পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মিনী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘প্রভু, চিতোর রক্ষার কি কোনোই উপায় নেই ? ভীমসিংহ বললেন, উবরদেবী যদি কৃপা করেন, তবেই রক্ষে । হায় পদ্মিনী, কার পাপে চিতোরের এ তুর্দশা হল । তারপর দু-একটি কথার পর ভীমসিংহ অন্ত কাজে চলে গেলেন। এক ঘরে পদ্মিনীর কানে কেবলই বাজতে লাগল— হায় পদ্মিনী, কার পাপে আজ চিতোরের এ তুর্দশা! অন্ধকারে পদ্মিনী কপালে করাঘাত করে উঠলেন ; হায় হতভাগিনী পদ্মিনী, তোরই এ পোড়া-রূপের জন্তে এ সর্বনাশ– তোরই জন্যে এ সর্বনাশ ।” নিঃশব্দ ঘরে প্রতিধ্বনিত হল— তোরই জন্যে এ সর্বনাশ !’ ঠিক সেই সময় চৈত্র মাসের পরিষ্কার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বড়ো-বড়ো ফোটায় বৃষ্টি নামল। পদ্মিনী একটা মোট চাদরে সর্বাঙ্গ ঢেকে নিজের মহল থেকে চিতোরেশ্বরী উবরদেবীর মন্দিরে এক চলে গেলেন । রাত্রি দুই প্রহর, উবরদেবীর মন্দিরে সমস্ত আলো নিভে গেছে, কেবল একটিমাত্র প্রদীপের আলো ! সেই আলোয় বসে দেবীর ভৈরবী, রাজরানী পদ্মিনীকে বললেন, ‘মহারানী, আমি আবার বলি, তুমি যে কাজ করতে যাচ্ছ, তার শেষ হচ্ছে মৃত্যু! দেবীর রত্ন-অলংকার একবার অঙ্গে পরলে তার নিস্তার নেই ! ছয় মাসের মধ্যে জীবন্ত অবস্থায় ‘জলন্ত আগুনে দগ্ধ হতে হবে ? পদ্মিনী বললেন, “হে মাতাজী, আশীৰ্বাদ করুন, যে রূপসীর জন্যে রাজস্থানে আজ এ আগুন জ্বলেছে, তার সেই পোড়া-রূপ জ্বলন্ত আগুনেই ভস্ম হোক । ভৈরবী বললেন, তবে তাই হোক বৎসে, আমি আশীর্বাদ করি, যে চিতোরের জন্যে তুমি নিজের প্রাণ তুচ্ছ করলে, সেই চিতোরে তোমার নাম চিরদিন যেন অমর থাকে ; যে মহাসতীর রত্ন-অলংকার আজ তুমি পরতে চললে, সেই মহাসতী মরণাস্তে তোমায় যেন চরণে রাখেন। রানী পদ্মিনী ভৈরবীর হাত থেকে একটি চন্দন কাঠের কোঁটায় উবরদেবীর সমস্ত রত্ন-অলংকার নিয়ে বিদায় হলেন । Ֆ ՖԵ