সেইদিন রাত্রে প্রায় আড়াই প্রহরে চিতোরের রাজপ্রাসাদে একটুখানি সাড়াশব্দ ছিল না— মহারানা নির্জন ঘরে এক ছিলেন। যখন র্তার সমস্ত প্রজ, পাঠানের সঙ্গে সন্ধি হবে, দেশে শান্তি আসবে মনে করে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে ছিল, সেই সময়ে সমস্ত মেবারের রাজা, ভগবান একলিঙ্গের দেওয়ান মহারানা লক্ষ্মণসিংহের চোখে ঘুম ছিল না। হায় অদৃষ্ট ! কাল সন্ধির সঙ্গে-সঙ্গে চিতোর ছেড়ে যেতে হবে, এ জীবনে আর হয়তো ফেরা হবে না ! রাজ্য, সম্পদ, মান, মর্যাদা, আত্মীয়স্বজন সব ছেড়ে কোন দূরদেশে সামান্য বেশে নির্বাসনে যেতে হবে । মহারান। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চারিদিকে চেয়ে দেখলেন— ঘরের এককোণে সোনার দীপদানে একটি মাত্র প্রদীপ জ্বলছিল, প্রকাণ্ড ঘরের আর সমস্তটা অন্ধকার । খিলানের পর খিলান, থামের পর থামের সারি অন্ধকার থেকে গাঢ় অন্ধকারে মিশে গেছে— একটিমাত্র প্রদীপের আলোয় নিঃশব্দ সেই প্রকাণ্ড ঘর অন্য যেন অন্ধকার বোধ হতে লাগল। মহারানা অন্তঃপুরে যাবার জন্তে উঠে দাড়ালেন । হঠাৎ পায়ের তলায় মেঝের পাথরগুলো একবার যেন কেঁপে উঠল ; তারপর মহারানা অনেকখানি ফুলের গন্ধ আর অনেক নূপুরের ঝিন-ঝিন শব্দ পেলেন। কারা যেন অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মহারানা বলে উঠলেন, ‘কে তোরা ? কী চাস ? চারিদিকে— দেওয়ালের ভিতর থেকে, ছাদের উপর থেকে, পায়ের নিচে থেকে শব্দ উঠল— ‘মায় ভুখা হু ! লক্ষ্মণসিংহ বললেন, ‘আঃ, এতরাত্রে চিতোরের রাজপ্রাসাদে উপবাসে কে জাগে ? আবার শব্দ উঠল – ম্যয় ভূখ হু ? তারপর, গাঢ় ঘুমের মাঝখানে স্বপ্ন যেমন ফুটে ওঠে তেমনই সেই শয়নঘরের অন্ধকারে এক অপরূপ দেবীমূর্তি ধীরে ধীরে উঠল ! মহারানা বলে উঠলেন, ‘কে তুমি, দেবতা না দানব, আমায় ছলনা করছ? লক্ষ্মণসিংহ দীপদান থেকে সোনার প্রদীপ উঠিয়ে ধরলেন। প্রদীপের আলো দেবীর কিরীটকুণ্ডলে, রত্ন-অলংকারে, অসংখ্য-অসংখ্য মণিমাণিক্যে Σ Σ &