বিষয়বস্তুতে চলুন

ধম্মপদ (সতীশচন্দ্র মিত্র)/প্রিয় বর্গ

উইকিসংকলন থেকে

ষোড়শ সর্গ―প্রিয়বর্গ।

বৃথা অভিমানে নিজে হ'য়ে নিয়োজিত,
জ্ঞানের সন্ধানে রত নহে যা’র চিত,[]
জীবনের সদুদ্দেশ্য করি পরিহার
প্রিয় বস্তু লাভে মতি ব্যাকুল যাহার,
আত্ম অনুরূপ দ্রব্য স্পৃহা হয় তা’র
জানে না সে যোগ ভিন্ন নাহিক নিস্তার॥১॥
প্রিয় বা অপ্রিয় বস্তু যাহা দেখ ভবে
ঘনিষ্ট সম্বন্ধ কা’রো সঙ্গে না করিবে;

প্রিয় অদর্শন কিম্বা―অপ্রিয়-দর্শন
উভয়ই সমভাবে দুঃখের কারণ॥২॥২১০॥
কোন পদার্থকে তাই প্রিয় না ভাবিবে
প্রিয়পদার্থের নাশ অশুভ জানিবে।
প্রিয় বা অপ্রিয় কিছু নাহিক যাহার,
সকল বন্ধন মুক্ত এ জীবন তা’র॥৩॥
প্রিয় বস্তু হ’তে হয় শোকের উদয়,
প্রিয় বস্তু হ’তে হয় মানবের ভয়,
প্রিয় বস্তু হ’তে মুক্ত যেইজন হয়―
শোক কিম্বা ভয় তা’র নিকটে না যায়॥৪॥
প্রেম হ’তে শোক হয়, প্রেম হ’তে ভয়,
প্রেম হ’তে মুক্ত হ’লে, শোক ভয় যায়॥৫॥
রতি হ’তে শোক হয়, রতি হ’তে ভয়,
রতি হ’তে মুক্ত হলে, শোক ভয় যায়॥৬॥
কাম হ’তে শোক হয়, কাম হ’তে ভয়,
কাম হ’তে মুক্ত হ’লে শোক ভয় যায়॥৭॥

তৃষ্ণা হ’তে শোক হয়, তৃষ্ণা হ’তে ভয়,
তৃষ্ণা হ’তে মুক্ত হ’লে, শোকভয় যায়॥৮॥
আত্মকর্ম্ম রত, জ্ঞানী, ধার্ম্মিক প্রধান
সত্যবাদী সজ্জনেরে কর প্রিয় জ্ঞান॥৯॥
লভিতে নির্ব্বাণ সাধ হয়েছে যাহার
প্রফুল্ল অন্তরে যিনি করেন বিহার,
কামনায় চিত্ত যা’র প্রতিবদ্ধ নয়
সুধীগণ সেই জনে “উর্দ্ধ্বরেতাঃ” কয়॥১০॥
প্রবাসে সুদীর্ধ কাল করিয়া হরণ,
স্বদেশে মানব যবে করে আগমন,
জ্ঞাতিবন্ধু সুহৃদেরা যে থাকে যেখানে
অভ্যর্থনা করে তা’য় উন্মুক্ত পরাণে॥১১॥
প্রত্যাগত প্রিয়জনে পাইলে যেমন,
জ্ঞাতিগণ করে তা’রে সাদরে গ্রহণ—
সেইরূপ পুণ্যকর্ম্ম এ জন্মে সঞ্চিত
পরলোকে মানবেরে করে অভ্যর্থিত॥১২॥২২০॥

  1. মূল গ্রন্থে যিনি অযোগে নিয়োজিত হইয়া যোগে নিয়োজিত হন না, তাহারই কথা বলা হইয়াছে। অযোগ বলিতে যাহাতে যুক্ত বা আসক্ত হওয়া উচিত নহে, অর্থাৎ তুচ্ছ পদার্থকে বুঝায়। যোগ বলিতে সার পদার্থ বা প্রজ্ঞাদিকে বুঝায়। ইংরাজীতে অযোগকে vanity দ্বারা এবং যোগকে “meditation” দ্বারা ভাষান্তরিত করা হইয়াছে।