পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাওড়া স্টেশনে ট্রেনটা আসিয়া দাড়াতেই সে যেন খানিকটা অবাক হইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিল-এত আলো, এত লোকজন, এত ব্যস্ততা, এত গাড়ি-ঘোড়া জীবনে যেন এই প্রথম দেখিতেছে, হাওড়া পুল পার হইবার সময় ওপারের আলোকজ্জল মহানগরীর দৃশ্যে সে মুগ্ধ হইয়া গেল-ওগুলা কি ? মোটর লাস ? কই আগে তো ছিল না। কখনও ? কি বড় বড় বাড়ি কলিকাতায়, ফুটপাতে কি লোকজনের ভিড় ! বাড়ির মাথায় একটা কিসের বিজ্ঞাপনের বিজলী আলোর রঙীন হরপ একবার জলিতেছে, আবার নিভিতেছে --উঃ, কী কাণ্ড । হ্যারিসন রোডের একটা বোডিং-এ উঠিয়া এক একটা ঘর লইল-স্নানের ঘর হইতে সাবান মাখিয়া স্নান সারিয়া সারাদিনের ধূমধূলি ও গরমের পর ভারী আরাম পাইল । ঘরের আলোর সুইচ টিপিয়া ছেলেমানুষের মত আনন্দে আলোটাকে একবার জালাইতে একবার নিভাইতে লাগিল—সবই নতুন মনে হয়। সবই অদ্ভুত লাগে। পরদিন সে কলিকাতার সবত্র ঘুরিল-কোন পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের সহিত দেখা হইল না। বৌবাজাবের সেই কবিরাজ বন্ধুটি বাস। উঠাইয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে, পূর্বপরিচিত মোসগুলিতে নতুন লোকেরা আসিয়াছে, কলেজ স্কোয়ারের সেই পুরাতন চায়ের দোকানটি উঠিয়া গিয়াছে। সন্ধ্যার সময় সে একই নতুন থিয়েটারে গোল শুধু বাংলা গান শোনাৰ লোভে। বেশী দামের টিকিট কিনিয়া রঙ্গমঞ্চের ঠিক সম্মুখের সারিাধ আসনে বসিয়া পুলকিত ও উৎসুক চোখে সে চারিদিকের দর্শকের ভিড়টা দেখিতেছিল। একটা অঙ্কের শেষে সে বাহিরে আসিল, ফুটপাতে একজন বুড়ী পান বিক্রী করিতেছে, অপুকে বলিল, বাবু, পান নেবেন না ? নেন না ! অপু ভাবিল, সবাই মিঠে পান। কিনছে বড় আয়নাওয়ালা দোকান থেকে। এ বুড়ীর পান। বোধ হয়। কেউ কেনে না।--অহা নিই এর কাছ থেকে । সকলেরই উপর কেমন একটা করুণার ভাব, সবাই উপর কেমন একটা ভালবাসা, সহানুভূতির ভাব-অপুর মনের বর্তমান অবস্থায় বুড়ী পানওয়ালী হাত পাতিয়া দশটা টাকা চাহিয়া বসিলেও সে তৎক্ষণাৎ তাহা দিতে পারিত। দ্বিতীয় অঙ্কের শেষে সে বাহির হইয়া বুড়ীটার কাছে পান। কিনিতে যাইতেছে, এমন সময় পিছনের আসনের দিকে নজর পড়িল । সে একটু আগাইয়া গিয়া কঁাধে হাত দিয়া বলিল-স্বরেশ্বরদা, চিনতে পারেন ? কলিকাতায় প্রথম ছাত্র-জীবনের সেই উপকারী বন্ধু সুরেশ্বর, সঙ্গে একটি