বিষয়বস্তুতে চলুন

চীন ভ্রমণ/ব্রহ্মদেশ

উইকিসংকলন থেকে

ব্রহ্মদেশ।

ইতিহাস ও সামাজিক রীতি-নীতি।

 ইতিহাস পড়িয়া দেখা যায়, প্রায় সকল পুরাতন দেশের অধিবাসীদেরই ধারণা যে, তাহারা দেবতা হইতে উৎপন্ন, আর তাহাদের দেশের ব্রাজবংশ স্বয়ং ঈশ্বরের অংশ-সম্ভুত। জাপানীদের এইরূপ বিশ্বাস, —পুরাকালে দুই দেবযোনি-ভাই-ভগিনী—স্বৰ্গ হইতে সেতুপথে জলময়ী পৃথিবীর জলকল্লোল দেখিতে আসিয়াছিলেন। ভগিনীর মুক্তার মালা ছিড়িয়া জলে পড়িল, আর জাপান দ্বীপ সৃষ্টি হইল। সেই দ্বীপে ভাই-ভগিনী স্ত্রী-পুরুষ-ভাবে রহিয়া গেলেন। ইহা হইতেই জাপানের রাজবংশের আরম্ভ। চীনেদেরও কতকটা এইরূপ ধারণা। সে কথা চীন প্রবন্ধে বলিব। কিন্তু ব্রহ্মদেশের রাজবংশের উৎপত্তি এরূপ দেবযোনি হইতে নহে। তাহদের শাক্যবংশ ও শাক্যসিংহ লইয়াই সব।

 বুদ্ধদেব জন্মিবার বহু শতাব্দী পূর্ব্বে শাক্যবংশের কোনও রাজা আসিয়া ব্রহ্মদেশে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে বুদ্ধদেবের পাচগাছি চুল লইয়াই রেঙ্গুনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। বৌদ্ধশাস্ত্রের মতানুসারে, হিন্দুশাস্ত্রোক্ত ব্রহ্মা হইতেই তাহারা সকলের উৎপত্তির কথা বিশ্বাস করে। তাই তাহারা নিজেরা ও ‘ব্রহ্মা’ বা 'বর্ম্মা’ নাম লইয়াছে।

 ব্রহ্মদেশের লোক বুদ্ধগতপ্রাণ। হিন্দুস্থান তাহদের চক্ষে বড়ই পবিত্র স্থান বলিয়া বিবেচিত,—তাহাদের দেবতার লীলাভূমি, তাহাদের মহা তীর্থধাম। অনেকে বুদ্ধগয়া, রাজগৃহ প্রভৃতি স্থানে তীর্থ করিতে আসে। রেঙ্গুনের যে বড় প্যাগোডার কথা বলিয়াছি, তাহা বুদ্ধদেবের যাইয়া তপস্যারত বুদ্ধের নিকট হইতে ঐ পাঁচগাছি চুল চাহিয়া আনিয়াছিল। ঐ মন্দির-গঠন হইতেই রেঙ্গুনের উৎপত্তি। পরে অষ্টাদশ শতাব্দীতে 'আলাম্প্রা' নামক এক জন রাজা রেঙ্গুনের আসল ভিত্তি স্থাপন করেন।

 আলাম্প্রা এক জন সামান্য অবস্থার লোক ছিলেন। বনে বনে শিকার করিয়া তিনি জীবনযাপন করিতেন, পরে অনেক লোকের নেতা হইয়া যুদ্ধ-বিগ্রহ আরম্ভ করেন; যেখানে অভিযান করেন, সেই খানেই জয়ী হয়েন। তখন ব্রহ্মদেশ ছোট ছোট নানা রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সেখানকার রাজারা সর্ব্বদাই পরস্পর কলহ করিতেন। ক্রমে পেগু, আরাকাণ, টেনিসেরিম্-সবগুলিই তিনি জয় করিলেন; শেষে শ্যামেও যুদ্ধযাত্রা করিলেন। তথাকার রাজধানী তাঁহার হস্তগত হইলে, সেই স্থানেই তিনি রোগে আক্রান্ত হইয়া প্রাণত্যাগ করেন। এই আলাম্প্রা হইতেই বর্ম্মার শেষ রাজবংশের সূত্রপাত। এ সব বেশী দিনের কথা নয়, প্রায় পলাশী যুদ্ধের সমসাময়িক; অর্থাৎ,—১৭৫০ খৃষ্টাব্দে ঘটে।

 তখন আসাম, মণিপুর ইত্যাদি রাজ্য বর্ম্মা রাজ্যেরই ক্ষমতাধীন ছিল। বর্ম্মার রাজগণ এই পথ দিয়া আসিয়া ব্রিটিশ রাজ্য লুঠ-তরাজ করিতেন, নিষেধ করিলে কর্ণপাতও করিতেন না। এই সূত্রেই প্রথম বর্ম্মা যুদ্ধ ঘটে। ক্যাম্বেল সাহেব সসৈন্যে ইরাবতীর ভিতর প্রবেশ করেন। একটিমাত্র তোপের আওয়াজেই রেঙ্গুন অধিকৃত হয়। সেখানকার কেল্লাগুলি শেগুন কাষ্ঠে নির্ম্মিত ও চন্দন কাষ্ঠের কারুকার্য্যে খচিত। ভঙ্গুর হইলেও দেখিতে অতি পরিপাটী ছিল। রেঙ্গুন অধিকার করিয়া তিনি চারি দিকে সৈন্য পাঠাইয়া দেশ জয় করিতে লাগিলেন, এবং অতি অল্প আয়াসেই সে কার্য্য সম্পন্ন হইতে লাগিল। তখন অনন্যোপায় হইয়া ব্রহ্মরাজ আমেরিকান্ পাদরী জডসনকে সন্ধির প্রস্তাব করিতে পাঠাইলেন। এই পাদরী সাহেবের কথা পরে বলিব। ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দে ইয়ান্দাবু বা যান্দাবু নগরে সন্ধি স্থাপিত হয়। ইংরাজ আরাকাণ, টেনিসেরিম ও আসাম দখল করিলেন, এবং যুদ্ধের খেসারত স্বরূপ এক কোটি টাকা পাওনা ধার্য্য করিলেন। এই অবধিই রেঙ্গুন ইংরাজের করতলগত রহিল।

 ইহার অল্পদিন পরেই লর্ড ড্যালহাউসীর আমলে দ্বিতীয় বর্ম্মা-যুদ্ধ ঘোষিত হয়। ইংরাজ বণিকদের উপর ব্রহ্মরাজ অত্যাচার করিয়াছেন, -ইহাই যুদ্ধের কারণ। এবারও প্রায় বিনা যুদ্ধেই নিম্ন ব্রহ্ম বা পেগু ইংরাজ দখল করিয়া লইলেন।

 আবার ইহার কিছু দিন পরে, লর্ড ডাফরিণের সময়ে তৃতীয় বর্ম্মা-যুদ্ধ ঘটে। সেই হইতেই বর্ম্মার স্বাধীনতা একেবারে অস্তমিত হইয়াছে। আমার সে সকল ঘটনা বেশ মনে আছে—তখন আমি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিবার উদ্যোগ করিতেছি। রাজা মণ্ডলমীনে মরিলে তাহার ছেলে খীব রাজা হন। জারজ বলিয়া অনেকে তাঁহার সিংহাসনঅধিকারে আপত্তি করেন। থীব ইংরাজী জানিতেন, এবং সর্ব্বজনপ্রিয় ছিলেন। রাজ্যের প্রধানা রাজ্ঞী, তাঁহার কন্যা ‘সুপেয়ালাটে'র সহিত থীবর বিবাহ দিয়া, তাঁহাকেই সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন। শুনা যায়, রাজ্যারোহণ করিয়াই বিদ্রোহের ভয়ে থীব রাজবংশের ভ্রাতা-ভগিনী প্রভৃতি অনেক আত্মীয়-স্বজনকে গুপ্তভাবে হত্যা করেন। সকল অসভ্য দেশেই ওরূপ হয়; দিল্লীর সম্রাট আওরঙ্গজীবও ওরূপ করিয়াছিলেন। কিছু দিন রাজত্ব করিবার পর আবার আর এক গোল উঠিল যে, শেগুন-কাষ্ঠ-ব্যবসায়ী ‘বর্ম্মা-বম্বে ট্ৰেডিং কোম্পানী’র উপর খীৰ অত্যাচার করিয়াছেন। ট্রান্সভালে উইট্‌ল্যাণ্ডারদের উপর অযথা ব্যবহার উপলক্ষ করিয়াই বুয়র্ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। পরে আবার এক ———থিব ফরাসী জাতির সহিত বন্ধুত্বস্থাপন করিবার চেষ্টা করিতেছেন। রুষিয়ার সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন করিতেছে, এই আছিলাতেই তিব্বত-অভিযানের আবশ্যক হইল। এইরূপ নিত্য
ব্রহ্মরাজ “থীব” ও তাঁহার মহিষী “সুপেয়ালাট”।
নিত্যই ইংরেজ তরফ হইতে নুতন নুতন দোষারোপ হইতে লাগিল। তখন উত্তর-বর্ম্মায় নূতন আবিষ্কৃত হীরার খনির কথা শুনিয়া অনেক ইংরাজ-বণিকই তাহা হস্তগত করিবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। রাণ্ড এবং কিম্বার্লির স্বর্ণ ও হীরক খনির লোভই দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ-তন্ত্র বিলুপ্ত করিবার প্রধান কারণ। দেশ লইব ইচ্ছা করিলে, কারণের আর অভাব হয় না। এই সকল সত্য মিথ্যা নানা কারণে, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে, শেষ বর্ম্মা-যুদ্ধ ঘটে। রেঙ্গুন দখল করিতে একটী তোপের আওয়াজ করিতে হইয়াছিল, মান্দালেতে তাহাও আবশ্যক হয় নাই। বাঙ্গালা জয় করিতে যেমন সত্তর জন মাত্র পাঠান সৈন্যই পর্য্যাপ্ত হইয়াছিল, এখানেও সেইরূপ ইংরাজী-সৈন্য উপস্থিত হইবামাত্রই বর্ম্মা জয় হইল। থীব ও তাহার মহিষীকে বন্দী করিয়া মান্দ্রাজে পাঠান হইল। ইংরাজগণ সমস্ত বর্ম্মা অধিকার করিলেন। এখন এই রাজপত্ত্বিবারের অর্থাভাবে যার-পর-নাই দুরবস্থা হইতেছে।

 তারপর হইতেই ব্রহ্মদেশের শুভাশুভ ইংরাজের হস্তেই ন্যস্ত। ক্রমেই দেশের উন্নতি, লোকবৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হইতেছে। প্রথম প্রথম ভারতের রাজস্ব হইতে ব্রহ্মের শাসনব্যয়নির্ব্বাহের জন্য অর্থ যোগাইতে হইতে বটে, কিন্তু আজকাল রাজ্যের আর্থিক উন্নতি হওয়াতে, তাহা আর দিতে হয় না, বরং কিছু উদ্বৃত্ত থাকে।

 বর্ম্মা ইংরাজের হাতেই স্বাধীনতা হারাইয়াছে। মুসলমান জাতি কখনও বর্ম্মা জয় করেন নাই। তাহা হইলে বর্ম্মাতেও ভারতবর্ষের মত অবরোধপ্রথা নিশ্চয়ই প্রচলিত হইত। মুসলমান-বিজয় কিন্তু ভারতবর্ষ হইতে এই বর্ম্মা ছাড়াইয়া মালয় উপকূলে গিয়া পড়িয়াছিল। সেই কারণেই মালয়ের অধিবাসীরা মুসলমান। এই সকল দেখিয়া মনে হয়, যদিও বর্ম্মা-যুদ্ধের সময় বর্ম্মাকে নিতান্ত হীনবল দেখা গিয়াছে, কিন্তু তাহার বহু পূর্ব্বে বর্ম্মা এতটা হীনবল ছিল না। ভিতর দিয়া তাহারা বর্ম্মায় আসিয়া বসবাস করিয়াছে। যে সকল আদিমনিবাসীদের পরাস্ত করিয়া তাহারা বর্ম্মা দেশে বাস করে, সেরূপ অনেক জাতি এখনও বর্ম্মায় দেখা যায়। তাহার মধ্যে 'কারণ' জাতি একটি। ইহাদের অধিকাংশই খ্রীষ্টানধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছে, এবং সেই কারণেই সকল বিষয়েই ইহারা উন্নত।

 বর্ম্মার পুরুষগণ অতিশয় আলস্য-পরবশ। কেবল চুরট থাইয়া, গল্প-গুজব ও আমোদ-আহলাদ করিয়াই সময় কাটায়। ধান বর্ম্মার একটি প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য, -এত বড় ধানের আড়ৎ আর কোথাও নাই। প্রতি বৎসর প্রায় সাড়ে তের কোটি টাকার ধান এখান হইতে রপ্তানী হয়। কিন্তু অনেক চাষা সুদখোর মাদ্রাজী শ্রেষ্ঠী কর্তৃক বড়ই উৎপীড়িত। অতিরিক্ত আমোদ-আহলাদের জন্য বেশী সুদে টাকা ধার করিয়া তাহারা বড়ই বিপন্ন। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, বর্ম্মায় প্রায় শতকরা ৩০ জন চীনে আসিয়া বাস করিয়াছে এবং তাহারা বর্ম্মা রমণী বিবাহ করিয়া এক প্রকার সঙ্কর জাতি উৎপন্ন করিয়াছে। শুনা যায়, ইহাতে বর্ম্মার অনেক মঙ্গল ঘটিয়াছে। তাহাদের অপত্যগণ পিতার মত পরিশ্রমী, -বর্ম্মা দেশের লোকের মত অলস নাহে। কিন্তু অনেক চীনেম্যান্ দেশে ফিরিয়া যাইবার সময় ছেলেগুলিকে লইয়া যায়, মেয়েদের রাখিয়া যায়। মেয়েরা বর্ম্মার মত স্ত্রীস্বাধীনতার দেশ হইতে চীন দেশে গিয়া সুখী হয় না। তাহার ফলে এই দাঁড়াইয়াছে, এরূপ মেয়ের সংখ্যা এত বেশী যে, কোনও বিদেশী বর্ম্মায় যাইলে তাহারা উপপত্নী হইয়া থাকিবার জন্য দলে দলে তাহার নিকট আসিতে থাকে। বিদেশী লোক একা বর্ম্মা দেশে বেশী দিন থাকিলে তাহার আর নিস্তার নাই।

 বর্ম্মা দেশের লোক ভাল কারিগর। ঘরে ঘরে রেশমের কাপড় বোনা হয়,—কিন্তু বাড়িতে ছাড়া তাহারা সে মোটা রেশমের কাপড় ব্যবহার করে না। যে দেশে রেশমের কাপড়ই সাধারণের পরিধেয়, সে দেশে সাজ-সজ্জায় স্পৃহা কত বেশী তা সহজেই বুঝা যায়। মিহি রেশমের কাপড় চীন হইতে আমদানী হয়,—তার দামও অনেক। সাজ-সজ্জার বিষয়ে তাহাদের এত বাড়াবাড়ি যে, কাপড় একবার কাচাইলে আর সে কাপড় তাহারা বাহির হইবার কালে পরিবে না,—কেবল বাড়ীতেই পরিবে।

 বর্ম্মা দেশে কাঠের কাজ ও গালার কাজ অতি পরিপাটী হয়। আমি কতকগুলি গালা-পালিস-করা বড় বড় কাঠের ও ঝুড়ির থালা ও গেলাস আনিয়াছি। এক একখানির বারো আনা মাত্র দাম। যে দেখে, সেই সুখ্যাতি করে,—সেগুলি এত সুন্দর।

 বর্ম্মাবাসীর বিবাহ-প্রথা আমাদের বিবাহ-প্রথা হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। বাল্য-বিবাহের তো নামগন্ধও নাই। ওসব অঞ্চলের কোনও দেশেই সমাজের দারুণ অনিষ্টকর বাল্য-বিবাহ-প্রথা নাই। দিন-ক্ষণ দেখিবার ভাৱ সর্ব্বত্রই আমাদের দেশের মত দৈবজ্ঞের উপর ন্যস্ত; তবে বর-ক’নেই পরস্পরকে বাছিয়া লইয়া থাকে। চীন বা জাপানে কিন্তু এরূপ প্রথা নাই। সে সকল দেশে আমাদের দেশের মত বাপ-মা যাহাকে পছন্দ করিয়া দিবেন, তাহার উপর কাহারও কথা নাই। আমাদের দেশের মত বর্ম্মায় বর ক’নের বাড়ী গিয়া বিবাহ করেন। চীন ও জাপানে ক’নেকে সমারোহের সহিত বরের বাড়ী যাইয়া বিবাহ করিতে হয়। বর্ম্মায় স্ত্রীলোকের ক্ষমতা এতই বেশী যে, বিবাহের পর জামাতাকে অন্ততঃ কিছুদিন শ্বশুরঘর করিতেই হয়। ধূলাপায়েই কেহ কেহ দুই তিন বৎসর থাকেন। কেহ কেহ বা শ্বশুর-বংশের উপাধি লইয়া চিরকালই পোষ্যপুত্রের মত শ্বশুর-ঘরে থাকিয়া যান। এক জন জাপানীর নিকট শুনিয়াছি, জাপানেও এরূপ  এ সকল দেশের মধ্যে কোনও দেশেই বিবাহ ধর্ম্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নহে, -সামাজিক চুক্তিমাত্র। ইচ্ছা করিলেই চুক্তি ভাঙ্গিয়া যায়। এ বিষয়ে স্ত্রীর স্বাধীনতা বর্ম্মা দেশে অত্যন্ত অধিক। শুনিয়াছি, কোনও কোনও স্থলে স্বামীর বালিসের নীচে পান-সুপারি গুঁজিয়া দিয়া চলিয়া যাইলেই হইল! পঞ্চায়ৎগণ বিবাহভঙ্গ-বিরোধের মীমাংসা করিয়া দেয়। স্ত্রীলোকের এত স্বাধীনতাসত্ত্বেও বর্ম্মায় বহুবিবাহ যে কিরূপে প্রচলিত হইল, তাহা বুঝা যায় না।

 বিবাহের বড় একটা বাচ বিচার নাই; যেমন সহজে হয়, তেমনি শীঘ্র ভাঙ্গিয়া যায়। স্ত্রী ও পুরুষ দুই জনে কিছুকাল একত্রে থাকিলেই বিবাহ সাব্যস্ত হইল। স্ত্রীলোকদের যার-তার সহিত থাকা চলে। স্বদেশী বিদেশী যার সঙ্গেই থাকুক না কেন, একনিষ্ঠ হইয়া থাকিলে তাহাতে সমাজে তাহদের মর্যাদার কোন ও হানি হয় না। চঞ্চলস্বভাব হইলে অবশ্য আলাহিদা কথা।

 ভূতে পাওয়া ও ভূত ঝাড়ানীয় বিশ্বাস সকল জাতিতেই আছে। প্রসবকালে বর্ম্মা দেশের স্ত্রীলোকের যন্ত্রণার আর অবধি থাকে না। কুসংস্কারপূর্ণ দেশসমূহে যেমন হইয়া থাকে, নীচ শ্রেণীর দাইদের হাতে সে সব ভার ন্যস্ত। পুরুষদের ইহাতে কোন কথা কহিবার অধিকার নাই। এ বিষয়ে পরিবর্ত্তনের স্রোত পৌছিতে দেরি লাগে। প্রসূতিকে আঁতুড় ঘরের চতুর্দ্দিকে অগ্নিবেষ্টিত করিয়া রাখা হয়। উদ্দেশ্য, গরমে থাকাও বটে, আবার ভূত তাড়ানও বটে! সে অসহ্য তাপে কি যন্ত্রণায় সময় কাটে, তা বুঝান যায় না। সাতদিন এইরূপ থাকিবার পর অষ্টম দিবসে তাহাকে ‘ভোপার বাথ’ অর্থাৎ গরম বাষ্পের ‘ভাপরা' দিবার পরেই ঠাণ্ডা জলে স্নান করান হয়। তাহাতে যে কত শিশু ও কত প্রসূতি মারা যায় তাহার ইয়ত্তা নাই। আমাদের দেশের মত এইরূপ নীচ শ্রেণীর দাইএর প্রথা বর্ম্মায় এখনও অন্ধভাবে অনুসৃত হইতেছে।  মাছ ভাতই ব্রহ্ম, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশের প্রধান খাদ্য। বর্ম্মা দেশে পচা মাছ চাটনির মত ব্যবহৃত হয়; তাহাকে 'নাপ্পি’ বলে। 'নাপ্পি' বর্ম্মানেরা অতি উপাদেয় সামগ্রী বলিয়া বোধ করে। রাঁধা ভাত ও তরকারী ফেরি করিয়া বিক্রয় করে। আমাদের দেশের মত রাঁধা খাদ্যদ্রব্য অস্পৃশ্য 'সকড়ি’ বলিয়া বিবেচিত হয় না। বর্ম্মাবাসীরা সচরাচর মাটিতে উপু হইয়া বসিয়া হাত দিয়া আহার করে। চীনের প্রথা,—টেবিলে বসিয়া ‘চপষ্টিক’ দিয়া আহার করা। আহারান্তে ব্রহ্মবাসীর আমাদের মত হস্তমুখ প্রক্ষালন করে। আহারের সহিত পানীয় দ্রব্যের ব্যবস্থা ওসব দেশের কোথাও নাই। সকলেই সময়ান্তরে চা খায়। দুগ্ধ-পান কেহ করে না। চুরট বা তদ্রূপ কোন না কোন দ্রব্য সর্ব্বত্রই ব্যবহৃত হয়। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই ধূমপান করে। সাধারণ যে চুরট ব্যাবহার করিতে দেখা যায়, সে চুরট খুব মোটা ও বড়। এত মোটা যে মুখে ধরিতে কষ্ট হয়। বর্ম্মা ও মালয়ের লোক পান-সুপারি খায়। আফিং-সেবন জাপান ছাড়া অল্পবিস্তর সকল দেশেই প্রচলিত।

 স্ত্রীলোকের চুল রাখা সকল দেশরই প্রথা, তবে মঙ্গোলিয়ান জাতির মত অত চুলের আদর আর কোন জাতিই জানে না। তাদের যেমন গোঁফ-দাড়ি প্রভৃতির স্থানে চুল বড় জন্মে না, তেমন মাথায় চুল খুব লম্বা ও সোজা হয়। পৃথিবীর আর কোন জাতিই ইহাদের মত কেশের এত পারিপাট্য করে না। ইহারা চুলের সজ্জা লইয়াই সারাদিন ব্যস্ত।

 বর্ম্মা দেশের পুরুষরাও বড় বড় চুল রাখে। তাহারা সব চুলগুলি ৱক্ষা করে। চীনেরা মাথার মাঝে লম্বা বিনানী রাখে মাত্র।

 স্ত্রীলোকের পায়ে গহনা নাই, যা কিছু আছে কানে, হাতে;  ঢলঢ’লে পোষাক পছন্দ। কাপড়চোপড়েই তাহাদের সজ্জার বেশীভাগ দৃষ্টি। স্তনের উপর অবধি আঁটিয়া লুঙ্গি পরে বলিয়া, স্বাধীনভাবে চলা ফেরার ব্যাঘাত হয়। সেই কারণেই বর্ম্মা জাতির স্ত্রীলোকদের চলা ও নাচা সরল ভাবে হয় না; -কতকটা আড়ষ্ট-আড়ষ্ট ভাব।

 বর্ম্মার লোক অলস, এবং আমোদ ও সজ্জাপ্রিয় একথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। ভবিষ্যতের ভাবনা ইহারা ভাবে না। সেই জন্য অনেক লোকই ঋণগ্রস্ত। নাচ, গান, যাত্রা ইত্যাদি প্রায়ই হইয়া থাকে। ভেড়ার লড়াই, মুরগীর লড়াই, নৌকার বা’চ-খেলা সচরাচরই দেখা যায়। ব্রহ্মদেশ ধনধান্যে পূর্ণ। আশ্রয়স্থান নির্ম্মাণের জন্য শেগুন কাঠ ও আহারের জন্য চাউল অনায়াসে অপর্য্যপ্ত জন্মে। আহার ও আশ্রয়স্থান,—এই দুইটি জীবনধারণের প্রধান আবশ্যক-দ্রব্যের এত সহজে যোগাড় হয় বলিয়াই তাহারা এত অলস হইয়া পড়িয়াছে। গ্রাসাচ্ছদন সুলভ হইলে সকল দেশেই এরূপ ঘটিয়া থাকে,—লোকেরা অলস ও অকর্ম্মণা হইয়া পড়ে। ভারতবর্ষেও এরূপ ঘটিয়াছে। তাই দেশ রত্নপ্রসু হইলেও বর্ম্মাবাসী এখন আর তত লাভবান্ নয়। লাভের বেশীর ভাগই বিদেশী ব্যবসাদার ও সুদখোরের হাতে যায়।

 ব্রহ্মদেশে সচরাচর শবদেহ গোর দেয়, এবং ফুঙ্গীদের শবদেহ দাহ করা হয়। কখন কখনও বা কিছু দিন গোর দিয়া রাখার পর সেই শবদেহ পুনরায় উঠাইয়া বহু সমারোহের সহিত দাহ করা হয়। আমাদের দেশে যেমন অশৌচ-পালন-রূপ একটি নিয়ম পালন করিতে সকলেই বাধ্য, ও সকল দেশেও সেইরূপ। আশৌচ কালে আহার ও পরিধেয় সম্বন্ধে বাঁধা নিয়ম আছে। আত্মীয় বুঝিয়া অশৌঁচের দিন বাড়ে ও কমে; সে সময়ে নিরামিষ ভোজনই কর্ত্তব্য। স্ত্রী মরিলে অশৌচ কম, স্বামী মরিলে সর্ব্বাপেক্ষা বেশী। বাপ-মায়ের জন্য অশৌচ স্বামীর অশৌচের মত; তিন দিন নহে। আমাদের দেশে যেমন অশৌচ অবস্থায় সাদা ধুতি পরিধেয়, ও অঞ্চলে সর্ব্বত্র সেইরূপ সাদা রঙ্গই শোক প্রকাশের চিহ্ন বলিয়া বিবেচিত। ইউরোপে কিন্তু সাদা রঙ শোকাব্যজ্ঞক নহে; কালো রঙই শোকব্যজ্ঞক।

 চাউল ও শেগুন কাঠই বর্ম্মার প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য। ইহা ছাড়া হীরার খনি ও বর্ম্মা-অয়েল নামক কেরোসিন-জাতীয় এক প্রকার খনিজ তৈলও পাওয়া যায়। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, এত থাকিতেও বর্ম্মার লোক গরীব। আলস্য ও অবিবেচনাই তাহার প্রধান কারণ। তাহারা কিন্তু কাঠ ও গালার কাজে সুনিপুণ শিল্পী। রেশম ও বর্ম্মা চুরুটের অল্প-বিস্তর কারবার চলে। আমি এ সকল জিনিষের কিছু কিছু নমুনাও আনিয়াছি।

 বর্ম্মাবাসীরা তাড়ি খায় এবং মাতলামি করে; কিন্তু চীনদেশে অমন দেখি নাই। সকল দেশের সব পাপ-অভ্যাসগুলি বর্ম্মাবাসীরা আজকাল অনুকরণ কবিয়াছে। শুনিলাম, তাদের দেশে মদ বা আফিং কিছুরই তত প্রচলন ছিল না। এখন চীনেদের কাছ থেকে আফিং ও পাশ্চাত্য জাতি ও ভারতবাসীর নিকট মদ থাহিতে শিখিয়াছে। একটা তাড়িথানার কাছে দাঁড়াইয়া কতকগুলি লোকের কাণ্ডকারখানা দেখিতেছিলাম। তারা অতি অশ্লীল ভঙ্গী করিয়া আমায় ভেঙ্গচাইতে লাগিল! কিন্তু চীনদেশে কত আফিং খাবার আড্ডায় গিয়াছি, তারা কেহ কিছু বলে নাই।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি, ভারতবর্ষ। বর্ম্মাবাসীর তীর্থস্থান। অনেক যাত্রী বুদ্ধগয়া, রাজগৃহ, বারাণসী প্রভৃতি স্থানে তীর্থ করিতে আসেন। আমি যখন দেশে ফিরিতেছিলাম, তখন কতকগুলি ভদ্রবংশীয় স্ত্রী ও পুরুষ তীর্থ করিতে অ্যাসিতেছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই জিজ্ঞাসা করিতেন,—আমার কতকগুলি ছেলে-মেয়ে। ছেলে-মেয়েতে আমাদের ঘর ভরা, এই কথা শুনিয়া তাঁহাদের আর আনন্দের সীমা থাকিতে না। চীন দেশেও এই পরিচয় পাইয়া স্ত্রীলোকদিগকে অশেষ আনন্দ অনুভব করিতে দেখিতাম। বৃদ্ধারা স্পষ্ট কথায় জিজ্ঞাসা করিতেন, তাহাদের প্রথম প্রশ্নই এই। অল্পবয়সীরা শুনিতে চান, অথচ মুখ ফু’টে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন না,—প্রশ্ন করিবার অবসরের জন্য অপেক্ষা করেন; অথবা অন্যের মুখ দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইতে চেষ্টা করেন! বিবাহ ও ছেলেপুলে হইয়াছে জানিলে যেন একদলভুক্ত মনে করেন, এবং মিশিবার সঙ্কোচ আরও কমে। ছেলেপুলের কথা শুনিলে সকল দেশের স্ত্রীলোকেরই আনন্দের সীমা থাকে না; পুরুষদের আনন্দ অতটা বেশী বলিয়া মনে হইত না। সকলেই ছোট ছেলে ভালবাসে। আমিও যখন অন্যের ছেলেকে আদর কারিতাম, তথন স্পষ্টই বুঝিতাম, তাদের মা-বাপের মনে আনন্দ উথলিয়া উঠিত।

 জীর্ণ পর্ণকুটির হইতে বাহির হইয়া এক কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মগ আমার নিকট ভিক্ষা চাহিল। তার ছেলেটিও বাপের দেখাদেখি এসে হাত পাতিল। ছোট ছোট হাতগুলি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল। তার শরীরে কোনও রোগলক্ষণ নাই। কুষ্ঠীর স্ত্রীকে ও দেখিলাম। গরীব হইলেও বেশভূষা স্বামী অপেক্ষা অনেকটা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন। আমার কাছে রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া আর কিছু ছিল না। দিতে ইতস্ততঃ করিয়া একটি ক্ষুদ্রতম রৌপ্যমুদ্রা কুষ্ঠীর হাতে দিলাম। হিন্দীতে বলিলাম, দু’জনে ভাগ করে নিও। ছেলেটি হাতে না পেয়ে বড়ই বিষন্ন হলো। জাহাজে ফিরিয়া আসিয়াও মনে হতে লাগল, তার হাতে কিছু দিয়া আসি।

 মন্দিরে এক জন স্ত্রীলোক তাঁর ছোট ছেলেটিকে জানু পাতিয়া বসিয়া উপাসনা করিতে শিখাচ্ছিলেন। আমার সে দৃশ্য বড়ই ভাল লেগেছিল। ছেলেমানুষের ভাবে ও আধ-আধ স্বরে যেমন এক স্বৰ্গীয় ভাব প্রকাশ পায়, তারও প্রত্যেক অবয়বে প্রত্যেক কার্য্যে সেইভাব পরিস্ফুট।  বর্ম্মার দোকানে জিনিষ কিনিতে গিয়া অন্যত্র জিনিষ কেনার মত অত বিরক্তি বোধ হয় না। বোধ হয়, তাহার একটি কারণ, স্ত্রীলোকেরা বেচে বলিয়া। চীনে দেখিতাম, এক জন পুরুষ দোকানী পাঁচ ডলার মূল্য বলিয়া দশ সেণ্টে জিনিষ বেচে। এত ঠকাইবার প্রয়াস! কিন্তু এখানকার দোকানে স্ত্রীলোকেরা বস্তুতঃ আমাদের দেখিয়া প্রায় ঠিক ঠিক দাম বলে। বেশী দর দস্তুর করিতে হয় না। অসহায় বিদেশী বলিয়া স্ত্রীলোকসুলভ করুণ ভাব তাদের ব্যবহারেও দেখা যায়।

 একটি ছাউনিওয়ালা বাজারে কিছু জনতা দেখে ভিতরে গিয়া দেখলাম, অনেকগুলি লোক জড় হয়ে কিসের মীমাংসা করিতেছে। এত লোক, তবু তত গোল নাই। আমাদের দেশে নিশ্চয়ই আরও গোলমাল শুনা যাইত। একটি নম্রমুখী যুবতীর সম্মুখে অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিল। যুবতী নিজের দোকানে বসিয়াছিল, নীচের একটি দেবদারু কাঠের বাক্সের উপর একটি শীর্ণকায় বৃদ্ধ বর্ম্মণ যেন মর্ম্মাহতের মত বসিয়াছিল। তার পাশেও অনেক লোক। এক সুরাটী মুসলমানকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কি হ’য়েছে? শুনিলাম, এই যুবতী বৃদ্ধের স্ত্রী,হালে বিবাহিতা। রমণীর সহিত দোকানে প্রত্যহ এক বর্ম্মা যুবক আসিয়া অনেকক্ষণ পর্যন্ত গল্প করে,—রমণী তাহাকে চুব্রট উপহার দেয়। বৃদ্ধের প্রথম পক্ষের ছেলে দু’পুরবেলা ভাত দিতে এসে দেখে গিয়ে বাপকে ৰ'লেচে। তাই বৃদ্ধ, ব্যাপার কি ভাল করিয়া জানিবার জন্য নিজেই এসেছে। তার মুখের ভাব বড়ই কষ্টব্যঞ্জক,—প্রতিশোধেচ্ছার মত প্রচণ্ড নহে। যেন সন্দিগ্ধ ও অনুতপ্ত হইয়া ভাবিতেছে, কেন এমন অসময়ে এমন হলাহল পান করিলাম! যুবতী নম্রমুখী; কিন্তু তাহাকে অনুতপ্ত বলিয়া মনে হইল না। তার যেন প্রধান ভয়, এ সব গোলমাল শুনিয়া যদি সে বর্ম্ম যুবক আর তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ কৱিতে না আসে! নয় ত প্রণয় ক’রে পা বাড়াতে কাতর, এমন ভাব তাহার মুখে ছিল না। স্ত্রীলোকেরা তার দোষ ঢেকে তার পক্ষসমর্থন ক’চ্ছিল। সকল পুরুষদেরই দেখিলাম বুদ্ধের দিকে টান। কে জানে কেন, বুড়োর প্রতি আমার অণুমাত্রও সহানুভূতি হ'লো না। অবিবেচনার কার্য্যে,অসম্ভব বিষয়ে সহানুভূতি কেমন ক’রে হবে?

 এক দিন লেক্ পার্ক দেখিতে যাবার সময় রাস্তায় দেখিলাম একটি আধবয়সী বর্ম্মা রমণী কাঁদছে। দু’জন লোক তাকে সাবধানে ধ'রে নিয়ে যাচ্ছিল। সে বড়ই আকুলভাবে কাঁদছিল। কাঁদচে এ জানতে তো ভাষা জানার দরকার হয় না। তবে কি জন্য ও কাহার জন্য কাঁদচে জানিবার জন্য আমার খোট্টা গাড়োয়ানকে জিজ্ঞাসা করিলাম। সে জেনে বল্লে, সর্পাঘাতে উহার ছেলে মারা গিয়েছে, তাই কাঁদচে। কান্নার বুলিটি এইরূপ, “তুমি গেলে আমি রইলাম, তোমাকে আর ঘরে গিয়ে দেখতে পাব না, সে ঘরে কেমন ক’রে থাকবো?” ঠিক কি আমাদের দেশের মত! তার সঙ্গীরা ও কঁদিতে কঁদিতে তাহাকে বুঝাচ্চে-ঠিক কি আমাদের দেশের মত! পথে যে দেখচে, যে শুনচে সেই চোখের জল ফেলে যাচ্চে,—ঠিক কি আমাদের দেশের মত!

 দুই দিন পরে রেঙ্গুন হইতে জাহাজ ছাড়িল। একটি স্ত্রীলোক এক প্রৌঢ়াকে জাহাজে চড়িয়ে দিতে এসেছিল। জাহাজ ছাড়িলে সে নদীতীরে ধূলায় লুটিয়ে অতিশয় কাতর হ’য়ে কঁদিতে লাগল। যতক্ষণ দেখা যায়, দেখলাম রেখার মত তার দেহটি মাটিতে পড়ে রয়েছে।