন্দ্রজ্যোতি মলিন হইয়া যাইতেছিল॥ ৪৯॥

 তখন তাঁহার মন দেহের নব দ্বারের প্রতি ধাবিত না, কিন্তু ধ্যানপ্রভাবে হৃৎপুণ্ডরীকে স্থিরীকৃত করা হইয়াছিল। আর যিনি পণ্ডিতদিগের নিকট অবিনাশী বলিয়া পরিচিত, সেই পরমাত্মাকে নিজ আত্মার মধ্যে সাক্ষাৎকার করিতেছিলেন॥ ৫০॥

 এতাদৃশ দুর্দ্ধর্ষমূর্ত্তি মহাদেবকে দর্শন করিয়া কামদেবের তাঁহার প্রতি বাণ-প্রয়োগ-চেষ্টা তিরোহিত হইল, ভয়ে তাঁহার হস্ত অবসন্ন হইয়া পড়িল এবং উহা হইতে ধনুর্বাণ পড়িয়া গিয়াছে ইহাও তিনি জানিতে পারিলেন না॥ ৫১॥

 এই সময়ে দুই সখীকে সঙ্গে লইয়া পর্ব্বতরাজ-নন্দিনী উপস্থিত হইলেন তাঁহার সৌন্দর্য্য দর্শনে কামদেবের নির্বাণপ্রায় বলবীর্য্য যেন পুনর্ব্বার উত্তেজিত হইয়া উঠিল॥ ৫২॥

 পার্ব্বতী তৎকালে বাসন্তিক পুষ্প দ্বারা কতকগুলি অলঙ্কার প্রস্তুত করিয়া পরিয়াছিলেন, অশোক পুষ্পে পদ্মরাগ মণির কার্য্য নির্ব্বাহ হইয়াছিল, কর্ণিকার সুবর্ণের ন্যায় হইয়াছিল, আর সিন্ধুবার পুষ্পই মুক্তাভূষণরূপে পরিণত হইয়াছিল॥ ৫৩॥

 তিনি স্তনভরে ঈষৎ অবনত ছিলেন, প্রভাত কালীন আতপের ন্যায় আরক্ত বস্ত্র পরিধান করিয়াছিলেন অতএব জ্ঞান হইতেছিল যে স্থূল স্থূল পুষ্পস্তবকের ভার প্রযুক্ত নম্রীভূত একটী লতাই যেন চলিয়া যাইতেছে॥ ৫৪॥

 বকুলমালকে তিনি চন্দ্রহার করিয়া পরিয়াছিলেন, তাহা নিতম্বদেশ হইতে মুহুর্মুহু খসিয়া পড়িতেছিল, এবং মুহুর্মুহু ধারণ করিতে ছিলেন। তাঁহার নিতম্ববর্ত্তিনী সেই বকুলমালা দর্শন করিলে জ্ঞান হইত যেন কামদেব আপন ধনুকের আর একটা গুণ (ছিলে), উপযুক্ত স্থান বিবেচনা করিয়া ঐ স্থানে, গচ্ছিত রাখিয়াছেন॥ ৫৫॥

 একটী ভ্রমর তাঁহার সুরভি নিশ্বাসে আকৃষ্ট হইয়া বিম্ব ফল তুল্য অধরের সন্নিধানে ভ্রমণ করিতেছিল, তাহার দংশনভয়ে তিনি চঞ্চল দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে করিতে হস্তস্থিত পদ্ম দ্বারা তাহাকে নিবারণ করিতেছিলেন॥ ৫৬॥

 দেখিলে নিজ কান্তা রতি পর্য্যন্ত লজ্জা পান, এরূপ দোষ-স্পর্শ-শূন্যা সৌন্দর্য্য-শালিনী সেই বালাকে দর্শন করিয়া কামদেবের মনে আশা সঞ্চার হইল যে মহাদেব যতই জিতেন্দ্রিয় হউন ইঁহার সাহায্যে তাঁহার প্রতি বাণপ্রয়োগ পূর্ব্বক নিজ কার্য্যসিদ্ধি করিলেও করিতে পারি॥ ৫৭॥

 যে মুহুর্ত্তে পার্ব্বতী আপন ভাবীপতি মহাদেবের দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন, অমনি প্রভু অন্তঃকরণ মধ্যে পরমাত্মা নামক সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতিঃ-পদার্থ দর্শন করিয়া ধ্যানে বিরাম দিলেন॥ ৫৮॥

 পরে মহাদেব এতক্ষণ যে নিশ্বাসবায়ু রুদ্ধ করিয়া অবস্থিত ছিলেন, শনৈঃ শনৈঃ উহার মোচন করিতে লাগিলেন, এবং সেই প্রযুক্ত তাঁহার শরীরভারের আধিক্য হইবে জানিয়া সর্পরাজ বাসুকি প্রাণপণ চেষ্টায় আপনার ফণা গুলি উন্নত করিয়া পৃথিবীর সেই ভাগ অতিকষ্টে ধারণ করিয়া রহিলেন। এইরূপে শিবের পূর্ব্বকৃত বীরাসন রচনা পরিত্যাগ করা হইল॥ ৫৯॥

 নন্দী প্রণামপূর্ব্বক তাঁহাকে জানাইলেন যে সেবা করিবার নিমিত্ত পার্বতী, অসিয়াছেন, প্রভু ভ্রূ ভঙ্গি দ্বারা তাঁহার আসিবার অনুমতি করিলে পার্ব্বতীকে গৃহ মধ্যে আনয়ন করিলেন॥ ৬০॥

 পার্ব্বতীর দুই সখী স্বহস্তে যে সকল বাসন্তিক পুষ্প চয়ন ও পল্লব ভঙ্গ করিয়াছিল, সে সমস্ত রাশীকৃত করিয়া, প্রণাম পূর্ব্বক শিবের চরণসন্নিধানে ছড়াইয়া দিল॥ ৬১॥

 পার্ব্বতীও মহাদেবকে প্রণাম করিলেন, প্রণাম কালে মস্তক অবনত করাতে নীলবর্ণ কেশকলাপের মধ্যে শোভমান নবীন কণিকার পুষ্প এবং কর্ণস্থিত নব পল্লব ভূমিতলে পতিত হইল॥ ৬২॥

 মহাদেব আশীর্ব্বাদ করিলেন, তুমি যেন এমন স্বামী প্রাপ্ত হও, যিনি তোমার প্রতি একমনে আসক্ত থাকেন। এই আশীর্ব্বাদ পরে সফলও হইয়াছিল। কারণ অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মহাপুরুষদিগের উক্তি কখন মিথ্যা হইবার নহে যাহাই বলেন, তাহাই সম্পন্ন হয়॥ ৬৩॥

 কামদেবের নিতান্ত আগ্রহ যে শিবের লোচনবহ্নিতে পতঙ্গের ন্যায় দগ্ধ হইবেন, অতএব যখন মহাদেব পার্ব্বতীকে আশীর্ব্বাদ করিতে ছিলেন, সেই সময়ে কখন বাণ মারি ইহাই ভাবিতে ছিলেন, এবং শিবের প্রতি লক্ষ্য করিয়া ধনুকের গুণ বারংবার স্পর্শ করিতেছিলেন॥ ৬৪॥

 মন্দাকিনী হইতে পদ্ম চয়ন পূর্ব্বক উহার বীজ সূর্য্যাতপে শোষিত করিয়া পার্ব্বতী এক ছড়া জপমালা প্রস্তুত করিয়া ছিলেন। তিনি এখন সেই মালা আপনার রক্তবর্ণ করতলে সংস্থাপন পূর্ব্বক শিবকে দিবার নিমিত্ত তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত করিলেন॥ ৬৫॥

 মহাদেব কাহারো প্রার্থনা অগ্রাহ্য করিতে অক্ষম, অতএব পার্ব্বতী পাছে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েন এই ভাবিয়া সেই মালা যেইমাত্র আপনার হস্তে গ্রহণ করিবার উপক্রম করিতেছেন, অমনি কামদেব আপনার পুষ্পধনুকে সম্মোহন নামক অব্যর্থ বাণ যোজনা করিলেন॥ ৬৬॥

 চন্দ্রোদয় হইবার সময় জলনিধি যেরূপ কিঞ্চিৎ চঞ্চল হয়, তদ্রূপ মহাদেবের চিত্তের কিঞ্চিৎ চাঞ্চল্য হইল। তিনি বিম্বফলতুল্য অধরোষ্ঠশালী পার্ব্বতীর মুখ সতৃষ্ণ নয়নে মুহর্মুহু দেখিতে লাগিলেন॥ ৬৭॥

 পার্ব্বতীরে সর্ব্বশরীর রোমাঞ্চিত হওয়াতে তাঁহার অন্তঃকরণের প্রেমভাব প্রকাশ পাইতে লাগিল, তাঁহার দুই চক্ষু অবনত, মুখ খানি কিঞ্চিৎ বক্র হইয়া পরম সুন্দর শোভা ধারণ করিল, তিনি এই ভাবে মহাদেবের সমক্ষে দাঁড়াইয়া রহিলেন॥ ৬৮॥

 পরে মহাদেব জিতেন্দ্রিয়তা গুণে অন্তঃকরণের চাঞ্চল্য বিশেষরূপে নিবারণ পূর্ব্বক আপনার অন্তঃকরণ চঞ্চল হইল কেন তাহা জানিবার জন্য চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন॥ ৬৯॥

 তিনি দেখিলেন, কামদেব তাঁহার প্রতি বাণপ্রয়োগ করিবার উদ্‌যোগ করিয়া দাঁড়াইয়াছেন, ধনুগুর্ণধারী তাঁহার মুষ্টি দক্ষিণ চক্ষুর প্রান্তভাগ পর্য্যন্ত সমানীত হইয়াছে, দুই স্কন্ধ অবনত, বাম চরণ কিঞ্চিৎ বক্রীকৃত, এবং ধনুক যত দূর সম্ভব আকৃষ্ট হওয়াতে মণ্ডলাকৃতি ধারণ করিয়াছে॥ ৭০॥

 তপস্যার প্রতি আক্রমণ করাতে মহাদেব তৎক্ষণাৎ কোপে প্রজ্বলিত হইলেন, তখন ভ্রূকুটির আবির্ভাবে তাঁহার মুখ অতি ঘোর আকার ধারণ করিল আর হঠাৎ তাঁহার ললাট-স্থিত তৃতীয় চক্ষু হইতে জাজ্জ্ব্যল্যমান-শিখাশালী অগ্নি বহির্গত হইয়া আসিল॥ ৭১॥

 প্রভু, ক্রোধ করিবেন না, এই বাক্য আকাশস্থিত দেবতাদিগের মুখ হইতে নির্গত হইয়া শেষ না হইতে হইতেই মহাদেবের নয়ন সমুদ্ভূত সেই হুতাশন কামদেবকে ভস্মাবশেষ করিয়া ফেলিল॥ ৭২॥

 এই দুর্বিষহ দৈবদুর্বিপাকে রতি তৎক্ষণাৎ মূর্চ্ছিত হইলেন, তাঁহার ইন্দ্রিয়বর্গ অচৈতন্য হইয়া রহিল, সুতরাং কিয়ৎকালের নিমিত্ত স্বামীর বিনাশের বিষয় জানিতে পারিলেন না, মূর্চ্ছা যেন তাঁহার উপকার করিল॥ ৭৩॥

 বজ্রাঘাতে যেমন বনের প্রকাণ্ড বৃক্ষ ভগ্ন হয়, তদ্রূপ, তপোনিষ্ঠ মহাদেব তপস্যার বিঘ্নভূত সেই কামদেবের নিপাত সাধন করিয়া স্থির করিলেন, নারীজাতির নিকটে থাকা আর নয়, অতএব তৎক্ষণাৎ প্রমথবর্গের সহিত তথা হইতে অন্তর্ধান হইলেন॥ ৭৪॥

 পার্ব্বতীও দেখিলেন যে তাঁহার পিতার উন্নত অভিলাষ সিদ্ধ হইল না, তাঁহার শরীরের সৌন্দর্য্যও অতি অকিঞ্চিৎকর জ্ঞান হইল, আর দুই সখীর সমক্ষে এপ্রকার অপমান হওয়াতে আরো লজ্জিত হইলেন, তাঁহার মনের প্রফুল্লতা নষ্ট হইল, তিনি অতি কষ্টে গৃহাভিমুখে গমন করিলেন॥ ৭৫॥

 সেই সময়ে তাঁহার পিতা পর্ব্বতরাজ তথায় উপস্থিত হইলেন, তিনি দেখিলেন ভয়ে পার্ব্বতীর দুই চক্ষু নিমীলিত হইয়া আসিতেছে, দেখিয়া পিতার হৃদয়ে অনুকম্পা উপস্থিত হইল, তিনি কন্যাকে ক্রোড়ে ধারণ করিয়া দন্তদ্বয়সংলগ্নকমলিনীধারী দিগ্‌গজের ন্যায় দীর্ঘ দীর্ঘ চরণবিন্যাস করিতে করিতে গৃহে যাইবার পথে পথে চলিয়া গেলেন॥ ৭৬॥