পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে আবার দৌড়ল। হাসের রিদয়কে নিয়ে দুই পাহাড়ের গলির মধ্যে দিয়ে কেবল কুলকুল জলের শব্দটি ধরে একে-বেঁকে উড়ে চলেছে অজানা জায়গায়, কোথায় গিয়ে বসে ঠিক পাচ্ছে না, এমন সময় মেঘ কেটে আকাশে চাদ উঠল, তখন আর চকাকে পায় কে, ঝকঝকে সরু সাপের মতো নদীর-ধারটির উপরে চোখ রেখে চকা হাসের দলকে নিয়ে সোজা নিচ মুখে নেমে চলল। সিনিবালি চা-বাগানের উপরটায় এসে নদী একটা বড়ো পাথর ঘুরে ঝরনা দিয়ে একেবারে ছশো হাত নিচে পড়েছে, চাতালের মতো সেই পাথরে এসে চকা দলবল নিয়ে বাকি রাতটা কাটাতে বসল। ঝরনার একদিকে ধাপে-ধাপে চা-বাগান পাহাড়ের চুড়ে পর্যন্ত সিড়ির মতো উঠে গেছে, আর একদিকে বনের ধারে চা-বাগানের মালিকের ঘর-বাড়ি, সেখান থেকে পাকদণ্ডি নেমেছে ঝরনা পর্যন্ত । হাসের রাতে এখানে-ওখানে উড়ে স্থাপিয়ে পড়েছিল, সবাই তারা ঘুমিয়ে পড়ল, রিদয় কেবল জেগে পাহারা দিতে লাগল। খানিক রাতে বনের মধ্যে একটা ঝটপট শব্দ শোনা গেল, তারপরেই রিদয় দেখলে ডালকুত্তার সঙ্গে শেয়াল কী ফুসফাস করতে-করতে পাকদণ্ডি দিয়ে নামছে, অন্ধকারে দুজনের চোখ আগুনের মতো জ্বলছে। রিদয় তাগ করে একটা পাথরকুচি ছুড়ে শেয়ালটাকে মারতে যাবে ঠিক সেই সময় একটা পাহাড়ি সাপের গায়ে তার হাত পড়ল, ঠাণ্ড যেন বরফ ! রিদয় এবে পারে হাসের পিঠে লাফিয়ে উঠে বললে –‘পালাও-পালাও, শেয়ালটা এবারে আমাদের সাপে খাওয়াবার মৎলব করেছে।’ হাসের একেবারে ডানা মেলে আকাশে যেমন লাফিয়ে উঠল, ঠিক সেই সময় পাথরের হাতুড়ির মতো পাহাড়ি সাপের মাথাটা সো করে তাদের পায়ের নিচে দিয়ে ছুটে এসে পাথরে ছোবল দিলে । চকা শিয়ালের উপর ভারি চটেছে, নদীর উপর দিয়ে গেলে শেয়ালট সহজে তার সঙ্গ ছাড়বে না বুঝে চক এধরে একেবারে উপর দিয়ে উড়ে চলল, সোজা শিলিগুড়ির স্টেশনের টিনের ছাতের দিকে। Հերծ