নাগপাশ (হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ)/প্রথম খণ্ড/নবম পরিচ্ছেদ
নবম পরিচ্ছেদ।
বিবাহের পর।
মাঘ মাসে শোভার সহিত প্রভাতের বিবাহ হইয়া গেল। নববধূ শ্বশুরালয়ে আসিল। পাকস্পর্শাদি যথারীতি সম্পন্ন হইয়া গেল। শ্বশুরালয়ে নববধূ শোভাময়ীর আদরযত্নের অন্ত রহিল না। পিসীমা’র ও কমলের যেন আর আহার নিদ্রা নাই; উভয়েই সর্ব্বদা তাহাকে লইয়া ব্যস্ত। নবীনচন্দ্র—কেবল কিসে বধূর কোন রূপ অসুবিধা না হয়, তাহার জন্য সর্ব্ববিধ আয়োজনে ব্যস্ত। বধূর সঙ্গে যে দাসদাসীরা আসিয়াছিল—তাহারাও যেন কুটুম্বের মত আদর পাইতে লাগিল। কিন্তু দাসীটির যেন কিছুতেই মন উঠে না। তাহার ব্যবহারে মনে হইত, সে পদে পদে মনে করিতেছে, এত আদর যত্নও যেন শোভার পক্ষে যথেষ্ট নহে—সে বিষয়ে সে মনোযোগ না দিলে হইবে না। তাহার এইরূপ ব্যবহারে সকলেই বিস্মিত হইলেন; কিন্তু পিসীমাও কিছু বলিলেন না; কুটুম্ববাড়ীর লোক—কিছু বলিলে নিন্দা হইবে।
এই আদর যত্নে শোভা যে প্রীতা না হইল, এমন নহে। কিন্তু সে আদর যত্ন প্রকাশের প্রণালী তাহার নিকট কেমন নূতন বলিয়া বোধ হইত। প্রায় এক পক্ষ কাল পরে পিত্রালয়ে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া সে তাহার ভ্রাতৃজায়াদিগের নিকট শ্বশুরালয়ের সকলের ব্যবহারাদির যে অভিনয় করিত, তাহাতে যতই নিপুণতা থাকুক, শিষ্টতা ছিল না। তাহার জননী জানিতে পারিয়া একদিন তিরস্কার করিলেন। সেই অবধি জ্যেষ্ঠা ও মধ্যমা আর সে অভিনয়দর্শনে আগ্রহ প্রকাশ করিতেন না; কিন্তু কনিষ্ঠা ছাড়িতেন না। কনিষ্ঠ ভ্রাতা নলিনবিহারীর পত্নীর সহিত শোভার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। উভয়ে সমবয়সী। চপলার পিতা কলিকাতার এক জন বিখ্যাত ধনী ছিলেন। চপলা তাঁহার একমাত্র সন্তান; পিতামাতার বিশেষ আদরের। তাহার পিতা তাঁহার এক মাতৃস্বসৃপৌৎত্ত্র গৃহে রাখিয়া সন্তানেরই মত পালন করিয়াছিলেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, তাহার সহিত চপলার বিবাহ দিবেন। শিশিরকুমার যখন সসম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া গেল, তখন তিনি এ প্রস্তাব করিলে গৃহিণী তাহাতে একান্ত অসম্মতি জ্ঞাপন করিলেন। তিনিও তাহার স্বভাবগুণে শিশিরকুমারকে স্নেহ করিতেন; কিন্তু তাহার সহিত চপলার বিবাহ দিতে সম্মতা ছিলেন না। ঘরজামাই—ছিঃ! তাহাতে কি জামাতার সম্মান থাকিবে?
বড় ঘরে মেয়ের বিবাহ দিবেন,কুটুম্ব কুটুম্বিতায় সুখ হইবে—ইহাই তাঁহার ইচ্ছা ছিল। কর্ত্তার কিন্তু অন্যরূপ অভিপ্রায় ছিল; এবং তিনি সেই ভাবেই শিশিরকুমারকে পালন করিয়াছিলেন। শিশিরকুমারও যে তাহা না জানিত, এমন নহে। কিন্তু কর্ত্তার অভিপ্রায় অন্যরূপ, জানিয়াও গৃহিণী বিচলিতা হইলেন না। উভয়েরই সঙ্কল্প অটল রহিল। কন্যার বিবাহের কথায় কর্ত্তা আর কাণ দিতেন না। এই সময় কর্ত্তার ডাক পড়িল; কন্যার বিবাহ, বৈষয়িক ব্যাপার সব ফেলিয়া তাঁহাকে যাইতে হইল।
শ্রাদ্ধাদির পর গৃহিণী শিশিরকুমারকে বলিলেন, “চপলার জন্য একটি পাত্র দেখ। আর ত রাখা যায় না।” শিশিরকুমার আর দ্বিরুক্তি করিল না। সে আপনি সন্ধান করিয়া, পাত্র দেখিয়া নলিনবিহারীর সহিত চপলার বিবাহ দিল। ইহার পর শিশিরকুমার আপনার লক্ষ্যভ্রষ্ট হৃদয়কে সংযত করিল, — ডেপুটীর পরীক্ষা দিয়া চাকরী লইয়া বিদেশে গেল; ভিন্ন দেশে, ভিন্ন কার্য্যে আপনার দীর্ণ হৃদয়ের হতাশাবেদনা সহনীয় করিতে গেল। সহসা তাহার সঙ্কল্প –পরিবর্ত্তনে গৃহিণী বিশেষ বিস্ময় প্রকাশ করিলেন। শেষে তিনি তাহার বিবাহের জন্য জিদ করিতে লাগিলেন; কিন্তু সে তাঁহার এ আদেশ পালন করিতে পারিল না । এখনও তিনি জিদ করেন। কিন্তু শিশিরকুমার বিবাহ করে নাই। তবে শিশিরের সহিত তাঁহার সম্বন্ধ অব্যাহত আছে। সে ছুটী পাইলেই তাঁহার চরণ দর্শন করিতে আইসে। তিনিও তাহাকে স্নেহ করেন। আবশ্যকে সেই তাঁহার প্রধান অবলম্বন।
চপলার পিত্রালয় হইতে প্রাপ্ত যৌতুক ও অন্বাধেয় অনন্যসাধারণ। তাহাকে কখনও পিত্রালয়ে, কখন ভর্ত্তৃগৃহে থাকিতে হইত। তাহার জননীর আর কেহ ছিল না। অন্য বন্ধুদিগের অপেক্ষা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ে তাহার সন্দেহমাত্র ছিল না। সে সুন্দরী; কিন্তু তাহার ওষ্ঠাধরের গর্ব্বকুঞ্চন ও কথায় কথায় ঘৃণার ভাব যে তাহার সৌন্দর্য্য নষ্ট করিত, তাহা সে বুঝিত না । বিশেষ, তাহার নয়নে স্নিগ্ধ মধুর দৃষ্টির পরিবর্ত্তে যে অপরিবর্ত্তনশীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থায়ী হইয়াছিল, তাহা রমণীর সৌন্দর্য্যে শোভন নহে। সমবয়সী শোভার সহিত চপলার সখ্যভাব ছিল। শ্বাশুড়ীর কথায় অন্য বধূরা এখন শোভার নিকট তাহার শ্বশুরালয়ের আচার ব্যবহারের অভিনয়দর্শনে নিরস্তা হইলেন, তখনও তাহাকে রুদ্ধদ্বার কক্ষে চপলার নিকট সে অভিনয় করিতে হইত। চপলা হাসিয়া গড়াইয়া পড়িত। পুষ্করিণীতে স্নান, পূর্ণকলসকক্ষে গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন প্রভৃতি পল্লীগ্রামের প্রচলিত প্রথা জানিয়া চপলা বিস্মিতা হইত; বলিত, “ঠাকুরঝি, তুমি কেমন করিয়া সেই সূর্য্যমামার দেশে ঘর করিতে যাইবে?” শোভা বলিত, “যখন যাইতে হইবে, তখন সে কথা হইবে।” চপলা বলিত, “তুমি যাইও না।” যেন যাওয়া না যাওয়া সম্পূর্ণরূপে তাহারই মতের উপর নির্ভর করিতেছে!
প্রভাতের বিবাহের পরই কৃষ্ণনাথ ইচ্ছা করিয়াছিলেন, জামাতা আর ছাত্রাবাসে না থাকিয়া তাঁহার গৃহে আসিয়া বাস করে। কিন্তু তিনি সে ইচ্ছা প্রকাশ করিবার পূর্ব্বেই শিবচন্দ্র পুত্ত্রকে বলিয়াছিলেন, সে যেন ছাত্রাবাসেও কাহারও সহিত না মিশিয়া অন্য কার্য্যে সময় নষ্ট না করিয়া পাঠে বিশেষ মন দেয়—পরীক্ষার আর এক বৎসরও নাই। বরং তাঁহার ইচ্ছা ছিল, প্রভাত শ্বশুরালয়ের অত নিকটে না থাকিয়া একটু দূরে থাকে। কারণ, তাহার উপর সরলহৃদয় নবীনচন্দ্রের যে পরিমাণ বিশ্বাস ছিল, শিবচন্দ্রের সে পরিমাণ বিশ্বাস ছিল না। তবে ঐ ছাত্রাবাসে দেশস্থ বহু ছাত্র আছে বলিয়া শিবচন্দ্র প্রভাতকে স্পষ্ট করিয়া অন্য ছাত্রাবাসে যাইতে আদেশ করেন নাই।
গ্রীষ্মাবকাশে প্রভাত গৃহে আসিল। কিন্তু মন কলিকাতায় রহিল। পিসীমা পূর্ব্বেই বধূকে আনিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। কৃষ্ণনাথ গৃহে পীড়ার অজুহাতে আপত্তি করিয়াছিলেন; শিবচন্দ্র আর জিদ করেন নাই। প্রভাত গৃহে আসিল; কিন্তু এবার যেন গৃহে আর তেমন আকর্ষণ নাই। মুগ্ধ যুবকের কল্পনা পত্নীকে বেষ্টন করিয়া আবর্ত্তিত হয়। জীবনের নিতাত্ত দারুণ অভিজ্ঞতার পর মানুষ বুঝিতে পারে, প্রেমের অবারিত চঞ্চল আবেগই সুখের কারণ। অসম্ভব আদর্শের সন্ধানে ধাবিত হইয়া—অসম্ভব প্রেমের কল্পনা করিয়া তবে মানুষ বুঝিতে পারে, সে চাঞ্চল্যের ভিত্তির উপর সংসার সংস্থাপিত করা অসম্ভব। সে বিচার—সে বিবেচনা যৌবনের ধর্ম্ম নহে। তাহা যৌবনের ধর্ম্ম হইলে মানবের দুঃখ কষ্টের নিবিড় জলদে ইন্দ্রধনু শোভা পাইত না; সহস্র দুঃখ কষ্টে প্রেমের সুখ মানবকে সব ভুলাইতে পারিত না। বরং যৌবনের মোহ যদি চিরস্থায়ী হইত, তবে জীবনে অনেক সুখ থাকিত। যে সময় আমরা কুসুমে মধুর গন্ধ, মলয়ে মদিরতা ও জ্যোৎস্নায় বিহ্বলতা অনুভব করিতে পারি, প্রিয়তমার প্রেমপ্রদীপ্ত আননে নিত্য নব শোভাদীপ্তি দেখিতে পাই,—সে সময় যত দীর্ঘকালস্থায়ী হয়, ততই সুখের, ততই আনন্দের; তাই, জীবনের বসন্ত— যৌবনকাল সুখের। তখন পত্নীর দোষে অন্ধ হইয়া মানুষ গুণেই দৃঢ়লক্ষ্য হয়। তখন তরুণ প্রেমের মধুরস্পর্শে হৃদয়ের কুসুমকানন বিকশিত। তখন অন্তরে বাহিরে কেবল প্রিয়তমা! তাই তরুণ যৌবনে— প্রেমাবেশে অতি নীরস হৃদয়েও রসসঞ্চার হয়—অতি অ-কবিও কবিতার রচনা করিতে পারে। কারণ, তখন সে হৃদয়ে সত্য সত্যই কবিতা অনুভব করে। হায়, সে সুখের যৌবন!
নবপরিণীত যুবক প্রভাতচন্দ্রের তাহাই হইয়াছিল। তাই গৃহে তাহার আর পূর্ব্বের মত আকর্ষণ ছিল না। সে পত্নীর চিন্তায় বিভোর ছিল; পত্নীর পত্রের আশায় পথ চাহিয়া থাকিত। এই সময় শিবচন্দ্রের নিকট কৃষ্ণনাথের পত্র আসিল। কৃষ্ণনাথ জামাতাকে নিমন্ত্রণ করিয়া শিবচন্দ্রকে তাহাকে পাঠাইতে অনুরোধ করিয়াছেন।
নবীনচন্দ্রের নির্ব্বন্ধাতিশয়ে শিবচন্দ্র পুত্ত্রকে তাহার শ্বশুরালয়ে পাঠাইতে আপত্তি করিলেন না। প্রভাত শ্বশুরালয়ে গেল।
প্রায় সপ্তাহ কাল পরে শিবচন্দ্র দুইখানি পত্র পাইলেন;— একখানি কৃষ্ণনাথের, অপরখানি প্রভাতের। কৃষ্ণনাথের কনিষ্ঠ পুত্ত্র নলিনবিহারী কিছু দিন হইতে শিরঃপীড়ায় কষ্ট পাইতেছিল। গ্রীষ্মকালে তাহার পীড়া বাড়িয়া উঠায় চিকিৎসকের উপদেশে কৃষ্ণনাথ সপরিবারে দার্জ্জিলিং যাত্রা করিলেন। তিনি প্রভাতকে সঙ্গে লইয়া যাইতে চাহিলেন। প্রভাত পিতার সম্মতি না পাইলে যাইতে চাহিল না । কৃষ্ণনাথ তাহার আপত্তি শুনিলেন না; বলিলেন, “আমি বৈবাহিক মহাশয়ের মত করিতেছি।” যাইবার প্রস্তাব ও যাওয়া, উভয়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ের ব্যবধান হেতু শিবচন্দ্রের অনুমতি আনাইবার সুবিধা হয় নাই। যাইবার দিন কৃষ্ণনাথ শিবচন্দ্রকে পত্র লিখিলেন। প্রভাত পত্রে লিখিল, সে বিশেষ আপত্তি করিয়াছে; কিন্তু কৃষ্ণনাথ শুনিলেন না।
এই পত্র পাইবার কয় দিন পূর্ব্বে শিবচন্দ্র পুত্ত্রের কোনও সহপাঠীর নিকট শুনিয়াছিলেন, তাঁহার নিষেধহেতু প্রভাত ছাত্রাবাস ত্যাগ করিয়া শ্বশুরালয়ে যায় নাই বটে; কিন্তু অধিক সময় সেখানেই কাটায়, তাহার ছাত্রাবাসে বাস ক্রমেই সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিতেছে। শুনিয়া তিনি বিরক্ত হইয়াছিলেন। এই পত্র পাইয়া তিনি আরও বিরক্ত হইলেন। কিন্তু হৃদয়ে বিরক্তির অপেক্ষা স্নেহের অভিমানই প্রবল হইয়াছিল; প্রভাত তাঁহার অনুমতির অপেক্ষাও করিল না? তিনি প্রকৃত অবস্থা বুঝিতে পারিলেন না। মনের অবস্থা স্থিরভাবে বিবেচনার পক্ষে অনুকূল নহে। তিনি নবীনচন্দ্রকে এ কথা না জানাইয়াই উত্তরে প্রভাতকে লিখিলেন;—“তুমি আমার অনুমতির অপেক্ষা রাখ নাই। সুতরাং তোমাকে কোনও কথা লিখাই নিষ্ফল। তুমি বড় হইয়াছ। তোমার হিতাহিত তুমি বুঝিতে পার। এখন আর তোমার কার্য্য বা কর্তব্য সম্বন্ধে আমার অনুমতি বা উপদেশ অনাবশ্যক, তাহা আর দিব না।”
নবীনচন্দ্র দেখিলেন, অগ্রজের মুখ অন্ধকার; জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রভাতের পত্র পাইয়াছেন?”
শিবচন্দ্র উত্তর করিলেন, “পাইয়াছি?”
“ভাল আছে?”
“হাঁ।”
এ দিকে পিতার পত্র যথাকালে প্রভাতের হস্তগত হইল। পিতার নিকট এমন কঠোর তিরস্কার সে কখনও ভোগ করে নাই। তাহার চক্ষুর সম্মুখে দিবসের আলোক যেন হরিদ্রাবর্ণ হইয়া গেল । সে পত্রখানি লইয়া একাকী ভ্রমণে বাহির হইল; বহু দূর যাইয়া একটু নির্জ্জন স্থানে একখানি শিলার উপর বসিল; পত্রখানি পুনরায় পাঠ করিল। তাহার চক্ষু ফাটিয়া জল পড়িল।
প্রভাত বসিয়া ভাবিতে লাগিল। হৃদয়ে দারুণ বেদনার পার্শ্বে দুঃখ ফুটিয়া উঠিল;—পিতা একবার বিবেচনা করিয়া দেখিলেন না যে, সে ইচ্ছা করিয়া তাঁহার অবাধ্য হবার কল্পনাও করিতে পারে না? সে ত তাঁহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কার্য্য করিতে পারে না। সে কি কখনও তাঁহার আদেশ অমান্য করিতে পারে?
তখন দিবাবসান হইতেছে। দূরে তুষারসমাচ্ছন্ন কর্পূরধবল শৃঙ্গশ্রেণীর পশ্চাতে দিনান্ততপন অদৃশ্য হইয়া যাইতেছে; ,কিন্তু পশ্চিমদিগন্তে সূর্য্যাস্তশোভা প্রকটিত হইতে না হইতে, আকাশে দুই চারিটি রেখায় বর্ণদীপ্তি বিকশিত হইতে না হইতে, কুজ্ঝটিকা উঠিয়া চারি দিক অন্ধকার করিয়া দিল; ঘন কুজ্ঝটিকাপুষ্ট বারিবিন্দু আপনার ভার বহিতে অসমর্থ হইয়া ভূপতিত হইতে লাগিল। প্রভাতের হৃদয়েও অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল। হায়, স্নেহজাত অভিমান! এ জগতে তুমি বহু অতর্কিত বেদনার, যাতনার, মনঃকষ্টের কারণ।
প্রভাত গৃহে ফিরিল। তাহার পল্লীভবনের কথা, তাহার অতীত জীবনের কথা, বর্ত্তমানের কথা তাহাকে চঞ্চল করিয়া তুলিল। কেবল নানা চিন্তার তরঙ্গতাড়নমধ্যে শোভার চিন্তা সমুদ্রসলিলে শিলাখণ্ডের মত স্থির অচঞ্চল রহিল।
পরদিন প্রভাত পিতাকে পত্র লিখিতে বসিল। কতবার লিখিল, কতবার ছিঁড়িল; কিছুতেই মনের মত হইল না। শেষে সে সে চেষ্টা ত্যাগ করিল; প্রস্তররুদ্ধমুখ আগ্নেয়গিরির মত আপনার যাতনায় আপনই পীড়িত হইতে লাগিল।