পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপরটায় এসে পড়েছে চওড়া শাদ আলোর একটি মাত্র টান। ঠিক এইখানটায় আমার কালোদাসী আর রসো’ বলে একটা মোটাসোটা ফরশ} চাকরানী কথা কইছে শুনছি। আমি তো তাদের কথা বুঝি নে— কথার মানেও বুঝি নে— কেবল স্বরের ক্টোক আর হাত-পা নাড়া দেখে জানছি দাসীতে দাসীতে ঝগড়া বেধেছে। খাচার পাখির মতো গরাদের মধ্যে থেকে বাইরে চেয়ে দেখছি কী হয়। হঠাৎ দেখলেম আমার দাসী একটা ধাক্কা থেয়ে ঠিকরে পড়ল দেওয়ালের উপর। আবার তখনই সে ফিরে দাড়িয়ে আঁচলটা কোমরে জড়াতে থাকল। তখন তার কালে কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে, চুলগুলো উকো— চেহারা রাগে ভীষণ হয়ে উঠেছে ; সি দুর-পরা যেন কালে পাথরের ভৈরবী মূর্তি সে একটি ! আমি চিৎকার করে উঠলেম - ‘মারলে, আমার দাসীকে মারলে!’ লোকজন ছুটে এল, ডাক্তার এল, একটা ছেড়া-কাপড়ের শাদা পটি দাসীর কপালে বেঁধে দিয়ে গেল ; কিন্তু আমার মনে জেগে রইল সিড়ির ধারে সকালের দেখা রক্তমাখা কালো রূপটাই দাসীর ! সেই আমার শেষ দেখা দাসীর সঙ্গে । তারপর থেকে দেখি দাসী কাছে নেই কিন্তু তার ভাবনা রয়েছে মনে— 'দেশ থেকে খেলনা নিয়ে ফিরবে দাসী । সিড়ির দরজায় বসে বীরভূমের গালার তৈরি একটা কাছিম নিয়ে খেলি আর রোজই ভাবি দাসী আসবে। কোন গায়ের কোন ঘর ছেড়ে এসেছিল অন্ধকারের মতে কালে আমার পদ্মদাসী ! শুনি সে ভীষণ কালে{ ছিল। পদ্ম নামটা মোটেই তাকে মানাত না । সে তার বেমানান নাম নিয়েই এসেছিল এ-বাড়িতে । রাগ করে গেছে, গল্প বলেছে, ঝগড়া করেছে, কাজও করেছে এবং মানুষ করবার বকশিশ সোনার বিছেহার আর রক্তের টিপ পরে চলেও গেছে বহুদিন। পৃথিবীর কোনোখানে হয়তো আর কোনো মনে ধরা নেই তার কিছুই এক আমার কাছে ছাড়া । হয়তো বা তাই আপনার কথা বলতে গিয়ে সেই নিতান্ত পর এবং একান্ত দূর যে তাকেই দেখতে পাচ্ছি– পঞ্চান্ন বছরের ওধারে বসে সে দুধ ঢালছে আর তুলছে আমার জন্যে 1• • • আমার কুষ্ঠিখানা লিখেছে দেখি বেশ গুছিয়ে সন তারিখ বছর মাস দিন মিলিয়ে পরে পরে ঘটনাগুলো ধরে দিয়েছে সেখানে গনংকার। কিন্তু এভাবে জীবনটা তো আমার চলল না লতার পর লতা,পারস্পর্ব ধরে। কাজেই ఫ్రీ