বিষয়বস্তুতে চলুন

গ্রাম্য উপাখ্যান/তারাচাঁদ ঘোষ

উইকিসংকলন থেকে

তারাচাঁদ ঘোষ।

 বাদল গ্রামে নারায়ণ ঘোষের বংশের পরেই জমীদার ঘোষেরা প্রসিদ্ধ। এই বংশে তারাচাঁদ ঘোষ ও হরচন্দ্র ঘোষ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা গ্রামে বিশেষ খ্যাতি লাভ করিতে পারেন নাই। তাঁহারা কোন অসাধারণ সৎকর্ম্মও করেন নাই, কোন অসাধারণ দুষ্কর্ম্মও করেন নাই। সচরাচর ভদ্রলোকে যেমন জন্মে, বাঁচে ও মরে সেইরূপ তাঁহারা জন্মিয়াছিলেন, বাঁচিয়াছিলেন ও মরিয়াছিলেন। ইংরাজী কবি কনিংহ্যাম (Cunningham) জনৈক মানুষ্যের জীবন বৃত্তান্ত নিম্নোদ্ধৃত সংক্ষেপ পদ্যে লিখিয়াছিলেন;—

“That he was born it can not be denied.
Ate, drank and slept, talked politics
and died.”
তিনি এ সুখ দুঃখময় অবনিমণ্ডলে জন্মিয়া
ছিলেন কে না মানিবে?
তিনি খাইয়া, পিইয়া, শুইয়া, রাজা উজির
মারিয়া মরিলেন, কে না মানিবে?

 তারাচাঁদ ঘোষের দুই পুত্র, লোকনাথ ঘোষ ও দীননাথ ঘোষ। লোকনাথ ঘোষ বিদ্বান সচ্চরিত্র ও উপার্জ্জনশীল হইয়া উঠিয়াছিলেন, কিন্তু অকালে কালগ্রাসে পতিত হয়েন। লোকে বলে, “মুগে শীঘ্র পোকা ধরে।” কোন আরব্য কবি বলিয়াছেন, “মনুষ্য মরিবার সময় শমন তাহাদিগের নামের ফর্দ্দ দেখেন এবং তাহাদিগের মধ্যে যাহারা রত্ন বিশেষ আপনার ভাণ্ডারের গৌরব বৃদ্ধি করিবার জন্য তাহাদিগকে অগ্রে টানিয়া লয়েন।” দীননাথ ঘোষ অনেক দিন মথুরার সরকারী ডাক্তারী কার্য্য করিয়াছিলেন। তিনি সিপাহী বিদ্রোহের সময় ঐ পদে অভিষিক্ত ছিলেন। ঐ বিদ্রোহের সময় তিনি আমাদিগকে এক পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহাতে এই কথাগুলি ছিল, “আমি পত্র লিখিতে লিখিতে শুনিতেছি যে সিপাহীরা আসিয়া সাহেব দিগকে মারিয়া ফেলিয়া বাজার লুটপাট আরম্ভ করিয়াছে। আমার যে কি ভয় হইতেছে তাহা লিখিতে পারি না।” এই পত্র আমরা ছয় মাস পরে প্রাপ্ত হই। এই পত্র যে কত জায়গায় ঘুরিয়াছিল কত জায়গায় আটকিয়া ছিল তাহা বলা যায় না। তৎপরে আমাদের হাতে আসিয়া পড়িল। এমন কাষ্ঠ-প্রাণ পত্র আমরা কখন দেখি নাই। তাহা কোন মিউজিয়মে অর্পণ করিব বলিয়া আমরা রাখিয়া দিয়াছি।