তরুণের আহ্বান/স্বাধীন ভারতের উত্তরাধিকারী

উইকিসংকলন থেকে

স্বাধীন ভারতের উত্তরাধিকারী

মধ্যপ্রদেশ ও বেরার ছাত্র-সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করিতে পারা আমার পক্ষে খুবই আনন্দদায়ক। এই ধরনের একটি ছাত্র সম্মেলনে যোগ দিতে পারা শুধু আনন্দেবই নয়, পরম সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। তোমাদের স্তুতির জন্য বলিতেছি না, ইহা আমার অন্তরের গভীরতম কথা। ইহাতে কোনো অতিরঞ্জন নাই। কেননা ছাত্রদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসিলেই আমার মনের দুয়ার খুলিয়া যায়। সকল দ্বিধা-সংকোচ দূর হয়, আমার মনের দুয়ার খুলিয়া যায়। সকল দ্বিধা-সংকোচ দূর হয়, আমার জীবনের চরম সত্যগুলিকে অকপটে প্রকাশ করিতে পারি। প্রায় এক দশক আগে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন ছাড়িয়া বাহির হইয়াছি। তবু আজও আমি নিজেকে ছাত্র ভিন্ন আর কিছু ভাবিতে পারি না। শুধু প্রভেদ এই তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা বর্তমানে এক বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমি— উহাকে সহজভাবেই ‘জীবনের বিশ্ববিদ্যালয়’ বলা যাইতে পারে। আমি জীবন সংগ্রামে নিযুক্ত এবং তাহা হইতে নিত্যনূতন বাণী ও অভিজ্ঞতা আহরণ করিতেছি। আদর্শবাদ এবং কল্পনাপ্রসূত ভাবপ্রবণতা—যাহা ছাত্রদের বৈশিষ্ট্য—আমাকে এখনো সম্পূর্ণ রূপে বর্জন করে নাই। সুতরাং তোমাদের অভাব ও ক্ষোভ, আনন্দ ও বেদনা, আশা ও আকাঙ্ক্ষা আমার পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব নয়।

 তবুও এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করাব যোগ্যতা আমার আদৌ আছে কিনা সে সম্বন্ধে গুরুতর সংশয় রহিয়াছে। ছাত্রজীবনের আচরণের দিক হইতে আমাকে বিচার করিলে আশঙ্কা হয় আমাকে খুব সৎ কিবা নিষ্কলঙ্ক পাইবে না। সেদিনের কথা আমার সুস্পষ্ট মনে আছে, যেদিন অধ্যক্ষমহাশয় আমাকে তাঁহার সমক্ষে ডাকাইয়া আনিয়া কলেজ হইতে বহিষ্কারের আদেশ জানাইয়া দিলেন। তাঁহার কথাগুলি এখনো আমার কানে বাজিতেছে: ‘তুমিই এই কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সব চাইতে নষ্টের গোড়া।’

 আমার জীবনের সে এক পরম স্মরণীয় দিন। নানাদিক দিয়া বিচার করিলে বলা যায় সেদিন হইতে আমার জীবনের এক নূতন অধ্যায় খুলিয়া গেল। সেদিন আমি প্রথম উপলব্ধি করিলাম কোনো মহান আদর্শের জন্য নির্যাতন ভোগের পর কী স্বর্গীয় আনন্দ আমাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া থাকে! জীবনের অন্য কোন আনন্দ এই অপার আনন্দের সহিত তুলনীয় হইতে পারে? ইহার সহিত তুলনায় আর সকল অবস্থাই তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর। ইতিপূর্বে সামাজিক নৈতিকতার এবং জাতীয়তাবাদের তত্ত্বগত ধারণার সহিত কিছুটা পরিচিত হইয়াছিলাম। কিন্তু সেই দিনই প্রায় সকল ধারণার পরীক্ষা হইয়া গেল— তাহা অগ্নিপরীক্ষাই বটে। সেই কঠিন পরীক্ষায় সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হইবার পর আমি বুঝিতে পারিলাম আমার জীবনের গতি ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম চিরকালের জন্য নির্ধারিত হইয়া গিয়াছে।

 বন্ধুগণ, তোমরা হয়তো ভাবিতেছ যে আমি এক অদ্ভুত ব্যক্তি, তোমাদের সমস্যার ভিতরে প্রবেশ করিয়া নিজের কথাই চর্চা করিতে আরম্ভ করিয়াছি। কিন্তু আমি এখানে কেন আসিয়াছি? তোমরা কি আমার আসিবার উদ্দেশ্য অনুমান করিতে পারিয়াছ? নিশ্চয়ই আমি নীতিজ্ঞান ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে নিছক দীর্ঘ তত্ত্বোপদেশ দিতে আসি নাই। আমার জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য তোমাদের সম্মুখে উপস্থাপনের জন্য আমি আসিয়াছি। ইহা কি সত্য নয় যে একমাত্র অভিজ্ঞতা ও দুঃখবরণের মধ্য দিয়া যাহা আমরা লিখিয়া থাকি তাহারই যথার্থ মূলা আছে?

 ভারতের সর্বত্র আজ এক ব্যাপক আলোড়ন শুরু হইয়াছে। বিভিন্ন মত ও আদর্শের সংঘাত চলিতেছে। নানা প্রকৃতির আন্দোলনের উদ্ভব হইয়াছে। তাহার কতকগুলি সংস্কারমূলক। বর্তমান অবস্থার উন্নয়নই তাহাদের লক্ষ্য। অপর কতকগুলি বৈপ্লবিক ধরনের—বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন করিয়া সম্পূর্ণরূপে নূতন ব্যবস্থার পত্তন করিতে চায়। এই সংঘাতের মধ্য দিয়া নূতন ভারতবর্ষ জন্মগ্রহণ করিতেছে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া তাহার গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা সহজ নহে। যাহারা সজীব ও তরুণ, মহান আদর্শের দ্বারা উদ্বুদ্ধ অথচ আত্ম-সংযত, যাহারা স্বীয় আদর্শের সহিত জাতির আদর্শের সার্থক সমন্বয় স্থাপন করিয়াছে, যাহারা ইতিহাসপাঠ সম্পূর্ণ করিয়া শিক্ষণীয় বিষয় আত্মস্থ করিয়াছে, কেবলমাত্র তাহারাই এই প্রকার দায়িত্বশীল কাজের উপযুক্ত। বর্তমানের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে একমাত্র তাহারাই ভবিষাৎ অগ্রগতির পথের সন্ধান আবিষ্কারের সুযোগ দিতে পারে।

 ভারতে সাম্প্রতিককালে উদ্ভূত বিভিন্ন আন্দোলনগুলি একটি একটি করিয়া বিশ্লেষণের পর সেগুলি সম্বন্ধে মত প্রকাশ করিতে হইলে, দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন এবং একদিনের বক্তৃতায় তাহা সমাধা করাও সম্ভব নয়। সতরাং সে চেষ্টা হইতে বিরত থাকিব। কিন্তু একটি কথা জোর দিয়া বলিতে চাই। আমাদের এই কালজীর্ণ দেশে যদি যৌবনের পুনরুজ্জীবন চাই, সমগ্র ভারতবর্ষকে যদি একটি মহান জাতিরূপে সংহত করিতে চাই, তবে আমাদের ভালোমন্দ বোধের নৈতিকতার মজ্জাগত পুরানো ধারণা ঢালিয়া সাজিতে হইবে। দার্শনিক পরিভাষায় বলিতে গেলে সামাদের পুরাতন অথচ বর্তমানেও প্রচলিত সামাজিক ও নৈতিক মূল্যগলির পুনর্মূল্যায়ন করিতে হইবে।

 গভীর বিচার ছাড়াই, আপাতদৃষ্টিতেই দেখা যাইবে যে আমাদের দেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলি দৃঢ়মূল নহে, একান্তই ভাসা ভাসা; মানষের আত্মার গভীরে আবেদন সৃষ্টি না করিয়া, অভাব-অভিযোগের প্রান্তসীমা মাত্র স্পর্শ করিয়াছে। অবশ্য আমার বলার উদ্দেশ্য ইহা নয়। এগুলি কোনো উদ্দেশ্য সাধন করে না, করিতেও পারিবে না। আসলে ইহাদের উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষমতা অত্যন্ত ক্ষীণ। সমগ্র জাতিকে জাগাইতে হইলে এইরূপ অগভীর আন্দোলন দৃশ্যত আমাদের কোনো কাজে আসিবে না। আমাদের চরম লক্ষ্য জাতির জাগরণ। কোনো অগভীর জাগরণ নহে। অন্তরাত্মার জাগরণ। সতরাং সমগ্র জাতিকে জাগাইবার জন্য আমাদের উদ্যোগী হইতে হইবে। অনতিকালমধ্যে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপায় খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে।

 আমাদের এই প্রাচীন দেশের সভ্যতাও প্রাচীন। তৎসত্ত্বেও ইহার অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষিত হয় নাই। জাতি হিসাবে আমরা অনেক ঘাত-প্রতিঘাত বীরোচিতভাবে অতিক্রম করিয়াছি। কখনো কখনো পর্যুদস্ত হইলেও আজও আমরা সম্পূর্ণরূপে লোপ পাই নাই। যদি কখনো শ্রান্ত বা অবসাদগ্রস্ত হইয়া থাকি, তাহাতে অবাক হইবার কিছু নাই। কারণ ঐ-সব মুহূর্ত আমাদের বিশ্রামের সুযোগ আনিয়া দিয়া জীবনরক্ষার ব্যবস্থা করে। আজ আমরা ক্লান্ত এবং দ্বিধাগ্রস্ত হইয়া পড়িলেও জাতি হিসাবে আমরা মৃত নহি! জাতি ও বাক্তি হিসাবে, চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্রে, সৃজনীপ্রতিভার জন্য, আমাদের গৌরব বোধ করিবার সংগত কারণ রহিয়াছে। এইগুলিই প্রাণ-স্পন্দনের সুনিশ্চিত লক্ষণ। আমাদের মধ্যে এই ধরনের একজনও অবশিষ্ট না থাকিলে, জাতির জাগরণের সকল আশাই বিলুপ্ত হইবে।

 কিন্তু প্রাণ-স্পন্দন আমাদের সংশয় করিবার নয়। জাতির পুনর্জাগরণের জন্য সকল উপাদানও সমভাবে বিদ্যমান। এই কারণেই গৌরবোজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিবার উদ্দীপনা এখনো আমাদের অন্তরে রহিয়াছে।

 এই অন্তরাত্মার জাগরণ চাই। একমাত্র এই জাগরণই আমাদের জীবনের মৌল রূপান্তর ঘটাইবে। আধাআধি সংস্কার কিম্বা বাহ্যিক পালিশে কোনো কাজ হইবে না। সম্পূর্ণ নূতন জীবনে উত্তরণের জন্য আমাদের চাই সর্বাঙ্গীণ পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে আমরা ‘সম্পূর্ণ বিপ্লব’ আখ্যায়িত করিতে পারি।

 ‘বিপ্লব’ কথাটি শুনিয়া আপনারা চমকিত হইবেন না। বিপ্লব কোন্ পথে প্রবাহিত হইবে সে সম্পর্কে আমাদের মতভেদ থাকিতে পারে; কিন্তু বিপ্লবে বিশ্বাস করে না, এমন একটি লোকেরও এ-যাবৎ সাক্ষাৎ পাই নাই। ‘বিবর্তন’ ও ‘বিপ্লব’-এর মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নাই। অল্পসময়ের মধ্যে বিবর্তন বিপ্লব ছাড়া আর কিছু নয়, দীর্ঘতর সময়ের মধ্যে সম্পাদিত বিপ্লবকেই বলে বিবর্তন। এই দুইটি প্রত্যয়ের পশ্চাতে রহিয়াছে পরিবর্তনের ধারণা। দুইটি প্রত্যয়েরই নির্দিষ্ট স্থান রহিয়াছে। একটি আরএকটির বিকল্প হইতে পারে না।

 আগেই বলিয়াছি, ভালো ও মন্দ সম্বন্ধে কতকগুলি প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন আমাদের করিতে হইবে। আমি আরো বলিয়াছি আমাদের গতানুগতিক অস্তিত্বের কাঠামোকে ঢালিয়া সাজা প্রয়োজন। সেই পথেই জাতির প্রকৃত সংহতি সৃষ্টি হইয়া সভ্যজগতে আমাদের সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা দান করিবে। যে জীবন প্রাত্যহিকতার ঊর্ধ্বে কোনো বৃহত্তর এবং মহত্তর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, তাহার কিছু মূল্য আছে। যে জাতির কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই, তার বাঁচিবারও অধিকার নাই। আমি সেজন্য এ কথ্য কখনোই বলিব না যে কেবলমাত্র সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই কোনো জাতি উন্নতির চেষ্টা করিবে। মানবসমাজে ঔদার্য ও মাহাত্ম্য বৃদ্ধির জন্য জাতিকে অগ্রসর হইতে হইবে, যাহাতে শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী মানুষের পক্ষে মহত্তর ও সুন্দরতর আবাসযোগ্য স্থান হইয়া উঠে।

 জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানই ভারতে রহিয়াছে— বৈষয়িক, নৈতিক, আত্মিক—যে-কোনো দিকেই তাকাই-না কেন, ইহার কোনো অভাব গোচরে আসে না। ভারতের ইতিহাস কত প্রাচীন তাহার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হইতে পারে, কিন্তু আসল কথা এই ভারতবর্ষ মৃত নয়, এখনো জীবিত। ভারতবর্ষ কেন বাঁচিয়া আছে? শুধু কি তাহার গৌরব ও মহত্ত্বের পুনরুজ্জীবনের জন্য? ভারতবর্ষ বাঁচিয়া রহিয়াছে এই কারণে যে বিশ্বের ভাণ্ডারে এখনো বৃহত্তর ও গৌরবোজ্জ্বল কিছু তাহার দান করিবার রহিয়াছে।

 ভারতবর্ষের চরম লক্ষ্য কী? তাহার জনসমাজের কার্যক্রম কী? প্রথমত তাহাদের আত্মরক্ষা করিতে হইবে, তারপর বিশ্বের সভ্যতার ভাণ্ডারে কিছু দান করিতে হইবে। অজস্র বাধা সত্ত্বেও, অতীতে ভারতবর্ষের অবদান অকিঞ্চিৎকর নহে। সুতরাং আমরা অনায়াসে অনুমান করিতে পারি, যদি বাধাহীনভাবে নিজের পথে বিকাশের স্বাধীনতা থাকিত, তবে মানব-জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ভারত কী পরিমাণ দান করিতে পারিত।

 আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যদি আমাদের দেশবাসীর মনে অন্তহীন উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা সঞ্চার করিতে পারিতাম ভারতবর্ষ অবিশ্বাস্য কর্মসাধন করিয়া বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করিতে পারিত। আমাদের এই সুপ্ত জাতি একবার জাগিয়া উঠিলে প্রথম সারির অগ্রসর পাশ্চাত্যজাতিসমূহকে অনায়াসেই পিছনে ফেলিয়া যাইবে। আমাদের প্রয়োজন একটি যাদুদণ্ড যাহার স্পর্শমাত্র একটি বিচ্ছুরিত শিহরণ জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঞ্চারিত হইয়া আত্মিক প্রস্তুতির আহ্বান জানাইবে। ফরাসী দার্শনিক বের্গস' ‘এলান ভাইটাল’ অর্থাৎ প্রেরণাদায়িনী শক্তির কথা বলিয়াছেন, ইহা সেই প্রাণশক্তি যাহা পথিবীকে কর্মসাধনার ও প্রগতির পথে প্রবর্তিত করে। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রাণশক্তি কী হইতে পারে? স্বাধীনতা, আত্মবিকাশ অথবা আত্মোন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন আকূতি যাহা আমাদের মনের গভীরে নিহিত রহিয়াছে। সকল প্রকার বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, আত্মবিকাশের জন্য বেগবান প্রবণতার অপর একটি দিক মাত্র। যদি সত্যই তোমরা বন্ধনমুক্ত হইতে চাও, বন্ধনের শৃঙ্খল ভাঙিবার জন্য দ্বিধাহীনভাবে প্রস্তুত হইতে হইবে এবং স্বাধীনতার পথে সকল অন্তরায় চুরমার করিয়া ফেলিতে হইবে। এই প্রকার বিদ্রোহে তোমাদের সাফল্য স্বাধীনতা অর্জনের মতোই প্রতিষ্ঠা পাইবে। যাহাদের আত্মসম্মানবোধ সর্বতোভাবে লুপ্ত হইযাছে, তাহাদের কথা ছাড়িয়া দিলে অবশিষ্টেরা সর্বদাই দাসত্বের জ্বালা ও অবমাননা বোধ করে। বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট সেই অনুভূতি যতই বিভিন্ন মাত্রায় অভিব্যক্ত হইয়া থাকুক-না কেন। এই অনুভূতি তীব্র হইয়া উঠিলে বন্ধন আর সহ্য করা অসম্ভব হইয়া উঠে। এই অবস্থায় পৌঁছাইলে সকল বন্ধনে অস্থির হইয়া পড়িতে হয় এবং যদি সেই অবসরে সামান্য মুক্তির স্বাদও আমরা পাই, বন্ধনমোচনের অস্থিরতা আরো বাড়িয়া উঠে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ অপর কোনো স্বাধীন দেশের অর্জিত অভিজ্ঞতা হইতে অথবা সে দেশের ইতিহাস পাঠ করিয়া সেখানকার পরিস্থিতি ও পরিবেশের মননার দ্বারা স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করিয়া থাকি। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে যে-কোনো জাতিকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়া অগ্রসর হইতে হইবে।

 এই পরীক্ষার প্রকৃতি কী? একদিকে সকল প্রকার জাতীয় অবমাননার বিরুদ্ধে, জাতিধর্মের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা তীব্রতর করিয়া তুলিতে হইবে, অপরপক্ষে স্বাধীনতার জন্য আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই প্রবলতর করিয়া তুলিতে হইবে। বাস্তবিকপক্ষে আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে এই কঠিন পরীক্ষা ও তপস্যার অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে। এই সংগ্রামে উপযুক্ত উদ্দীপনা সঞ্চারের জন্য আমাদের শুরু করিতে হইবে ইতিহাস পাঠ দিয়া এবং ভারতবর্ষের জনগণের পতনের কারণ নির্ণয় করিতে হইবে। অতঃপর প্রকৃত আদর্শ সন্বন্ধে গভীরভাবে পর্যালোচনার সময় মনোযোগ সহকারে পরাধীন দেশের অবস্থার সহিত স্বাধীন দেশের অবস্থার তুলনা করিতে হইবে।

 Baptism, মন্ত্রগুপ্তি অনুষ্ঠান বা দীক্ষার একটিই অর্থ: স্বাধীনতার বেদীতে আত্মনিবেদনের সংকল্প গ্রহণ। সম্পর্ণরূপে আত্মনিবেদন একদিনে আয়ত্ত করা যায় না। স্বাধীনতার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা যত প্রবল হইবে ততই আমরা আমাদের হৃদয়ে স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করিব। ভাষায় এই অনুভুতি ব্যক্ত করা যাইবে না। এই আনন্দের সন্ধান পাইলে জীবনের মহত্তর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের ধীরে ধীরে উপলব্ধি করিতে হইবে। এই উপলব্ধি আমাদের বিপ্লবের পথে পরিচালিত করিবে; আমাদের সকল অনুভূতি, আশাআকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ রূপে রূপান্তর ঘটিবে। অতঃপর আমাদের জীবনে একমাত্র স্বাধীনতারই মূল্যে থাকিবে এবং সকল অন্তর দিয়া, আর কাহারো নহে কেবল স্বাধীনতার পূজা করিয়া, জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির, আমাদের মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটিবে। তখন আমরা একমাত্র সেই আদর্শকেই অনুসরণ করিব। এই রূপান্তরকালের অনুভূতির সঠিক বিবরণ ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু এ কথা বলা যায় একবার এই রূপান্তর সম্পূর্ণ হইয়া গেলে আমরা নবজন্ম লাভ করিয়া প্রকৃত অর্থে ‘দ্বিজত্ব’ প্রাপ্ত হইব। তারপর আমাদের অন্তর সর্বদাই স্বাধীনতার স্বাদে সেই ভাবনায় ভরিয়া থাকিবে। আমরা তাহার স্বপ্ন দেখিতে থাকিব। স্বাধীন হইবার আকাঙ্ক্ষা, যাহা জীবনের সর্বোত্তম আকাঙ্ক্ষা—আমাদের সকল কর্মে তাহার অভিব্যক্তি হইতে থাকিবে। এক কথায় বলিতে হয়: আমরা স্বাধীনতার ভাবনায় উদ্বেলিত হইয়া, সেই অমূল্য সম্পদ করায়ত্ত করিতে জীবনের সব পণ করিব।

 স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা একবার হৃদয়ে জাগ্রত হইলে, তাহা তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মনে কোনো শান্তি থাকবে না। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের সকল প্রকার সংগত ও সম্ভাব্য পথ গ্রহণ করিতে হইবে। সেই উদ্দেশ্যে এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সকল প্রকার শক্তি ও তেজ সংহত করিতে হইবে। এতকাল যাহা শিখিয়াছি তাহার অনেক কিছুই ভুলিয়া যাইতে হইবে। আর এতদিন যাহা শিখি নাই, তাহা নূতন করিয়া এখন শিখিতে হইবে। যেহেতু স্বাধীনতার গুরু দায়িত্ব আমাদের বহন করিতে হইবে, সে কারণে আমাদের শরীর ও মনের শক্তি নূতন উদ্যমে বৃদ্ধি করিতে হইবে এবং এই উদ্দেশ্যে যেমন পড়িতে হইবে নূতন পাঠ, তেমনি সাময়িক উপভোগ এবং বিলাসব্যসনগুলির মতো জীবনের বহির্ভাগের মৃত খোলস ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিতে হইবে। এক কথায়, পুরানো অভ্যাস বর্জন করিয়া আমাদের সম্পূর্ণরূপে জীবনের নূতন গতিপথ অবলম্বন করিতে হইবে। এইভাবে শক্তিমান ও কলুষমুক্ত হইয়া সামগ্রিকভাবে জীবন পূর্ণতার প্রতিচ্ছবি হইয়া উঠিবে এবং আমরা স্বাধীনতা লাভের উপযুক্ত হইয়া উঠিব।

 আসলে বাক্তিমানুষ একটি সামাজিক সত্তা। তাহাকে সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিলে, তাহার ব্যক্তিত্বের বিকাশ রুদ্ধ হইয়া যায়। শরীরের ও আত্মার সর্বাঙ্গীণ বৃদ্ধির এবং মানসিক পুষ্টির জন্য ব্যক্তিকে সমাজের উপর বহুলাংশে নির্ভর করিতে হইবে। আমাদের উপলব্ধি করিতে হইবে যে সমাজের অবাধ উন্নতি ব্যতিরেকে ব্যক্তি-মানুষের একক উন্নতির কোনো সার্থকতা বা ব্যবহারিক মূল্য নাই। কৃচ্ছসাধক সন্ন্যাসীর জীবনাদর্শ সমাজে গ্রহণীয় নয়। আদর্শের সামাজিক কোনো তাৎপর্য নাই। আমার নিকট তাহার কোনো গুরুত্ত্বও নাই, সুতরাং যদি স্বাধীনতাকে আমাদের জীবনের মৌলিক নীতিরূপে গ্রহণ করি এবং ইহাতেই আমাদের সকল উদ্যোগ ও কর্মের প্রেরণার উৎসমূল রূপে স্বীকার করি, তাহা হইলে এই মহান আদর্শের ভিত্তিপ্রস্তরের উপর সমাজসংস্কারের উৎসমূল স্থাপন করিতে হইবে। অচিরেই আমরা হৃদয়ঙ্গম করিব, যে সক্রিয় নীতিটি স্বাধীনতার আদর্শের পিছনে নিহিত রহিয়াছে, তাহা সমাজ-বিপ্লব ছাড়া আর কিছু নয়। সমগ্র সমাজের স্বাধীনতার কথা বলিলে বুঝিতে হইবে স্ত্রী-পুরুষের স্বাধীনতার কথাই বলা হইতেছে। উচ্চবর্ণের স্বাধীনতার সহিত তথাকথিত অনগ্রসর বর্ণের স্বাধীনতাকেও স্বীকৃতি দিতে হইবে। স্বাধীনতার সংজ্ঞায় বিত্তবান ও দরিদ্রের, নবীন ও প্রবীণের এবং সকল ধর্মাবলম্বীর স্বাধীনতাই স্বীকৃত। সকল শ্রেণীর ও ব্যক্তির, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু যে-কোনো সম্প্রদায়েরই তাহারা হউক-না কেন, বলা বাহুল্য বিনা বৈষম্যে তাহাদের স্বাধীনতা স্বীকৃত হইবে। এই দৃষ্টিকোণ হইতে দেখিলে স্বাধীনতা ও সমতা একার্থক এবং আমরা জানি সমতাবোধ আমাদের সৌভ্রাত্রের অধিকারী করিয়া তোলে।

 কোনো সমাজ বন্ধনমুক্ত হইবাব পূর্বে, সেই সমাজে আইন ও সামাজিক বিষয়ে নারীদের প্রতি পুরুষের সমানাধিকার প্রসারিত হওয়া কর্তব্য। যেসকল সামাজিক রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য কোনো কোনো শ্রেণী ও ব্যক্তির স্থান সমাজে নামাইযা দিয়াছে, নির্মমভাবে সেগুলি ধ্বংস করিতে হইবে। ধনী ও দরিদ্রের সামাজিক মর্যাদার প্রভেদের অবসান করিতে হইবে। সমাজ-প্রগতির পথে নির্বিশেষে সকল প্রকার অবরোধ বর্জন করিতে হইবে। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিকে সমান সুযোগ দিতে হইবে। যুবক বলিয়া যৌবনশক্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করা চলিবে না। আমাদের দেশে শেষ পর্যন্ত তরুণ এবং তরুণীদের উপর সকল প্রকার সমাজ-সংস্কার এবং সরকার পরিচালনার দায়িত্ব অর্জন করিতে হইবে। সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক—প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সমানাধিকার থাকিবে, সামান্যতম বৈষমাও অনুমোদন করা যাইবে না। সকলের জন্য সমান অধিকার ও সমান সুযোগ, সম্পত্তির সমান বণ্টন, বৈষম্যমূলক সকল সামাজিক আইনের পরিহার, জাতিভেদ প্রথা বিলোপ এবং বৈদেশিক শাসন হইতে দেশের মুক্তি-সাধন— এই মৌলিক ভিত্তিভূমির উপর আমাদের বাঞ্ছিত নূতন সমাজ গড়িয়া তুলিতে হইবে।

 বন্ধুগণ, তোমাদের মনে হইতে পারে এগুলি আকাশ-কুসসুমে পর্যবসিত হইবে। তোমরা কেহ কেহ আমাকে হয়তো বাস্তবসম্পর্ক বিহীন দিবা-স্বপ্নে মশগুল বলিয়া ভাবিবে। যদি সেই কারণে আমাকে বর্জন কর তবে আমি অসহায়। এই অপবাধ আমাকে মানিয়া লইতে হইবে এবং প্রকাশ্যেই স্বীকার করিতে হইবে যে বাস্তবিকই আমি দিবাস্বপ্নবিলাসী। আমি কোন্ স্বপ্নে বিভোর একের পর এক তাহা তোমাদের সম্মুখে উদ্ঘাটিত করিয়াছি। আমার নিকট সেগুলি বাস্তবে মণ্ডিত বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে। এই স্বপ্নগুলি হইতেই আমার জীবনের প্রেরণা ও শক্তি আহরণ করিয়া থাকি। এই স্বপ্নবর্জিত হইলে আমার জীবন অর্থহীন, মাধুর্যহীন হইয়া আমার পক্ষে অসহনীয় হইয়া উঠিত, শুধু তাই নয়, ইহা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ এবং শূন্যগর্ভ দর্শনীয়রূপে পর্যবসিত হইত। আপন মহিমায় উজ্জ্বল, স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন আমার অতি প্রিয় স্বপ্ন। আমি স্বপ্ন দেখি, ভারতবর্ষ আপন গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে সানন্দে ও অবাধ অধিকারে তাঁহার সন্তান-সন্ততিদের ভাগ্য পরিচালনা করিতেছেন। আমি স্বপ্নে দেখি স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষে প্রসারিত স্বাধীন ভারতে সেনাবাহিনীসহ একটি সার্বভৌম ভারতীয় কমনওয়েল্‌থ্ গড়িয়া উঠিয়াছে। আমি স্বপ্ন দেখি স্বাধীন ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাহার দূত পাঠাইয়াছে! আমি মহৎ স্বপ্নে বিভোর হইয়া দেখিতে চাই যে আমাদের ধাত্রী ভারতবর্ষ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জগতের শ্রেষ্ঠ গৌববে উদ্ভাসিত হইয়া বিস্ময়-বিমুগ্ধ বিশ্বের সম্মুখে উচ্চশির হইয়া দাঁড়াইয়া আছেন। স্বপ্নও বটে, আমার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষাও বটে যে, আমাদের এই ভারতবর্ষ সত্য ও স্বাধীনতার বাণী বিশ্বের সকল দেশে প্রেরণ করিবে।

 আমার প্রিয় ছাত্র-বন্ধুগণ, আজ তোমরা নিছক ছাত্র হইতে পার, কিন্তু আমাদের দেশের ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং কল্যাণ তোমাদের উপর নির্ভর করিতেছে এবং স্বাধীন ভারতের তোমরাই উত্তরাধিকারী। এজন্যই আমার কিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের শরিক হইবার জন্য হৃদ্যতার সহিত তোমাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করিয়াছ। তোমাদের উপহার দিবার মতো আমার আর কিছু নাই। তোমরা কি ইহা গ্রহণ করিবে না? তোমরা সতেজ এবং তরুণ, হৃদয় নূতন আশায় কানায় কানায় ভরপুর। জীবনের মহত্তর এবং উচ্চতর আদর্শ সমূহ তোমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত হওয়া উচিত। আদর্শ যতই উচ্চতর হইবে, ততই তোমাদের সুপ্তশক্তিসমূহকে আরো উত্তমরূপে জাগ্রত করিয়া তুলিবে। অতএব প্রিয় ছাত্রগণ উত্তিষ্ঠ হও, জাগ্রত হও। আপন বৃত্তিতে নিজেকে জাগ্রত করিয়া তোলাই ছাত্রদের একমাত্র করণীয় নহে। আরো উচ্চতর এবং মহত্তর আদর্শ উদ্‌যাপনের জন্য তাহাকে প্রস্তুত হইতে হইবে। একমাত্র ক্ষুন্নিবৃত্তির জনাই তো মানুষ জীবনধারণ করে না। খাদ্য ও বস্ত্রের উদার সরবরাহ হইলেই জীবনের সকল সমস্যার সমাধান হয় না। আমি তোমাদের সম্মুখে ভবিষ্যতের চিত্র তুলিয়া ধরিয়াছি। স্বপ্নের এই চিত্র বাস্তবে রূপায়িত করিতে হইলে, তোমাদের সকলকেই কোনো-না কোনো কর্মে নিযুক্ত হইতে হইবে। যত সামান্যই হউক না কেন, তোমাদের কিছু পরিমাণে আত্মত্যাগ করিতে হইবে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনগুলিতে নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য প্রস্তুত থাকো। আগামীকাল তোমাদের উপর যে কঠিন দাবি আসিবে তাহার মুখোমুখি দাঁড়াইবার জন্য শরীর ও মনে শক্তি সঞ্চয় করো। তোমাদের সকল প্রকার পাঠগ্রহণ এই আদর্শের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া নিশ্চিত করিতে হইবে।

 জীবনের যে চিত্র আমি এখানে তোমাদের নিকট উন্মোচিত করিয়াছি তাহাতে অন্তহীন দুঃখ নিপীড়ন নিহিত রহিয়াছে। তাহা অস্বীকার করিবার নয়। আমাকে বিশ্বাস করো তাহার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের জন্যে প্রচুর আনন্দও ইহাতে নিহিত রহিয়াছে। তোমাদের জন্য যে পথরেখা অনাবৃত করিয়াছি তাহা নিঃসংশয়ে কঠিন, কণ্টকাকীর্ণ। কিন্তু এই পথরেখাই কি গৌরবের একমাত্র পথ নহে? স্বাধীনতার এই তীর্থ-পরিক্রমায় ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত ধরিয়া অভিযানে যোগ দিবার জন্য তোমাদের আমন্ত্রণ জানাইতেছি। মানবজীবনে এইভাবে আমরা সর্বোত্তম পুরস্কার লাভ করিব। যদি আকাশ ব্যর্থতা ও নিপীড়নে অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া যায়, দুঃখ ও বেদনাবোধ প্রতিপদে প্রতিহত করে, তথাপি অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছিয়া বিধাতার বিধানে অপার আনন্দ এবং শাশ্বত জীবনের অধিকার আমরা লাভ করিবই।

‘বন্দেমাতরম’।

 ডিসেম্বর ১৯২৯