পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গাছ পুতিয়া কেহ ঘুরপাক খায় না । সে বাল্যমান কোথায় মেলা দেখার অধীর আনন্দে ছুটিয়া যাওয়া-সে মনটা আর নাই, কেবল সে-সব অর্থহীন আশা, উৎসাহ, অপূর্ব অনুভূতির স্মৃতিটা মাত্র আছে। এখন যেন সে দর্শক আর বিচারক মাত্র, চল্লিশ বৎসরে মনটা কেমন বদলাইয়া গিয়াছে, বাড়িয়াছে --তাহারই একটা মাপ-কাঠি আজ খুজিয়া পাইয়া দেখিয়া অবাক হইয়া গেল। চড়কতলায় পুরানো আমলের কত পরিচিত বন্ধু নাই, নিবারণ গোয়ালা লাঠি খেলিত, ক্ষেত্র কপালী বহুরূপীর সাজ দিত, হারাণ মাল বঁাশের বঁাশি বাজাইয়া বিক্রয় করিত, ইহার কেহ আর নাই, কেবল পুরাতনের সঙ্গে একটা যোগ এখনও আছে। চিনিবাস বৈরাগী এখনও তেলেভাজা খাবারের দোকান করে { আজি চব্বিশ বছর আগে এই চড়কের মেলার পরদিনই তারা গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছিল-তারপর কত ঘটনা, কত দুঃখ বিপদ কত নূতন বন্ধুবান্ধব। সব, গোটা জীবনটাই - “কিন্তু কেমন করিয়া এত পরিবর্তনের মধ্য দিয়াও সেই দিনটি অনুভূতিগুলির স্মৃতি এত সজীব, টাটকা, তাজা অবস্থায় আজ আবার ििझझा स्राब्जि ! সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। চড়কের মেলা দেখিয়া হাসিমুখে ছেলেমেয়েরা ফিরিয়া যাইতেছে, কারও হাতে দাশের বঁশি, কারও হাতে মাটির রং করা ছোবা পালকি। একদল গেল। গাঙ্গুলী পাড়ার দিকে, একদল সোনাডাঙ্গা মাঠের মাটির পথ বাহিয়, ছাতিমবনের তলায় ধুলজুড়ি মাধবপুরের খেয়াঘাটে-চব্বিশ বছর আগে যাহারা ছিল ছোট, এই রকম মেলা দেখিয়া ভেঁপু বাজাইতে বাজাইতে তেলেভাজা, জিবে-গজা হাতে ফিরিয়া গিয়াছিল, তাহারা অনেকদিন বড় হইয়া নিজ নিজ কৰ্মক্ষেত্রে ঢুকিয়া পড়িয়াছো-কেউবা মারা গিয়াছে ; আজ তাদের ছেলেমেয়েদের দল ঠিক আবার তাঁহাই করিতেছে, মনে মনে । আজিকার এই নিষ্পাপ, দায়িত্বহীন জীবনকোরকগুলিকে সে আশীৰ্বাদ করিল। বৈশাখের প্রথমেই লীলা তার দেওরের সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুরে আসিল । দুই বোনে অনেকদিন পরে দেখা, দুই জনে গলা জড়াইয়া কঁাদিতে বসিল । অপুকে লীলা বলিল-তোর মনে যে এত ছিল, তা তখন কি জানি ? তোর কল্যাণেই বাপের ভিটে আবার দেখলুম, কখনও আশা ছিল না যে আবার দেখব। খোকার জন্য কাশী হইতে একরাশ খেলনা ও খাবার আনিয়াছে, মহা খুশীর সহিত পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া সকলের সঙ্গে দেখাশুনা করিল। অপু বৈকালে ছেলেকে লইয়া নৌকায় খাবরাপোতার ঘাট পর্যন্ত বেড়াইতে গেল! তেঁতুলতলার ঘাটের পাশে দক্ষিণদেশের ঝিনুকতোলা বড় নৌকা বাঁধা Šንዓ 8