গল্প থাকত ; আমার ইংরেজি বিষ্ঠেয় কুলোত না, ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কোনে-রকম লিখে দিতুম। উডরফ তা থেকে ভালো করে লিখতেন। দেখাদেখি অন্ত আর্টিস্টর ঠিক করলেন, তারা নিজের একটা সোসাইটি করবেন । হরিনারায়ণ বন্ধ ছিলেন আর্টস্কুলের ভাইস-প্রিন্সিপাল, বরদাকান্ত দত্ত সেকেণ্ড মাস্টার, মন্মথ চক্রবতী, যিনি বউবাজারের আর্টস্কুল প্রথম শুরু করেন, এই কয়জন মিলে ঠিক করলেন একটা সভা করে সব ব্যবস্থা করতে হবে । কোথায় সভা হবে। আমাকেও তাদের দলে টানবার ইচ্ছে ; ঠিক হয় আমাদের বাড়িতেই সভা বসবে। সভার সব ঠিক, খাওয়াদাওয়ারও কিছু ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। এখন সেই সভার মধ্যেই কে কী কাজ করবে এই নিয়ে মহা তর্কাতকি ; শেষ পর্যন্ত প্রায় তুমুল ব্যাপার। এ বলেন, ‘আমি কেন প্রেসিডেন্ট হব, উনি বলেন, “অমুক থাকতে ও কাজের ভার আমার উপর কেন, ইত্যাদি।" হল না আর শেষ পর্যন্ত কিছুই, ওখানেই থেমে যেতে হল সবাইকে। আমি বললুম, “শুরুতেই যখন এইরকম মারামারি তখন আমি বাপু এর মধ্যে নেই। গেল ভেঙে সব স্কীম। আমরা যে সোসাইটি করেছিলুম সে ছিল একেবারে অন্য রকমের। আমরা করেছিলুম এমন একটা সোসাইটি যেখানে দেশী বিদেশী নির্বিশেষে একত্র হয়ে আর্টের উন্নতির জন্য ভাববে ; শুধু ভারতীয় নয়, প্রাচ্য শিল্পের সব জিনিস দেখানো হবে লোকদের । তাতে এমন ব্যবস্থাও ছিল, যার যা ব্যক্তিগত শিল্পবস্তুর সংগ্রহ ছিল তাও দেখানো হত। মাঝে মাঝে এক-একচ:নর বাড়িতে পার্ট জমত। সভ্য সবাই আসত ; আমোদ-আহলাদ, খাওয়াদাওয়া, আর্ট সম্বন্ধে আলোচনা, সবই হত। উডরফ পান পর্যন্ত দিতেন তার বাড়িতে যখন পার্টি হত । পান, ফুলের মালাও চল হয়ে গিয়েছিল সাহেববাড়িতে সেই সময়ে । তা ছাড়া যে দেশে যা-কিছু স্বন্দর পাওয়া যায় এনে সাজিয়ে দিতুম একজিবিশন করে। সে-সব একৃজিবিশনও হত এক বিরাট ব্যাপার। কাচের বাসন, কাপেট, যেখানকার যা-কিছু ভালো ভালো পুতুল, গয়ন, ছবি, কিছু বাদ পড়ত না । সব বাছাই বাছাই জিনিস, যা-তা হলে আবার হবে না। একবার এমনি এক বিরাট বাৰ্ষিক একৃজিবিশনের আয়োজন হচ্ছে। উডরফ বললেন, ‘এবারে ভারতবর্ষের সবজায়গায় জিনিস জোগাড় করতে হবে p তিন মাস আগে থেকে জায়গায় জায়গায় চিঠি লিখে দেওয়া হল ; কোথাও ২৭১
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৮
অবয়ব