তরুণের আহ্বান/দেশাত্মবোধই জাতীর আদর্শ

উইকিসংকলন থেকে

দেশাত্মবোধই জাতির আদর্শ

আপনাদের অনুরোধে, আপনাদের আদেশে আমি এই সভায় সভাপতিত্ব গ্রহণ করিয়াছি। চিরাচরিত প্রথা অনুসারে একজন সভাপতি না থাকিলে সভার অধিবেশন হয় না। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা শুধু প্রথা বজায় রাখিবার জন্য আমাকে সভাপতি পদে মনোনীত করেন নাই।

 আমি আজ আপনাদেরই একজন হইয়া এই সভায় আসিয়াছি। জ্ঞানের সম্ভার আমার নাই; বয়সের গুণে মানুষ যে অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও সাবধানতা লাভ করে—তাহাও বোধহয় আমার নাই। সুতরাং উপদেশ দিবার ধৃষ্টতা লইয়া আমি আজ এখানে আসি নাই। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে পলিত-কেশ না হইলে মানুষ দায়িত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণ করিতে সমর্থ হয় না। হইতে পারে, আজ ইংলণ্ডের প্রধানমন্ত্রী মি. র‍্যাম্‌জে ম্যাকডোনাল্ড্ বাছিয়া বাছিয়া এমন লোককে মন্ত্রী করিতেছেন যাঁহাদের বয়স পঞ্চাশের অধিক। কিন্তু এই ইংলণ্ডের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে অতি সংকটাপন্ন অবস্থায় একজন তরুণ যুবক রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হইয়াছিল। বর্তমান যুগে তুর্কী, ইটালী, চীন প্রভৃতি বহু নবজাগ্রত জাতির মধ্যে যুবকদেরই হস্তে সমাজের ও রাষ্ট্রের কত গুরুভার ন্যস্ত হইয়াছে।

 ধ্বংসের অথবা সৃষ্টির যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক, যুবকদের উপর নির্ভর করিতে হইবে, তাহাদিগকে বিশ্বাস করিতে হইবে, তাহাদের হাতে ক্ষমতা ও দায়িত্ব তুলিয়া দিতে হইবে। যেখানে সংরক্ষণেরই বেশি প্রয়োজন—যেখানে নানা কৌশলপূর্ণ সংরক্ষণ-নীতির উদ্ভাবনই প্রধান কাজ—সে ক্ষেত্রে আপনি প্রৌঢ়াবস্ত্রাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অথবা গলিতদন্ত পলিত-কেশ বৃদ্ধকে সমাজের ও রাষ্ট্রের পুরোভাগে বসাইতে পারেন। আমাদের দেশ, আমাদের জাতি—ধ্বংস ও সৃষ্টির লীলার মধ্য দিয়া চলিয়াছে। আজ তাই তাহাদেরই ডাক পড়িয়াছে যাহারা সবুজ, যাহারা নবীন, যাহারা কাঁচা, যাহারা আপাতদষ্টিতে লক্ষীছাড়া।

 আমি জানি আমাদের সমাজে এখনো অনেক লোক আছেন যাঁহাদের মতে youth is a crime, তাঁহাদের মতে বয়সে তরুণ হওয়ার মতো ত্রুটি বা অপরাধ আর কিছুই হইতে পারে না। কিন্তু সে মনোভাবের পরিবর্তন হওয়া দরকার। তবে যৌবনের অর্থ যে অসংযম বা অকর্মণ্যতা বা অবিমৃশ্যকারিতা নয়—এ কথা প্রতিপন্ন করিতে হইলে শুধু নিজেদের সেবার দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা, কর্মের দ্বারা ও যোগ্যতার দ্বারা তাহা করিতে হইবে।

 আজ বয়োজ্যেষ্ঠগণ তরুণ সমাজকে অকর্মণ্য বা অপদার্থ জ্ঞান করিতে পারেন কিন্তু যুবকেরা যদি এই সংকল্প করে যে তাহারা স্বীয় চরিত্রগুণে, সেবা ও কর্মক্ষমতার দ্বারা, বয়োজ্যেষ্ঠগণের হৃদয় অধিকার করিবে এবং তাহাদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিবে তাহা হইলে কে বাধা প্রদান করিতে পারে?

 পৃথিবীব্যাপী যে যুব-আন্দোলন বা Youth movement এখন চলিতেছে ইহার স্বরূপ কী, উদ্দেশ্য ও কর্ম পদ্ধতি কী—সে-বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা সকলের নাই। যুবক ও যুবতীরা সংঘবদ্ধ হইয়া যে-কোনো আন্দোলন শুরু করিলে সে আন্দোলন যে “যুব-আন্দোলন” আখ্যার যোগ্য হইবে— এ কথা বলা যায় না। বর্তমান অবস্থা এবং বাস্তবের কঠিন বন্ধনের প্রতি প্রবল অসন্তোষ হইতেই যুব-আন্দোলনের উৎপত্তি। তরুণ প্রাণ কখনো বর্তমানকে, বাস্তবকে চরম সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারে না। বিশেষত যেখানে সে বর্তমানের মধ্যে, বাস্তবের মধ্যে অত্যাচার, অবিচার বা অনাচার দেখিতে পায় সেখানে তাহার সমস্ত প্রাণ বিদ্রোহী হইয়া উঠে— সে ঐ অবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন করিতে সাহসী হয়। যুব-আন্দোলনের উৎপত্তি প্রবল অসন্তোষ হইতে— ইহার উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে নূতন আদর্শে নূতনভাবে গড়িয়া তোলা। সতরাং আদর্শবাদই যুব-আন্দোলনের প্রাণ।

 যুবকদের বর্তমান যুগে কী করা উচিত সে-বিষয়ে একটা বিস্তৃত তালিকা দিয়া আমি আপনাদের বুদ্ধিবৃত্তির অবমাননা করিতে চাই না। আমি কয়েকটি মূলকথা বলিয়া আমার বক্তব্য শেষ করিব। সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভর করে—একদিকে, বাক্তিত্বের বিকাশের উপর এবং অপর দিকে, সংঘবদ্ধ হওয়ার শক্তির উপর। যদি নূতন স্বাধীন ভারত আমাদিগকে গড়িয়া তুলিতে হয় তাহা হইলে একদিক দিয়া খাঁটি মানুষ সৃষ্টি করিতে হইবে এবং সঙ্গে সঙ্গে এরূপ উপায় অবলম্বন করিতে হইবে যাহার দ্বারা আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে শিখি। ব্যক্তিত্বের বিকাশ হইলেই যে সামাজিক বৃত্তির (social qualities) বিকাশ হইবে—এ কথা মনে করা উচিত নয়। ব্যক্তিত্ব ফুটাইবার জন্য যেরূপ গভীর সাধনা আবশ্যক, সামাজিক বৃত্তির বিকাশের জন্যও সেরূপ সাধনা প্রয়োজন। ভারতবাসী যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পরাস্ত হইয়া স্বাধীনতা হারাইয়াছিল তাহার প্রধান কারণ আমাদের সামাজিক বৃত্তির অভাব। আমাদের সমাজে কতকগুলি anti-social (বা সমাজগঠন-বিরোধী) বৃত্তি প্রায় প্রবেশ করিয়াছিল, যাহার ফলে আমরা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করিবার শক্তি ও অভ্যাস হারাইয়াছিলাম। উদাহরণস্বরূপ আমি বলিতে পারি যে সন্ন্যাসের প্রতি আগ্রহ যেদিন আমাদের মধ্যে দেখা দিল সেদিন সমাজের বা রাষ্ট্রের উন্নতি অপেক্ষা নিজের মোক্ষলাভই আমাদের নিকট অধিক শ্রেষষ্কর বলিয়া পরিগণিত হইতে লাগিল।

 আমার নিজের মনে হয় যে স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা প্রভৃতি সমাজগঠন-বিরোধী বৃত্তির (anti-social quality) জন্যই আমরা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে পারি না। সংঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে না পারার জন্য—কী সামাজিক ক্ষেত্রে, কী ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, কী রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে —আমরা কোনো দিকে উন্নতি করিতে পারিতেছি না। আমি চাই না যে আমাদের জাতীয় অধঃপতনের কারণ সম্বন্ধে আপনারা আমার অভিমত বিনা বিচারে গ্রহণ করেন। আমি বরং চাই যে আপনারা যেন সমস্ত জাতির ইতিহাস পাশাপাশি রাখিয়া আলোচনা করেন এবং ঐ আলোচনা হইতে আমাদের অধোগতির কারণ অনুসন্ধান করিয়া বাহির করেন। আমাদের চরিত্রের দোষগুলি সর্বদা যদি চোখের সামনে ধরিয়া রাখিতে পারি তাহা হইলে সমস্ত জাতি সে-বিষয়ে সাবধান হইয়া উঠিবে।

 বিশ্বজগতের এবং মনুষাজীবনের ঘটনাপরম্পরার অন্তরালে যে একটা অদৃশ্য নিয়ম নিহিত আছে— এ কথা আমরা অনেকে জানি না বা মনে রাখি না। পাশ্চাত্য মনীষীরা কিন্তু কোনো ঘটনাকে সহজে “আকস্মিক” বা “অদৃষ্টসম্ভূত” বা “দুর্দৈব-সংঘটিত” বলিয়া গ্রহণ করিতে চাহেন না। প্রত্যেক জাতির উত্থান ও পতনের অন্তরালে যে একটা অদৃশ্য কারণ বা নিয়ম আছে— এ কথা তাঁহারা প্রতিপন্ন করিয়াছেন। এই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি লইয়া আপনারা আর-একবাব ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করুন; anti-social বা সমাজগঠন-বিরোধী ও anti-national বা জাতিগঠন-বিরোধী কী কী বৃত্তি আমাদের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আমাদের সর্বনাশ সাধন করিয়াছে তাহা সমস্ত জাতিকে বলিয়া দিন। তারপর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ সাধনায় প্রবৃত্ত হউন। তখন দেখিবেন যে আত্মবিস্মৃত জাতির চৈতন্য একবার ফিরিয়া আসিলে —কী ব্যক্তিগত, কী সমষ্টিগত—আমাদের সকল সাধনাই জয়যুক্ত হইবে।

 আমি আজিকার এই অভিভাষণে ব্যক্তিগত সাধনার উপর বেশি জোর দিতেছি না। তার কারণ এই যে ভারতবাসী কোনোদিনই বাক্তিগত সাধনা ভুলিয়া যায় নাই। ব্যক্তিত্ব বিকাশের চেষ্টা আমরা কোনোদিনই ত্যাগ করি নাই। অবশ্য পাশ্চাত্য দেশের বা অন্যান্য দেশের ব্যক্তিত্বের আদর্শ এক নয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান পরাধীনতা ও সকল প্রকার দুর্দশার মধ্যেও যে আমাদের দেশে কত মহাপুরুষ জন্মাইয়াছেন এবং এখনো জন্মাইতেছেন তাহার একমাত্র কারণ এই যে খাঁটি মানুষ সৃষ্টির প্রচেষ্টা আমাদের জাতি কোনোদিন ভুলে নাই। কিন্তু আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলাম Collective Sadhana বা সমষ্টিগত সাধনা; আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলাম যে জাতিকে বাদ দিয়া যে সাধনা—সে সাধনার কোনো সার্থকতা নাই। তাই সমাজগঠন-বিরোধী ও জাতিগঠন-বিরোধী বৃত্তি আমাদের মানসক্ষেত্রে জন্মিয়াছে এবং ঐরূপ প্রতিষ্ঠান পরগাছার মতো আমাদের জাতীয় জীবনকে ভারগ্রস্ত ও শক্তিহীন করিয়া তুলিয়াছে। আজ বাংলার তরুণ সমাজকে রুদ্রের মতো বলিতে হইবে— জাতি-সমাজ-গঠন-বিরোধী বৃত্তিনিচয় আমরা কুসংস্কারজ্ঞানে বিষবৎ পরিত্যাগ করিব এবং জাতি-সমাজ-গঠনের প্রতিকূল সমস্ত প্রতিষ্ঠান আমরা একেবারে নির্মূল করিব।

 ব্যক্তিত্ত্ব বিকাশ সম্বন্ধে আমি আজ মাত্র একটি কথা বলিব। “সাধনা” বলিতে অনেকে অনেক রকম বুঝিয়া থাকেন এবং সাধনার বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যাও শুনিতে পাওয়া যায়। আমার ধারণা এই যে সাধনার উদ্দেশ্য মনুষ্যজীবনের রূপান্তর করা। রূপান্তর সাধন করিতে হইলে বাহির হইতে চেষ্টা করিলে চলিবে না— মানুষের জীবন নূতন আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত করিতে হইবে। আদর্শের চরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করিতে হইবে— ঐ আদর্শের অনুসরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিতে হইবে। আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে পারিলে— মানুষের চিন্তা, কথা ও কার্য— একসুরে বাঁধা হইবে; তাহার ভিতর বাহির এক হইয়া যাইবে; তাহার সমস্ত জীবন এক আদর্শসূত্রে গ্রথিত হইবে, সে তখন তাহার জীবনে নূতন রস, নূতন আনন্দ, নূতন অর্থ খুঁজিয়া পাইবে। সমগ্র বিশ্বজগৎ তাহার নিকট নূতন আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে।

 বর্তমান যুগোপযোগী সাধনায় যদি প্রবৃত্ত হইতে হয় তাহা হইলে দেশাত্মবোধকেই জাতির আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। যাহা এই আদর্শের অনুকূল তাহা শ্রেয়ষ্কর বলিয়া গ্রহণীয়; যাহা এই আদর্শের প্রতিকূল তাহা অনিষ্টকর বলিয়া পরিত্যাজ্য।

 নূতন আদর্শের উপর যদি জীবন গঠন করিতে হয় তাহা হইলে গতানুগতিক পন্থা পরিত্যাগ করিতে হইবে। পাশ্চাত্য জাতিরা গতানুগতিক পন্থা বর্জন করিয়া সর্বদা নূতনের সন্ধানে ছুটিতে পারে বলিয়া তাহারা এত উন্নতি করিতে পারিয়াছে। কিন্তু আমরা যেন “অজানার” ভয়ে সর্বদা ভীত; বাহির অপেক্ষা আমরা যেন ঘরকেই ভালোবাসি, তাই আমাদের spirit of adventure এত কম। কিন্তু এই spirit of adventure— যাহার এত অভাব আমাদের মধ্যে—সকল জাতির উন্নতির এইটিই একটা কারণ। আমি বাংলার তরুণে সমাজকে তাই বলিতে চাই— বাহিরের জন্য, নূতনের জন্য, “অজানার” জন্য পাগল হইতে শিখিতে হইবে। ঘরের কোণে অথবা দেশের কোণে লুকাইয়া থাকিলে চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরিয়া নিজের চোখে দেখিতে হইবে এবং দেশদেশান্তর হইতে জ্ঞানাহরণ করিয়া আনিতে হইবে।

 আমাদের অসীম শক্তি আছে— নাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। নিজের উপর, নিজের জাতির উপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ফিরাইয়া আনিতে হইবে। দেশবাসীকে অন্তরের সঙ্গে ভালোবাসিতে হইবে। মানুষ অন্তরের সহিত যাহা আকাঙ্ক্ষা করে তাহা সে একদিন পাইবেই পাইবে।

 স্বাধীনতা লাভের জন্য আমরা যদি পাগল হইতে পারি তবেই আমাদের অন্তর্নিহিত অসীম শক্তির ক্ষরণ হইবে; আমরা নিজেরাই অবাক হইব এত শক্তি এত দিন কোথায় লুকাইয়া ছিল। এই নবজাগ্রত শক্তির বলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারিব।

 জাতিকে যদি মুক্ত করিতে হয় তাহা হইলে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার আস্বাদ নিজের অন্তরে পাইতে হইবে। “আমি মুক্ত, স্বাধীন মানুষ”—এই কথা ধ্যান করিতে করিতে মানুষ সত্যসত্যই নির্ভীক হইয়া উঠে। নির্ভীক হইতে পারিলে মানুষ কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হয় না; কোনো বাধা-বিঘ্ন, তাহার পথরোধ করিতে পারে না।

 যশোহর খুলনার ভ্রাতৃবন্দ—এসো আমরা একসঙ্গে বলি—“আমরা মানুষ হব; নির্ভীক, মুক্ত, খাঁটি মানুষে হব। নূতন স্বাধীন ভারত আমরা ত্যাগ, সাধনা ও প্রচেষ্টার বলে গড়ে তুলব। আমাদের ভারতমাতা আবার রাজরাজেশ্বরী হবেন; তাঁর গৌরবে আমরা আবার গৌরবান্বিত হব। কোনো বাধা আমরা মানব না; কোনো ভয়ে আমরা ভীত হব না। আমরা নূতনের সন্ধানে, অজানার পশ্চাতে চলব। জাতির উদ্ধারের দায়িত্ব আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে, বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করব। ঐ ব্রত উদ‍‍যাপন করে আমরা আমাদের জীবন ধন্য করব, ভারতবর্ষকে আবার বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসাব।” এসো ভাই, আমরা আর ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া শ্রদ্ধাবনত মস্তকে গললগ্নীক্নতবাসে মাতৃচরণে সমবেত হইয়া করজোড়ে বলি— “পূজার সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ; জননি জাগৃহি।” বন্দেমাতরম্।

 জুন ১৯২৯