পাণ্ডব গীতা
পাণ্ডব গীতা।
শ্রীহট্ট,—রাজা গিরিশচন্দ্র হাই স্কুলের শিক্ষক
শ্রীশশিভূষণ পুরকায়স্থ
পদ্যানুবাদক।
শ্রীউপেন্দ্র কৃষ্ণ চক্রবর্ত্তী বি, এ,
প্রকাশক।
১৩১৭ সাল।
প্রিণ্টার:— শ্ৰীআশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়,
মেট্কাফ্ প্রেস,
৭৬ নং বলরাম দে ষ্ট্রীট,—কলিকাতা।
ভুমিকা
ফুল্লেন্দীবরকান্তিমিন্দুবদনং বর্হাবতংসং প্রিয়ং
শ্ৰীবৎসাঙ্কমুদারকৌস্তুভধরং পীতাম্বরং সুন্দরম্।
গোপীনাং নয়নোৎপলার্চ্চিতনুং গো-গোপ-সংঘাবৃতং
গোবিন্দং কলবেণুবাদনপরং দিব্যাঙ্গভূষং ভজে॥
গুরুশিষ্যকল্পনাক্রমে আত্মবিদ্যার উপদেশাত্মক কথা গীতানামে অভিহিত হইয়া থাকে। সাধারণতঃ গীত বলিলে প্রসিদ্ধ শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতাকে বুঝায়। ইহা ভিন্ন অন্যান্য গীতাও আছে; যথা—রাম গীতা, ব্যাসগীতা, ভগবতগীতা, গুরুগাতা, শিবগীতা প্রভৃতি। এই সকলের মূলভিত্তি কোথাও তন্ত্র, কোথাও পুরাণ। কিন্তু পরবর্তী সকল গীতাই যে ভগবদ্গীতার অনুকরণে রচিত হইয়াছে, এমন নহে।
ভগবদ্গীতায় কোনও সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু অন্যান্য প্রায় সকল গীতা গ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতার ভাব সম্পূর্ণ পরিস্ফুট।
অন্যান্য গীতা-রচনায় যে সমস্ত লক্ষণ দেখিতে পাওয়া যায়, আমাদের আলোচ্য পাণ্ডবগীতায় তাহার অনেক অভাব দৃষ্ট হয়। গীতাগ্রন্থে আদ্য কয়েকটী শ্লোকে গ্রন্থের বিষয়রচনার হেতু প্রভৃতির উল্লেখ থাকে; আর কোন না কোন কথা প্রসঙ্গে সেই গ্রন্থের অবতারণা হয়। আমাদের বর্ত্তমান আলোচ্য গ্রন্থ সেই শ্রেণীর নহে। ইহাতে কোথাও উদার সাৰ্ব্বভৌমভাবে সরলপ্রাণে সেই প্রাণের প্রাণ জগৎপ্রাণের স্তুতি-গাথা গীত হইয়াছে, আবার কোথাও বা তাঁহাকে সেই সৰ্ব্বসুন্দর ব্রজসুন্দর সাজাইয়া ভক্ত সাশ্রুনয়নে প্রাণের অতৃপ্ত আবেগে আহ্বান করিতেছেন।
এই গ্রন্থ কোন গ্রন্থবিশেষের অন্তর্গত বলিরা বোধ হয় না। ইহাতে এমন অনেক শ্লোক আছে, যাহা আমরা অন্যান্য পুরাণাদিগ্রন্থে দেখিতে পাই। বিষ্ণুপুরাণ, শ্ৰীমদ্ভাগবত ও মহাভারত হইতে কয়েকটী শ্লোক ইহাতে উদ্ধৃত হইয়াছে। ইহার কয়েকটী শ্লোক গীতার প্রতিধ্বনি মাত্র।
এই গ্রন্থের রচয়িতার বা সঙ্কলয়িতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে ইচা অনুমিত হয় যে, ইহা বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের জন্য কোন মহাপুরুষ সঙ্কলন করিয়া গিয়াছিলেন। বৈষ্ণবধৰ্ম্ম ভক্তিপ্রধান। একমাত্র বিষ্ণুর আরাধনাই কৈবল্যপ্রাপ্তির কারণ। সেই আরাধনা বা উপাসনা চারি ভাগে বিভক্ত—কীৰ্ত্তন, যজন, স্তবন ও নমস্কার।
প্রকৃতিভেদে এক এক প্রকার উপাসনা এক এক জনের অবলম্বনীয় হয় বটে, কিন্তু মানবপ্রকৃতিতে কালের শক্তিও অল্প আধিপত্য বিস্তার করে না। ক্ষীণায়ু, বিষয়াসক্ত মানবও যাহাতে ভক্তিরসাস্বাদনে বঞ্চিত না হয়, বৈষ্ণব মহাজনগণ তাহার সহজপন্থা নির্দ্ধারণ করিয়া গিয়াছেন। সেই পন্থা নাম-মাহাত্ম্য। নামমাহাত্ম্যের নামান্তর স্তুতি বা স্তবন। আলোচ্য পাণ্ডব-গীতায় ভগবানের মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করা হইয়াছে এই হেতু পাণ্ডবগীতা বৈষ্ণব সমাজের অতি আদরের জিনিষ। এ দেশে এমন অনেক বৃদ্ধ আছেন যাঁহারা পাণ্ডবগীতা ও চাণক্য-শ্লোক আদ্যন্ত আবৃত্তি করিতে পারেন। সে দিন গিয়াছে, সে সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়াছে, যে দিন পল্লীজননীর শ্যামল শম্পাকীর্ণ প্রান্তরোপান্তে সরলতা ও পবিত্রতার চির আবাস গৃহে গৃহে ধৰ্ম্মপ্রাণ শান্তিপিপাসু মহাত্মগণ সরলপ্রাণ শিশুদিগকে নীতি ও ধৰ্ম্মের ভাবে অনুপ্রাণিত করিতেন। আদি কবির ভাবমন্দাকিনীনিঃসৃত “মা নিষাদ”—শোক-গাথা আর গৃহের প্রাঙ্গণ মুখরিত করে না।
শতাধিক বর্ষের হস্তলিখিত পাণ্ডবগীতা চাণক্য-শ্লোক খুঁজিলে মিলিতে পারিবেক। প্রাচীন হস্তলিখিত গ্রন্থের সহিত মিলাইয়া পাণ্ডবগীতার এই অভিনব সংস্করণ সাধারণ্যে প্রচারিত হইল। এই শতাধিক বর্ষের প্রাচীন হস্তলিখিত গ্ৰন্থখানি বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের পাঠাগারে রক্ষণ জন্য প্রেরিত হইয়াছে।
ইতঃপূৰ্ব্বে ইহার যে দু’ একখানা মুদ্রাকর প্রমাদ-দুষ্ট সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহ অপাঠ্য বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বৰ্ত্তমান সংস্করণে বিশুদ্ধ সংস্কৃত পাঠ গ্রহণ করা হইয়াছে। প্রতি সংস্কৃত শ্লোকের প্রাঞ্জল, মধুর প্রসাদগুণ বিশিষ্ট পদ্যানুবাদ সংযোজিত হইয়াছে। অনূদিত শ্লোকসমূহ স্বতন্ত্র ভাবে পড়িলে, কোন গ্রন্থবিশেষের অনুবাদ বলিয়া সহজে প্রতীতি হয় না।
ধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় পুস্তকে যেরূপ স্বাভাবিকতা এবং সরলতা দৃষ্ট হয়, এই পদ্যানুবাদে সেই সনাতন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয় না।
সোদর-প্রতিম স্নেহভাজন শ্রীমান্ শশিভূষণ ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তিগণের চির আদরের এই বৈষ্ণব-রসাত্মক পাণ্ডবগীতা সঙ্কলিত ও অনূদিত করিয়া, একটী মহৎ অভাব দূর করিলেন। এই ক্ষুদ্র-কলেবর গ্রন্থখানি পাঠ করিয়া, ধৰ্ম্মপিপাসু ভক্তগণ অপার বৈষ্ণবানন্দ লাভ করুন—ভগবৎসমীপে প্রার্থনা করি।
|



এই লেখাটি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারির পূর্বে প্রকাশিত এবং লেখক অজ্ঞাত বা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সেই সমস্ত দেশে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত যেখানে অজ্ঞাত বা ছদ্মনাম ব্যবহারকারী লেখকের লেখার কপিরাইট প্রকাশসাল হতে সাল বা তার কম।

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত বলে অনুমান করা হচ্ছে কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২১ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬১ সালের পূর্বে প্রকাশিত সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।
বিঃদ্রঃ এই লেখা/রচনা/বইয়ের লেখকের মৃত্যুসাল কোনও তথ্যসূত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। ভবিষ্যতে কোনো তথ্যসূত্র দ্বারা লেখকের মৃত্যুসাল সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে এলে, এই লেখকের রচনার প্রকৃত কপিরাইট অবস্থা যাচাই করা সম্ভব হবে। নতুন তথ্য অনুসারে এই বইটির কপিরাইট অবস্থা ভবিষ্যতে বিচার করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্গত কারণ এই লেখাটি ১লা জানুয়ারি ১৯২৬ সালের আগে প্রকাশিত। এই লেখাটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কপিরাইটেড হতে পারে। (বিস্তারিত জানার জন্য এই সাহায্য পাতা দেখুন)।
