পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুড়ো সোনাতোনেরও খাটুনি কমে গেল ; ছেলেদের র্দাত উঠেছে, কর্তার পা ফুলেছে, গিল্পীর অম্বল হয়েছে, ওষুধ আনতে ছুটল বোহিম। ধোপার বাড়ির কাপড় আসতে দেরি হচ্ছে, চলল বোহিম ধোপাকে তাড়া লাগাতে। আঙুটি পাণ্ডটি সেলেট বই হারিয়েছে, চলল পাঠশালায় খুজতে। সোনার পোষা টিয়ে গাছে উঠে পালিয়েছে, চলল বোহিম খাচা মুখে টিয়ের সন্ধানে। সোনাতোন বলে, ‘জানো বৌঠাকরুন, বোহিম আর জন্মে আমার ইস্ত্রী ছেল, তাই এ জন্মে সে আমার হয়ে খাটছে। বেীমা যদি বলেন, ‘গাধার স্ত্রী কি কুকুর হয় রে সোনাতোন ? সোনাতোন খুব গম্ভীর হয়ে বলে, ‘তাতে আর আশ্চয্যি কি বৌঠাকরুন, না হলে কুকুর হয়ে অত কাজ সে জানলে কোথা থেকে ? আর দেখেচি বোমা—আমারতিনি যেমন করে কাটা-মুড়ো শুদ্ধ কৈমাছ গিলতেন, ও ঠিক তেমনি করে মাছ খায়।’ সোনা শুধোয়, কুকুরটা তবে তোমার ঘরে ভাত না খেয়ে আমার পেসাদ খেতে আসে কেন ? সোনাতোন সেটাও ভেবে ঠিক করেছে, সে বললে, ‘দিদিমণি, তোমরা হলে গুরু লোক, তোমাদের সামনে বৌ কি আমার ঘরে গিয়ে ভাত খেতে পারে ? তার যে লজ্জা পায় ? আঙুটি-পাণ্ডটি অমনি বলে ওঠে, মিছে কথা, আমরা দেখেছি বোহিম সোনাতোনের খাবার সময় সামনে গিয়ে রোজ বসে, কিন্তু ও থালা চেচে-পুচে সব খেয়ে ফেলে। কিছু থাকলে তো পেসাদ পাবে ? সোনাতোন হেসে বলে, ‘দাদাবাবু, তোমাদেরও বিয়ে হোক, দেখবে বৌদিদিরা ঠিক আমনি করে তোমাদের খাবার সময় সামনে বসে বলবে—আর একটু খাও না মাছের ঝোল, পাতে ভাত যে পড়ে রইল —আর তোমরা থালা চেচে-পুচে আমারি মতো সব খেয়ে নেবে।’ এইভাবে সোনাতোন বোহিমে মিলে ছেলে-মেয়েদের খুব আমোদে রেখেছে। ওদিকে খাতাঞ্চিমশায় ভিজে গামছা মাথার চাপিয়ে সংসারের হিসেব-নিকেশ করে চলেছেন —খেরো-মোড়া দড়িবাধা, ১১২