তীর্থ-সলিল/পদস্থ বন্ধুর প্রতি

উইকিসংকলন থেকে

পদস্থ বন্ধুর প্রতি।

না হে বন্ধু, কাজ নাই আর, অভাব আমার নাইক বড়;
তোমার ‘ভালাই’ নিয়ে তুমি অন্য কোথাও সরে পড়।
রাজবাড়ীর উচ্ছিষ্টগুলো,—তোমায় হয় ত’ লাগে ভাল;
দোহাই তোমার,―আমীরী জাল আমার তরে কেন গড়?
ভালবাসার যত্ন সোহাগ আমি কেবল চাইরে ভাই,
খুব আমুদে সঙ্গী দু’জন,—মনের মতন যদি পাই;
পরিশ্রমের অন্ন দু’টি নিজের ঘরে খা’ব খুঁ’টি’;
‘মস্ত হ’বার ব্যস্ততা নাই' ভগবানের হুকুম তাই।
(আমি) আপন মনে পথে পথেই গেয়ে বেড়াই প্রতিদিন,
তোমাদের জাঁকজমক্‌গুলো কর্ব্বে আমায় ভরসাহীন;
নিয়তির উচ্ছিষ্ট যদি ভাগ্যে পড়ে নিরবধি,
বল্‌ব “আমি যোগ্য নহি—আমি যে ভাই অতি দীন।”
আপ্‌নি খেটে আপন হাতে আন্‌বো খুঁটে যা’ কিছু পাই,
সবার চেয়ে বেশী রকম এইটে আমার সাজে রে ভাই;
যা’ হ’ক আমার ভিক্ষা ঝুলি,—কখ্‌খনো হবে না খালি;
‘মস্ত হ’বার ব্যস্ততা নাই'—ঈশ্বরেরও হুকুম তাই।
সে দিন আমি স্বপ্নে দেখি,—উড়েছি ওই নীল আকাশে,
সেখান হ’তে জগৎ পানে দেখছি চেয়ে বিষম ত্রাসে,—

বিশাল এক জীয়ন্তের নদে যায় রে ভেসে পদে পদে
কত রাজা, সৈন্য কত,—কতই জাতি ঘোর হুতাশে!
স্তব্ধ হ'লাম শব্দ শুনে,—জয়ধ্বনি সেইটে ভাই!
দেশ বিদেশে একজনের নাম চল্লো ধেয়ে শুনতে পাই;
ওগো মস্ত লোকেরা সব! তোমাদেরও হয় পরাভব?
‘উচ্চ আশার নাই প্রয়োজন' ভগবানের হুকুম তাই!
যা’ হ’ক্ তা’ হ’ক সবার আগে তোমাদেরি ধন্য বলি,
ওগো মোদের কর্ম্মপটু রাজ্য-তরীর নাবিক গুলি!
পরস্পরের শান্তি-সুখে পরস্পরে দিচ্ছ ফুঁকে,
ভগ্নতরীর একটা দিকেই পড়্‌ছ ঝুঁকে সবাই মিলি’!
কূলে থেকে বল্‌ছি আমি ‘ভ্যালা রে মোর ভাই রে,
যা’ ক’রেছ খুব করেছ,—এমনি ধারাই চাই যে!’
তার পরে ফের রৌদ্রে বসে রোদ্‌ পোহাতে থাক্‌ব ক’সে,
‘উচ্চ আশার নাই প্রয়োজন' ঈশ্বরেরও হুকুম তাই!
ঘৃতে আর চন্দনের কাঠে পুড়বে তুমি বুঝছি বেশ,
সুঁদ্‌রী কাঠের চিতার শুয়ে আমি হ’ব ভস্মশেষ;
তোমার শেষ-পালঙ্ক ধ’রে, আমীর উজীর চল্‌বে ঘিরে,
আমি যাব বাঁশের দোলায় নিয়ে আমার কাঙাল-বেশ।
মরণ কিন্তু মরণই—ঐ তোমারও যা আমারও তাই;
তোমার মশাল জ্বল্‌লো না আর আমার প্রদীপ নিব্‌ল রে ভাই।
তফাৎটা বা’ দেখ্‌ছি খাটে, চন্দনে আর সুঁদ্‌রী কাঠে;
‘উচ্চ আশার নাই প্রয়োজন' ভগবানের হুকুম তাই!

তাই বলি ভাই আবার আমি মনের মতন হ’ব, ওরে,
চলে যা’ব জন্মের মত সেলাম ক’রে আড়ম্বরে;
তোমার এ সব রঙীন্ দেখে বাইরে ভাই এসেছি রেখে—
ছেঁড়া আমার চটিটা আর ভাঙা আমার বাঁশীটিরে।
আমি আমার বাঁশীর মত সমান স্বাধীনতাই চাই,
তা’তে তোমার রঙীন্ কাচের ঘরের কোনো ক্ষতিই নাই;
স্বাধীনতার বিজয় গীতে গাইব মোরা পথে পথে,
‘মস্ত হ’বার ব্যস্ততা নাই’ ঈশ্বরেরও হুকুম তাই।

বেরাঁজ্যার্।