চলে আসতেন। পরদিন আমরা ভাবলুম, তার বুঝি আজ স্বর্যদর্শন হবে না। সকালে উঠে-এ-বাড়ি থেকে উকিবাকি মারছি ; দেখি ঠিক উঠে আসছেন কর্তাদাদামশায়। রেলিং ধরে নিজেই হেঁটে হেঁটে এলেন, চাকররা পিছনপিছন চেয়ার নিয়ে এল। কর্তাদাদামশায় সোজা হয়ে বসলেন, সূর্যদর্শন করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে উপসনা করে নিত্যকার মতো ঘরে চলে গেলেন । এই স্বর্যদর্শন কোনোদিন তার বা যায় নি। মৃত্যুর আগের দিন অবধি তিনি বাইরে এসে সূর্যদর্শন করেছেন । সে সময় কর্তাদাদামশায় প্রায়ই বড়োপিসিমাদের বলতেন, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, দেবদূতরা তার কাছে এসেছিলেন । প্রায়ই এ স্বপ্ন তিনি দেখতেন? বড়োপিপিমা ভাবিত হলেন, একদিন আমাকে বললেন, অবন, এ তে বড়ো মুশকিল হল, বাবামশায় প্রায় রোজই স্বপ্ন দেখছেন দেবদূতরা তাকে নিতে এসেছিলেন । আমরাও ভাবি, তাই তো, তবে কি এ যাত্র আর তিনি উঠবেন না । সেদিন সকাল থেকে পিটির পিটির বৃষ্টি পড়ছে। দীপুদা এসে বললেন, কর্তাদাদামশায়ের অবস্থা আজ খারাপ, কী হয় বলা যায় না ; তোমরা তৈরি থেকে । আত্মীয়স্বজন, কর্তাদাদামশায়ের ছেলেমেয়েরা, সবাই খবর পেয়ে যে যেখানে ছিলেন এসে জড়ো হলেন । কর্তাদাদামশায়ের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে, ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিলেন । আমরা ছেলেরা সবাই বাইরে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি, এক-একবার দরজার ভিতরে উকি মেরে দেখছি। কর্তাদাদামশায় স্থির হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। তার ছেলেমেয়ের এক-এক করে সামনে যাচ্ছেন। রবিকাকা সামনে গেলেন, বড়োপিসিমা কর্তাদাদামশায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, রবি এসেছে। তিনি একবার একটু চোখ মেলে হাতের আঙল দিয়ে ইশারা করলেন রবিকাকাকে পাশে বসতে। কর্তাদাদামশায়ের কোঁচের ডান পাশে একটা জলচৌকি ছিল, রবিকাকা সেটিতে বসলে কর্তাদাদামশায় মাথাটি যেন একটু হেলিয়ে দিলেন রবিকাকার দিকে, ডান কানে যেন কিছু শুনতে চান এমনি তাব। বড়োপিসিমা বুঝতে পারতেন ; তিনি বললেন, আজ সকালে উপাসনা হয় নি, বোধ হয় তাই শুনতে চাচ্ছেন, তুমি ব্রাহ্মধর্ম পড়ে। রবিকাকা তার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে পড়তে লাগলেন— st