মাথার উপরে ফাট ছাদ দিয়ে বৃষ্টির ধারা পড়ছে, ঘরের কোণে ইন্দুরের খুটখাট, বাহুড়ের ঝটপট— রাজার ছেলে রাজার বৌ তারই মাঝে ভিজে ঘরে খড়ের বিছানায় ঘোড়ার কম্বল ঢাকা দিয়ে রাত কাটালেন । সকালে গ্রামবাসীরা রাজা দেখতে এসে দেখলে তাদের রাজার বসবার সিংহাসন, শোবার খাটিয়া নেই ; রাজার রানী, রাজার ছেলে ঘোড়ার কম্বলে বসে আছেন । মেবারের রানা অজয়সিংহ আজ কোথায় সোনার সিংহাসনে রাজছত্র মাথায় দিয়ে বসবেন, রানীমা কোথায় দুই রাজকুমার অজিমসিংহ সুজনসিংহকে নিয়ে গজদন্তের পালঙ্কে আরাম করবেন, না তাদের এ দুর্দশা ? গ্রামবাসীরা তখনই যত্ন করে কেল্লা পরিষ্কার করতে লাগল, ঘর সাজাতে লাগল, গ্রামের জোতদার গজদন্তের খাট সিংহাসন, কিংখাবের সুজনী, জরীর চাদোয়া, শ্বেত চামর, চন্দনের পাখা, রুপার প্রদীপ, সোনার বাট, শ্বেত পাথরের বাসন হাজির করলে । খেত থেকে চাষীর মেয়ের তরি-তরকারি, ঘিয়ের মর্টুকি, দুধ দেবার গাই, ঘোড়ার ঘাস নিয়ে হাজির হল । দেখতে-দেখতে সাজ-সবঞ্জামে কেল্লার শ্রী ফিরে গেল । সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসী তাদের রাজার মুখে, রানীর মুখে, দুই রাজপুত্রের মুখে হাসি দেখে বিদায় হল । ভক্ত প্রজার প্রাণপণ সেবায় অজয়সিংহ সব দুঃখ ভুললেন, কেবল চিতোর যে এখনো পাঠানের হস্তগত এ দুঃখ তার মন থেকে কিছুতে গেল না। তিনি প্রায়ই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলতেন, ‘হায় ! সূর্য এখনো রাহুগ্রস্ত, কবে এ গ্রহণ শেষ হবে তা কে জানে! সেই সুদিনের প্রতীক্ষা করে আমায় কতকাল থাকতে হবে কে বলতে পারে ? দিন যেতে লাগল। কিন্তু যে মুদিনের প্রতীক্ষায় অজয়সিংহ রইলেন, সে স্থদিন বুঝিবা আর এল না। পাঠানের হাত থেকে চিতোর উদ্ধার করতে অজয়সিংহ প্রাণ দিতে প্রস্তুত কিন্তু তার লোকবল অর্থবল কোথায় ? বড়ো আশা ছিল দুই রাজকুমার অজিমসিংহ স্বজনসিংহ বড়ো হয়ে পিতৃরাজ্য উদ্ধারের চেষ্টা করবে— কিন্তু হায়, বিধাতা সে সাধেও বাদ সাধলেন। \రిరి
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪২
অবয়ব